নামকরণ
সূরার সর্বপ্রথম আয়াতে () শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
নাযিলের সময় -কাল
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস সূরাসমূহ নাযিলের যে পরম্পরা বর্ণনা করেছেন তাতে তিনি বলেছেনঃ প্রথমে সূরা ত্বহা নাযিল হয়, তারপর আল ওয়াকি’আ এবং তারও পরে আশ’শুআরা () । ইকরিমাও এ পরম্পরা বর্ণনা করেছেন () ।
হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাক থেকে যে কাহিনী বর্ণনা করেছেন তা থেকেও এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। কাহিনীতে বলা হয়েছে হযরত উমর (রা) যখন তাঁর বোনের ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সূরা ত্বাহা তেলাওয়াত করা হচ্ছিলো। তাঁর উপস্থিতির আভাস পেয়ে সবাই কুরআনের আয়াত লিখিত পাতাসমূহ লুকিয়ে ফেললো। হযতর উমর (রা) প্রথমেই ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাকে রক্ষা করার জন্য বোন এগিয়ে আসলে তাকেও এমন প্রহার করলেন যে, তাঁর মাথা ফেটে গেল। বোনের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখে হযরত উমর (রা) অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। তিনি বললেন, তোমরা যে সহীফা লুকিয়েছো তা আমাকে দেখাও। তাতে কি লেখা আছে দেখতে চাই। তাঁর বোন বললেন, শিরকে লিপ্ত থাকার কারণে আপনি অপবিত্র () “কেবল পবিত্র লোকেরাই ঐ সহীফা হাতে নিতে পারে”। একথা শুনে হযরত উমর (রা) গিয়ে গোসল করলেন এবং তারপর সহীফা নিয়ে পাঠ করলেন। এ ঘটনা থেকে জানা যায় যে, তখন সূরা ওয়াকি’আ নাযিল হয়েছিল। কারণ ঐ সূরার মধ্যেই () আয়াতাংশ আছে। আর একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, হযরত উমর (রা) হাবশায় হিজরতের পর নবুওয়াতের ৫ম বছরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে, আখেরাত, তাওহীদ ও কুরআন সম্পর্কে মক্কার কাফেরদের সন্দেহ-সংশয়ের প্রতিবাদ। এক দিন যে কিয়ামত হবে, পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস ও লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। তারপর সমস্ত মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করে তাদের হিসেব নিকেশ নেয়া হবে । এবং সৎকর্মশীল মানুষদেরকে জান্নাতের বাগানসমূহে রাখা হবে। আর গোনাহগারদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে-এসব কথাকে তারা সর্বাধিক অবিশ্বাস্য বলে মনে করতো। তারা বলতোঃ এসব কল্পনা মাত্র। এসব বাস্তবে সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। এর জবাবে আল্লাহ বলেছেনঃ এ ঘটনা প্রকৃতই যখন সংঘটিত হবে তখন এসব মিথ্যা কথকদের কেউ-ই বলবে না যে, তা সংঘটিত হয়নি তার আগমন রুখে দেয়ার কিংবা তার বাস্তাবতাকে অবাস্তব বানিয়ে দেয়ার সাধ্যও কারো হবে না। সে সময় সমস্ত মানুষ অনিবার্যরূপে তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক, সাবেকীন বা অগ্রগামীদের শ্রেনী। দুই, সালেহীন বা সাধারণ নেককারদের শ্রেণী। এবং তিন, সেই সব মানুষ যারা আখেরাতকে অস্বীকার করতো এবং আমৃত্য কুফরী, শিরক ও কবীরা গোনাহর ওপর অবিচল ছিল। এ তিনটি শ্রেণীর সাথে যে আচরণ করা হবে ৭ থেকে ৫৬ আয়াত পর্যন্ত তা সবিস্তরে বর্ণনা করা হয়েছে।
এরপর ৫৭ থেকে ৭৪ আয়াত পর্যন্ত তাওহীদ ও আখেরাতের ইসলামের এ দুটি মৌলিক আকীদার সত্যতা সম্পর্কে পরপর যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।এ দুটি বিষয়কেই কাফেররা অস্বীকার করে আসছিল । এ ক্ষেত্রে যুক্তি-প্রমান হিসেবে পৃথিবী ও নভোমন্ডলের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে মানুষকে তার নিজের সত্ত্বা প্রতি, যে খাবার সে খায় সে খাবারের প্রতি, যে পানি সে পান করে সে পানির প্রতি এবং যে আগুনের সাহায্যে সে নিজের খাবার তৈরী করে সে আগুনের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে । তাকে এ প্রশ্নটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে বলা হয়েছে যে, যে আল্লাহর সৃষ্টির কারণে তুমি সৃষ্টি হয়েছো, যার দেয়া জীবনযাপনের সামগ্রীতে তুমি প্রতিপালিত হচ্ছো, তাঁর মোকাবিলায় তুমি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার কিংবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাঁসত্ব করার কি অধিকার তোমার আছে? তাঁর সম্পর্কে তুমি এই ধারণা করে বসলে কি করে যে, তিনি একবার তোমাকে অস্তিত্ব দান করার পর এমন অক্ষম ও অর্থব হয়ে পড়েছেন যে, পুণরায় তোমাকে অস্তিত্ব দান করতে চাইলেও তা পারবেন না?
তারপর ৭৫ থেকে ৮২ আয়াত পর্যন্ত কুরআন সম্পর্কে তাদের নানা রকম সন্দেহ-সংশয় নিরসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ উপলব্ধি সৃষ্টিও চেষ্টা করা হয়েছে যে, হতভাগারা তোমাদের কাছে যে এক বিরাট নিয়ামত এসেছে। অথচ এ নিয়ামতের সাথে তোমাদের আচরণ হলো, তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছো এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করছো না। কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে দুটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে অনুপম যুক্তি পেশ করা হয়েছে । বলা হয়েছে যদি কুরআন নিয়ে কেউ গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখে তাহলে তার মধ্যেও ঠিক তেমনি মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা দেখতে পাবে যেমন মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা আছে মহাবিশ্বের তরকা ও গ্রহরাজির মধ্যে । আর এসব একথাই প্রমাণ করে যে, যিনি এই মহাবিশ্বের নিয়ম-শৃংখলা ও বিধান সৃষ্টি করেছেন কুরআনের রচয়িতাও তিনিই। তারপর কাফেরদের বলা হয়েছে, এ গ্রন্থ সেই ভাগ্যলিপিতে উৎকীর্ণ আছে যা সমস্ত সৃষ্টির নাগালের বাইরে। তোমরা মনে করো শয়তান মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ গ্রন্থের কথাগুলো নিয়ে আসে। অথচ ‘লওহে মাহফূজ’ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত যে মাধ্যম এ কুরআন পৌছায় তাতে পবিত্র আত্মা ফেরেশতারা ছাড়া আর কারো সামান্যতম হাতও থাকে না।
সর্বশেষ মানুষকে বলা হয়েছে, তুমি যতই গর্ব ও অংহাকর করো না কেন, এবং নিজের স্বেচ্ছাচারিতার অহমিকায় বাস্তব সম্পর্কে যতই অন্ধ হয়ে থাক না কেন, মৃত্যুর মুহূর্তটি তোমার চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সে সময় তুমি একান্তই অসহায় হয়ে পড়ো। নিজের পিতা-মাতাকে বাঁচাতে পার না। নিজের সন্তান-সন্তুতিকে বাঁচতে পার না। নিজের পীর ও মুর্শিদ এবং অতি প্রিয় নেতাদেরকে বাঁচাতে পার না । সবাই তোমার চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আর তুমি অসহায়ের মত দেখতে থাক। তোমার ওপরে যদি কোন উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী ও শাসক না-ই না থেকে থাকে, এবং পৃথিবীতে কেবল তুমিই থেকে থাক, কোন আল্লাহ না থেকে থাকে, তোমার এ ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে কোন মৃত্যুপথযাত্রীর বেরিয়ে যাওয়া প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পার না কেন? এ ব্যাপারে তুমি যেমন অসহায় ঠিক তেমনি আল্লাহর সামনে জবাবদিহি এবং তার প্রতিদান ও শাস্তি প্রতিহত করাও তোমার সাধ্যের বাইরে। তুমি বিশ্বাস কর আর নাই কর, মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে তার পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে। “মুকাররাবীন” বা নৈকট্য লাভকারীদের অন্তরভুক্ত হলে ‘মুকাররাবীনদের’ পরিণাম ভোগ করবে। ‘সালেহীন’ বা সৎকর্মশীল হলে সালেহীনদের পরিণাম ভোগ করবে এবং অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত হলে সেই পরিণাম লাভ করবে যা এ ধরনের পাপীদের জন্য নির্ধারিত আছে।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ﴾
১) যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে
﴿لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ﴾
২) তখন তার সংঘটিত হওয়াকে কেউ-ই মিথ্যা বলতে পারবে না ৷
﴿خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ﴾
৩) তা হবে উলট-পালটকারী মহা প্রলয় ৷
﴿إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا﴾
৪) পৃথিবীকে সে সময় অকস্মাত ভীষণভাবে আলোড়িত করা হবে
﴿وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا﴾
৫) এবং পাহাড়কে এমন টুকরো টুকরো করে দেয়া হবে
﴿فَكَانَتْ هَبَاءً مُّنبَثًّا﴾
৬) যে, তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে৷
﴿وَكُنتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً﴾
৭) সে সময় তোমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে ৷ ডান দিকের লোক ৷
﴿فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ﴾
৮) ডান দিকের লোকদের (সৌভাগ্যের) কথা আর কতটা বলা যাবে৷
﴿وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ﴾
৯) বাম দিকের লোক বাম দিকের লোকদের (দুর্ভাগ্যের) পরিণতি আর কি বলা যাবে৷
﴿وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ﴾
১০) আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই৷
﴿أُولَٰئِكَ الْمُقَرَّبُونَ﴾
১১) তারাই তো নৈকট্য লাভকারী৷
﴿فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ﴾
১২) তারা নিয়ামতের ভরা জান্নাতে থাকবে৷
﴿ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ﴾
১৩) পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে বেশী
﴿وَقَلِيلٌ مِّنَ الْآخِرِينَ﴾
১৪) এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে কম ৷
﴿عَلَىٰ سُرُرٍ مَّوْضُونَةٍ﴾
১৫) তারা মণিমুক্তা খচিত আসনসমূহে হেলান দিয়ে
﴿مُّتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ﴾
১৬) সামনা সামনি বসবে৷
﴿يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ﴾
১৭) তাদের মজলিসে চির কিশোররা ৷
﴿بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ﴾
১৮) বহমান ঝর্ণার সূরায় ভরা পান পাত্র, হাতল বিশিষ্ট সূরা পাত্র এবং হাতলবিহীন বড় সূরা পাত্র নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকবে
﴿لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ﴾
১৯) – যা পান করে মাথা ঘুরবে না৷ কিংবা বুদ্ধিবিবেক লোপ পাবে না ৷
﴿وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ﴾
২০) তারা তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে যাতে পছন্দ মত বেছে নিতে পারে৷
﴿وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ﴾
২১) পাখীর গোশত পরিবেশন করবে, যে পাখীর গোশত ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবে৷
﴿وَحُورٌ عِينٌ﴾
২২) তাদের জন্য থাকবে সুনয়না হুর
﴿كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ﴾
২৩) এমন অনুপম সুন্দরী যেন লুকিয়ে রাখা মুক্তা ৷
﴿جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
২৪) দুনিয়াতে তারা যেসব কাজ করেছে তার প্রতিদান হিসেবে এসব লাভ করবে৷
﴿لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا﴾
২৫) সেখানে তারা কোন অর্থহীন বা গোনাহর কথা শুনতে পাবে না ৷
﴿إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا﴾
২৬) বরং যে কথাই শুনবে তা হবে যথাযথ ও ঠিকঠাক ৷
﴿وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ﴾
২৭) আর ডান দিকের লোকেরা৷ ডান দিকের লোকদের সৌভাগ্যের কথা আর কতটা বলা যাবে৷
﴿فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ﴾
২৮) তাঁরা কাঁটাবিহীন কুল গাছের কুল,
﴿وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ﴾
২৯) থরে বিথরে সজ্জিত কলা,
﴿وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ﴾
৩০) দীর্ঘ বিস্তৃত ছায়া,
﴿وَمَاءٍ مَّسْكُوبٍ﴾
৩১) সদা বহমান পানি,
﴿وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ﴾
৩২) অবাধ লভ্য অনিশেষ যোগ্য
﴿لَّا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ﴾
৩৩) প্রচুর ফলমূল
﴿وَفُرُشٍ مَّرْفُوعَةٍ﴾
৩৪) এবং সুউচ্চ আসনসমূহে অবস্থান করবে৷
﴿إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاءً﴾
৩৫) তাদের স্ত্রীদেরকে আমি বিশেষভাবে নতুন করে সৃষ্টি করবো
﴿فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا﴾
৩৬) এবং কুমারী বানিয়ে দেব৷
﴿عُرُبًا أَتْرَابًا﴾
৩৭) তারা হবে নিজের স্বামীর প্রতি আসক্ত ও তাদের সময়বস্কা ৷
﴿لِّأَصْحَابِ الْيَمِينِ﴾
৩৮) এসব হবে ডান দিকের লোকদের জন্য ৷
﴿ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ﴾
৩৯) তাদের সংখ্যা পূববর্তীদের মধ্য থেকেও হবে অনেক
﴿وَثُلَّةٌ مِّنَ الْآخِرِينَ﴾
৪০) এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকেও হবে অনেক৷
﴿وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ﴾
৪১) বাঁ দিকের লোক৷ বাঁ দিকের লোকদের দুর্ভাগ্যের কথা আর কি বলা যাবে৷
﴿فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ﴾
৪২) তারা লু হাওয়ার হলকা, ফুটন্ত পানি
﴿وَظِلٍّ مِّن يَحْمُومٍ﴾
৪৩) এবং কালো ধোঁয়ার ছায়ার নীচে থাকবে৷
﴿لَّا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ﴾
৪৪) তা না হবে ঠাণ্ডা না হবে আরামদায়ক৷
﴿إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُتْرَفِينَ﴾
৪৫) এরা সেসব লোক যারা এ পরিণতিলাভের পূর্বে সুখী ছিল
﴿وَكَانُوا يُصِرُّونَ عَلَى الْحِنثِ الْعَظِيمِ﴾
৪৬) এবং বারবার বড় বড় গোনাহ করতো ৷
﴿وَكَانُوا يَقُولُونَ أَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ﴾
৪৭) বলতোঃ আমরা যখন মরে মাটিতে মিশে যাবো এবং নিরেট হাড্ডি অবশিষ্ট থাকবো তখন কি আমাদেরকে জীবিত করে তোলা হবে?
﴿أَوَآبَاؤُنَا الْأَوَّلُونَ﴾
৪৮) আমাদের বাপ দাদাদেরকেও কি উঠানো হবে যারা ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে?
﴿قُلْ إِنَّ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ﴾
৪৯) হে নবী, এদের বলে দাও,
﴿لَمَجْمُوعُونَ إِلَىٰ مِيقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ﴾
৫০) নিশ্চিতভাবেই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের সব মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করা হবে৷ সে জন্য সময় নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে৷
﴿ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ﴾
৫১) তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা
﴿لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ﴾
৫২) তোমাদেরকে ‘যাককূম’ বৃক্ষজাত খাদ্য খেতে হবে৷
﴿فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ﴾
৫৩) তোমরা ঐ খাদ্য দিয়েই পেট পূর্ণ করবে
﴿فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ﴾
৫৪) এবং তার পরই পিপাসার্ত উটের মত
﴿فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ﴾
৫৫) ফুটন্ত পানি পান করবে৷
﴿هَٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ﴾
৫৬) প্রতিদান দিবসে বাঁ দিকের লোকদের আপ্যায়নের উপকরণ৷
﴿نَحْنُ خَلَقْنَاكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُونَ﴾
৫৭) আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি৷ এরপরও কেন তোমরা মানছো না?
﴿أَفَرَأَيْتُم مَّا تُمْنُونَ﴾
৫৮) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে শুক্র তোমরা নিক্ষেপ করো
﴿أَأَنتُمْ تَخْلُقُونَهُ أَمْ نَحْنُ الْخَالِقُونَ﴾
৫৯) তা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি তোমরা করো, না তার স্রষ্টা আমি?
﴿نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ﴾
৬০) আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যুকে বন্টন করেছি৷
﴿عَلَىٰ أَن نُّبَدِّلَ أَمْثَالَكُمْ وَنُنشِئَكُمْ فِي مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
৬১) তোমাদের আকার আকৃতি পাল্টে দিতে এবং তোমাদের অজানা কোন আকার -আকৃতিতে সৃষ্টি করতে আমি অক্ষম নই?
﴿وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ النَّشْأَةَ الْأُولَىٰ فَلَوْلَا تَذَكَّرُونَ﴾
৬২) নিজেদের প্রথমবার সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জান৷ তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা ৷
﴿أَفَرَأَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ﴾
৬৩) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে বীজ তোমরা বপন করে থাকো
﴿أَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ﴾
৬৪) তা থেকে ফসল উৎপন্ন তোমরা করো, না আমি?
﴿لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ﴾
৬৫) আমি চাইলে এসব ফসলকে দানাবিহীন ভূষি বানিয়ে দিতে পানি৷ তখন তোমরা নানা রকমের কথা বলতে থাকবে৷
﴿إِنَّا لَمُغْرَمُونَ﴾
৬৬) বলবে আমাদেরকে তো উল্টা জরিমানা দিতে হলো৷
﴿بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُونَ﴾
৬৭) আমাদের ভাগ্যটাই মন্দ৷
﴿أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ﴾
৬৮) তোমরা কি চোখ মেলে কখনো দেখেছো, যে পানি তোমরা পান করো,
﴿أَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنزِلُونَ﴾
৬৯) মেঘ থেকে তা তোমরা বর্ষণ করো, না তার বর্ষণকারী আমি?
﴿لَوْ نَشَاءُ جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ﴾
৭০) আমি চাইলে তা লবণাক্ত বানিয়ে দিতে পারি৷ তা সত্ত্বেও তোমরা শোকরগোজার হও না কেন?
﴿أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ﴾
৭১) তোমরা কি কখনো লক্ষ করেছো, -এই যে আগুন তোমরা জ্বালাও তার গাছ –
﴿أَأَنتُمْ أَنشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنشِئُونَ﴾
৭২) তোমরা সৃষ্টি করো, না তার সৃষ্টিকর্তা আমি?
﴿نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَمَتَاعًا لِّلْمُقْوِينَ﴾
৭৩) আমি সেটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার উপকরণ এবং মুখাপেক্ষীদের জন্য জীবনোপকরণ বানিয়েছি৷
﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ﴾
৭৪) অতএব হে নবী, তোমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করো ৷
﴿فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ﴾
৭৫) অতএব না, আমি শপথ করছি তারকাসমূহের ভ্রমণ পথের৷
﴿وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ﴾
৭৬) এটা এক অতি বড় শপথ যদি তোমরা বুঝতে পার৷
﴿إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ﴾
৭৭) এ তো মহা সম্মানিত কুরআন ৷
﴿فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ﴾
৭৮) একখানা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ৷
﴿لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ﴾
৭৯) পবিত্র সত্তাগণ ছাড়া আর কেউ তা স্পর্শ করতে পারে না৷
﴿تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৮০) এটা বিশ্ব-জাহানের রবের নাযিলকৃত৷
﴿أَفَبِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَنتُم مُّدْهِنُونَ﴾
৮১) এরপরও কি তোমরা এ বাণীর প্রতি উপেক্ষার ভাব প্রদর্শন করছো?
﴿وَتَجْعَلُونَ رِزْقَكُمْ أَنَّكُمْ تُكَذِّبُونَ﴾
৮২) এ নিয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ রেখেছো এই যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো?
﴿فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ﴾
৮৩)
﴿وَأَنتُمْ حِينَئِذٍ تَنظُرُونَ﴾
৮৪)
﴿وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنكُمْ وَلَٰكِن لَّا تُبْصِرُونَ﴾
৮৫)
﴿فَلَوْلَا إِن كُنتُمْ غَيْرَ مَدِينِينَ﴾
৮৬)
﴿تَرْجِعُونَهَا إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
৮৭) [৮৩-৮৭ আয়াতের ভাবার্থ] তোমরা যদি কারো অধীন না হয়ে থাকো এবং নিজেদের এ ধারণার ব্যাপারে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে মৃত্যুপথযাত্রীর প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপনীতে হয় এবং তোমরা নিজ চোখে দেখতে পাও যে, সে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে সে সময় তোমরা বিদায়ী প্রাণবায়ূকে ফিরিয়ে আন না কেন? সে সময় তোমাদের চেয়ে আমিই তার অধিকতর নিকটে থাকি৷ কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না৷
﴿فَأَمَّا إِن كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ﴾
৮৮) মৃত সেই ব্যক্তি যদি মুকাররাবীনদের কেউ হয়ে থাকে
﴿فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّتُ نَعِيمٍ﴾
৮৯) তাহলে তার জন্য রয়েছে আরাম-আয়েশ, উত্তম রিযিক এবং নিয়ামত ভরা জান্নাত৷
﴿وَأَمَّا إِن كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ﴾
৯০) আর সে যদি ডান দিকের লোক হয়ে থাকে
﴿فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ﴾
৯১) তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হবে এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক৷
﴿وَأَمَّا إِن كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَ الضَّالِّينَ﴾
৯২) আর সে যদি অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের কেউ হয়ে থাকে
﴿فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِيمٍ﴾
৯৩) তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফূটন্ত গরম পানি
﴿وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ﴾
৯৪) এবং জাহান্নামের ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা৷
﴿إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ حَقُّ الْيَقِينِ﴾
৯৫) এ সবকিছুই অকাট্য সত্য৷
﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ﴾
৯৬) অতএব, হে নবী, আপনার মহান রবের নামের তাসবীহ-তথা পবিত্রতা ঘোষণা করুন৷