নামকরণ
সূরার সর্ব প্রথম আয়াতের () বাক্যাংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে। এভাবে নামকরণের তাৎপর্য হচ্ছে এটি সেই সূরা যার মধ্যে () শব্দ আছে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
এ সূরার মধ্যে চন্দ্র খণ্ডিত হওয়ার উল্লেখ আছে। এ থেকেই এর নাযিলের সময়-কাল চিহ্নিত হয়ে যায়। মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ এ ব্যাপারে একমত যে, চন্দ্র খণ্ডিত হওয়ার এ ঘটনা হিজরতের প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে মক্কায় মিনা নামক স্থানে সংঘটিত হয়েছিলো।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের বিরুদ্ধে মক্কার কাফেররা যে হঠকারিতার পন্থা অবলম্বন করে আসছিলো এ সূরায় সে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার যে খবর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিচ্ছিলেন তা যে সত্যিই সংঘটিত হতে পারে এবং তার আগমনের সময়ে যে অত্যন্ত নিকটবর্তী -চন্দ্র খণ্ডিত হওয়ার বিস্ময়কর ঘটনা তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ। চন্দ্রের মত একটি বিশাল উপগ্রহ তাদের চোখের সামনে বিদীর্ণ হয়েছিলো। তার দুটি অংশ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি আরেকটি থেকে এত দূরে চলে গিয়েছিলো যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা একটি খণ্ডকে পাহাড়ের এক পাশে অপর খণ্ডটিকে অপর পাশে দেখতে পেয়েছিলো। তারপর দুটি অংশ মুহূর্তের মধ্যে আবার পরস্পর সংযুক্ত হয়েছিলো। বিশ্ব ব্যবস্থা যে অনাদি, চিরস্থায়ী , ও অবিনশ্বর নয়, বরং তার ধ্বংস ও ছিন্ন ভিন্ন হতে পারে এটা তার অকাট্য প্রামাণ। বড় বড় তারকা ও গ্রহরাজি ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে পারে, একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়তে পারে এবং কিয়ামতের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে কুরআনে তার যে চিত্র অংকন করা হয়েছে তার সব কিছুই যে ঘটতে পারে, শুধু তাই নয় বরং এ ঘটনা এ ইংগিতও দিচ্ছিলো যে, বিশ্ব ব্যবস্থা ধ্বংস ও ছিন্নভিন্ন হওয়ার সূচনা হয়ে গিয়েছে এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় অতি নিকটে এসে পড়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকটির প্রতিই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেনঃ তোমরা দেখো এবং সাক্ষী থাকো। কিন্তু কাফেররা এ ঘটনাকে যাদুর বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করলো এবং তা না মানতে বদ্ধপরিকর রইল। এ হঠকারিতার জন্য তাদেরকে এ সূরায় তিরস্কার করা হয়েছে।
বক্তব্য শুরু করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, এসব লোক যুক্তি তর্কও মানে না, ইতিহাস থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেনা, স্পষ্ট নিদর্শনাদি চোখে দেখেও বিশ্বাস করে না। এরা কেবল হাশরের দিনের একচ্ছত্র অধিপতির দিকে ছুটে যেতে থাকবে।
এরপর তাদের সামনে নূহের কওম, আদ, সামূদ, লূতের কওম এবং ফেরাউনের অনুসারীদের অবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রেরীত রসূলদের সাবধান বাণীসমূহ অমান্য করে এসব জাতি কি ভয়াবহ আযাবে নিপতিত হয়েছিলো। এভাবে এক একটি জাতির কাহিনী বর্ণনা করার পর বারবার বলা হয়েছে যে, কুরআন উপদেশ গ্রহণের সহজ মাধ্যম। এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কোন জাতি যদি সঠিক পথ অনুসরণ করে তাহলে এসব কওমের ওপর যে আযাব এসেছে তা তাদের ওপর কখনো আসতে পারে না।
কিন্তু এটা কোন ধরনের নির্বুদ্ধিতা যে, এই সহজলভ্য উৎস থেকে উপদেশ গ্রহণ করার পরিবর্তে কেউ গোঁ ধরে থাকবে যে, আযাবে নিপতিত না হওয়া পর্যন্ত মানবে না।
একইভাবে অতীত জাতিসমূহের ইতিহাস থেকে উদাহরণ পেশ করার পর মক্কার কাফেরদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, যে কর্মপন্থা গ্রহণের কারণে অপরাপর জাতিসমূহ সাজা প্রাপ্তা হয়েছে তোমরাও যদি সেই একই কর্মপন্থা গ্রহণ করো তাহলে তোমরাই বা শাস্তি পাবে না কেন? তোমাদের কি আলাদা কোন বৈশিষ্ট আছে যে, তোমাদের সাথে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন আচরণ করা হবে? নাকি এই মর্মে ক্ষমার কোন বিশেষ সনদ লিখিতভাবে তোমাদের কাছে এসেছে যে, অন্যদেরকে যে অপরাধে পাকড়াও করা হয়েছে সেই একই অপরাধ করলেও তোমাদের পাকড়াও করা হবে না? আর তোমারা যদি নিজেদের দলীয় বা সংঘবদ্ধ শক্তির কারণে গর্বিত হয়ে থাকো তাহলে তোমাদের এ সংঘবদ্ধ শক্তিকে অচিরেই পরাজিত হয়ে পালাতে দেখা যাবে। সর্বোপরি কিয়ামতের দিন তোমাদের সাথে এর চেয়েও কঠোর আচরণ করা হবে।
সবশেষে কাফেরদের বলা হয়েছে, কিয়ামত সংঘটনের জন্য আল্লাহ তা’আলার বড় কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তাঁর আদেশ হওয়া মাত্র চোখের পলকে তা সংঘটিত হবে। তবে সব কিছুর মতই বিশ্ব ব্যবস্থা ও মানব জাতির জন্যও একটা “তাকদীর”বা পরিকল্পিত সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আছে। এই পরিকল্পনা অনুসারে এ কাজের জন্য যে নির্দিষ্ট সময় আছে সে সময়েই তা হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ চ্যালেঞ্জ করলো আর অমনি তাকে স্বমতে আনার জন্য কিয়ামত সংঘটিত করে দেয়া হলো এমনটা হতে পাররে না। ত সংঘটিত হচ্ছে না দেখে তোমরা যদি বিদ্রোহ করে বসো তাহলে নিজেদের দুস্কর্মের প্রতিফলই ভোগ করবে। আল্লাহর কাছে তোমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি প্রস্তুত হচ্ছে। তোমাদের ছোট বড় কোন তৎপরতাই তাতে লিপিবদ্ধ হওয়া থেকে বাদ পড়েছে না।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ﴾
১) কিয়ামতের সময় নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে৷
﴿وَإِن يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ﴾
২) কিন্তু এসব লোকের অবস্থা হচ্ছে তারা যে নিদর্শনই দেখে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এ তো গতানুগতিক যাদু৷
﴿وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَكُلُّ أَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ﴾
৩) এরা (একেও) অস্বীকার করলো এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করলো৷ প্রত্যেক বিষয়কে শেষ পর্যন্ত একটা পরিণতি লাভ করতে হয়৷
﴿وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّنَ الْأَنبَاءِ مَا فِيهِ مُزْدَجَرٌ﴾
৪) এসব লোকদের কাছে (পূর্ববর্তী জাতি সমূহের ) সেসব পরিণতির খবর অবশ্যই এসেছে যার মধ্যে অবাধ্যতা থেকে নিবৃত্ত রাখার মত যথেষ্ট শিক্ষনীয় বিষয় আছে৷
﴿حِكْمَةٌ بَالِغَةٌ ۖ فَمَا تُغْنِ النُّذُرُ﴾
৫) আরো আছে এমন যুক্তি যা নসীহতের উদ্দেশ্যকে পূর্ণ মাত্রায় পূরণ করে৷ কিন্তু সাবধানবাণী তাদের জন্য ফলপ্রদ হয় না৷
﴿فَتَوَلَّ عَنْهُمْ ۘ يَوْمَ يَدْعُ الدَّاعِ إِلَىٰ شَيْءٍ نُّكُرٍ﴾
৬) অতএব হে নবী, এদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও৷ যেদিন আহবানকারী একটি অত্যন্ত অপন্দনীয়
﴿خُشَّعًا أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنتَشِرٌ﴾
৭) জিনিসের দিকে আহবান জানাবে, লোকেরা ভীত বিহবল দৃষ্টি নিয়ে নিজ নিজ কবর থেকে এমনভাবে উঠে আসবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পতঙ্গরাজি৷
﴿مُّهْطِعِينَ إِلَى الدَّاعِ ۖ يَقُولُ الْكَافِرُونَ هَٰذَا يَوْمٌ عَسِرٌ﴾
৮) তারা আহবানকারীর দিকে দৌড়িয়ে যেতে থাকবে৷ আর সেসব অস্বীকারকারী (যারা দুনিয়াতে তা অস্বীকার করতো) সে সময় বলবে, এ তো বড় কঠিন দিন৷
﴿كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ فَكَذَّبُوا عَبْدَنَا وَقَالُوا مَجْنُونٌ وَازْدُجِرَ﴾
৯) এদের পূর্বে নূহের (আ) জাতিও অস্বীকার করেছে৷ তারা আমার বান্দাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছে, এবং বলেছে, এ লোকটি পাগল৷ উপরন্তু তাকে তীব্রভাবে তিরষ্কার ও করা হয়েছে৷
﴿فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانتَصِرْ﴾
১০) অবশেষে সে তার রবকে উদ্দেশ্য করে বললো; আমি পরিভূত হয়েছি, এখন তুমি এদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করো৷
﴿فَفَتَحْنَا أَبْوَابَ السَّمَاءِ بِمَاءٍ مُّنْهَمِرٍ﴾
১১) তখন আমি আসমানের দরজাসমূহ খুলে দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করলাম
﴿وَفَجَّرْنَا الْأَرْضَ عُيُونًا فَالْتَقَى الْمَاءُ عَلَىٰ أَمْرٍ قَدْ قُدِرَ﴾
১২) এবং যমীন বিদীর্ণ করে ঝর্ণাধারায় রূপান্তরিত করলাম৷ এ পানির সবটাই সেই কাজ পূর্ণ করার জন্য সংগৃহীত হলো যা আগে থেকেই সুনিদিষ্ট ছিল৷
﴿وَحَمَلْنَاهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلْوَاحٍ وَدُسُرٍ﴾
১৩) আর নূহকে (আ) আমি কাষ্ঠফলক ও পেরেক সম্বলিত বাহনে আরোহন করিয়ে দিলাম
﴿تَجْرِي بِأَعْيُنِنَا جَزَاءً لِّمَن كَانَ كُفِرَ﴾
১৪) যা আমার তত্ত্বাবধানে চলছিলো৷ এ ছিলো সে ব্যক্তির জন্য প্রতিশোধ যাকে অস্বীকার ও অবমাননা করা হয়েছিলো৷
﴿وَلَقَد تَّرَكْنَاهَا آيَةً فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
১৫) সে নৌকাকে আমি একটি নিদর্শন বানিয়ে দিয়েছি৷ এমতাবস্থায় উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছ কি?
﴿فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
১৬) দেখো, কেমন ছিল আমার আযাব আর কেমন ছিল সাবধান বাণী৷
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
১৭) আমি এ কুরআনকে উপদেশ লাভের সহজ উৎস বানিয়ে দিয়েছি৷ এমতাবস্থায় উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
﴿كَذَّبَتْ عَادٌ فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
১৮) আদ জাতি অস্বীকার করেছিলো৷ দেখো, কেমন ছিল আমার আযাব এবং কেমন ছিল আমার সাবধানবাণী৷
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا فِي يَوْمِ نَحْسٍ مُّسْتَمِرٍّ﴾
১৯) আমি এক, বিরামহীন অশুভ দিনে তাদের ওপর প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস পাঠালাম
﴿تَنزِعُ النَّاسَ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ مُّنقَعِرٍ﴾
২০) যা তাদেরকে উপরে উঠিয়ে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলেছিলো যেন তারা সমূলে উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড৷
﴿فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
২১) দেখো, কেমন ছিল আমার আযাব এবং কেমন ছিল আমার সাবধানবাণী৷
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
২২) আমার এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের সহজ উৎস বানিয়ে দিয়েছি৷ অতপর উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছ কি?
﴿كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِالنُّذُرِ﴾
২৩) সামূদ সাবধান বাণীসমূহ অস্বীকার করলো
﴿فَقَالُوا أَبَشَرًا مِّنَّا وَاحِدًا نَّتَّبِعُهُ إِنَّا إِذًا لَّفِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ﴾
২৪) এবং বলতে লাগলো “এখন কি আমরা আমাদেরই মধ্যকার এক ব্যক্তিকে এককভাবে মেনে চলবো? আমরা যদি তার আনুগত্য গ্রহণ করি তাহলে তার অর্থ হবে আমরা বিপথগামী হয়েছি এবং আমাদের বিবেক-বুদ্ধির মাথা খেয়েছি৷
﴿أَأُلْقِيَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِن بَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ أَشِرٌ﴾
২৫) আমাদের মধ্যে কি একা এই ব্যক্তিই ছিল যার ওপর আল্লাহর যিকির নাযিল করা হয়েছে? না বরং এ চরম মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক৷
﴿سَيَعْلَمُونَ غَدًا مَّنِ الْكَذَّابُ الْأَشِرُ﴾
২৬) (আমি আমার নবীকে বললাম) কে চরম মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক তা এরা কালকেই জানতে পারবে৷
﴿إِنَّا مُرْسِلُو النَّاقَةِ فِتْنَةً لَّهُمْ فَارْتَقِبْهُمْ وَاصْطَبِرْ﴾
২৭) আমি উটনীকে তাদের জন্য ফিতনা বানিয়ে পাঠাচ্ছি৷ এখন একটু ধৈর্য ধরে দেখ, এদের পরিণতি কি হয়৷
﴿وَنَبِّئْهُمْ أَنَّ الْمَاءَ قِسْمَةٌ بَيْنَهُمْ ۖ كُلُّ شِرْبٍ مُّحْتَضَرٌ﴾
২৮) তাদের জানিয়ে দাও, এখন তাদের ও উটনীর মধ্যে পানি ভাগ হবে এবং প্রত্যেকেই তার পালার দিনে পানির জন্য আসবে৷ ”
﴿فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطَىٰ فَعَقَرَ﴾
২৯) শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের লোকটিকে ডাকলো, সে এ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলো এবং উটনীকে হত্যা করলো,
﴿فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
৩০) দেখ, কেমন ছিল আমার আযাব আর কেমন ছিল আমার সাবধান বাণীসমূহ৷
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَكَانُوا كَهَشِيمِ الْمُحْتَظِرِ﴾
৩১) আমি তাদের ওপর একটি মাত্র বিকট শব্দ পাঠালাম এবং তারা খোঁয়াড়ের মালিকের শুষ্ক ও পদদলিত শস্যের মত হয়ে গেল৷
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
৩২) আমি এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের সহজ উৎস বানিয়ে দিয়েছি৷ এখন উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
﴿كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ بِالنُّذُرِ﴾
৩৩) লূতের কওম সাবধান বাণীসমূহ অস্বীকার করলো৷
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ حَاصِبًا إِلَّا آلَ لُوطٍ ۖ نَّجَّيْنَاهُم بِسَحَرٍ﴾
৩৪) আমি তাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী বাতাস পাঠালাম৷
﴿نِّعْمَةً مِّنْ عِندِنَا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي مَن شَكَرَ﴾
৩৫) শুধু লূতের পরিবারের লোকেরা তা থেকে রক্ষা পেল৷ আমি নিজের অনুগ্রহে তাদেরকে রাতের শেষ প্রহরে বাঁচিয়ে বের করে দিলাম৷ যারা কৃতজ্ঞ আমি তাদের সবাইকে এভাবে প্রতিদান দিয়ে থাকি৷
﴿وَلَقَدْ أَنذَرَهُم بَطْشَتَنَا فَتَمَارَوْا بِالنُّذُرِ﴾
৩৬) লূত তার কওমের লোকদেরকে আমার শাস্তি সম্পর্কে সাবধান করেছিল৷ কিন্তু তারা সবগুলো সাবধানবাণী সম্পর্কে সন্দেহ পোষন করলো এবং কথাচ্ছলেই উড়িয়ে দিল৷
﴿وَلَقَدْ رَاوَدُوهُ عَن ضَيْفِهِ فَطَمَسْنَا أَعْيُنَهُمْ فَذُوقُوا عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
৩৭) অতপর তারা তাকে তার মেহমানদের হিফাজত করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলো৷ শেষ পর্যন্ত আমি তাদের চোখ অন্ধ করে দিলাম৷ এখন তোমরা আমার আযাব ও সাবধানবাণীর স্বাদ আস্বাদন করো৷
﴿وَلَقَدْ صَبَّحَهُم بُكْرَةً عَذَابٌ مُّسْتَقِرٌّ﴾
৩৮) খুব ভোরেই একটি অপ্রতিরোধ্য আযাব তাদের ওপর আপতিত হলো৷
﴿فَذُوقُوا عَذَابِي وَنُذُرِ﴾
৩৯) এখন আমার আযাব ও সাবাধান বাণীসমূহের স্বাদ আস্বাদন করো৷
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
৪০) আমি এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহনের সহজ উৎস বানিয়ে দিয়েছি৷ উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
﴿وَلَقَدْ جَاءَ آلَ فِرْعَوْنَ النُّذُرُ﴾
৪১) ফেরাউনের অনুসারীদের কাছেও সাবধান বাণীসমূহ এসেছিল৷
﴿كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا كُلِّهَا فَأَخَذْنَاهُمْ أَخْذَ عَزِيزٍ مُّقْتَدِرٍ﴾
৪২) কিন্তু তারা আমার সবগুলো নিদর্শনকে অস্বীকার করলো৷ অবশেষে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম৷ যেভাবে কোন মহা -পরাক্রমশালী পাকড়াও করে৷
﴿أَكُفَّارُكُمْ خَيْرٌ مِّنْ أُولَٰئِكُمْ أَمْ لَكُم بَرَاءَةٌ فِي الزُّبُرِ﴾
৪৩) তোমাদের কাফেররা কি এ সব লোকদের চেয়ে কোন অংশে ভাল? নাকি আসমানী কিতাবসমূহে তোমাদের জন্য কোন ক্ষমা লিখিত আছে?
﴿أَمْ يَقُولُونَ نَحْنُ جَمِيعٌ مُّنتَصِرٌ﴾
৪৪) না কি এসব লোক বলে, আমরা একটা সংঘবদ্ধ শক্তি৷ নিজেরাই নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করবো৷
﴿سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ﴾
৪৫) অচিরেই এ সংঘবদ্ধ শক্তি পরাজিত হবে৷ এবং এদের সবাইকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে দেখা যাবে৷
﴿بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَىٰ وَأَمَرُّ﴾
৪৬) এদের সাথে বুঝাপড়া করার জন্য প্রকৃত প্রতিশ্রুত সময় হচ্ছে কিয়ামত৷ কিয়ামত অত্যন্ত কঠিন ও অতীব তিক্ত সময়৷
﴿إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ﴾
৪৭) প্রকৃতপক্ষে এ পাপীরা ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত আছে৷ এদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে৷
﴿يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ﴾
৪৮) যেদিন এদেরকে উবুড় করে আগুনের মধ্যে টেনে হেচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেদিন এদের বলা হবে, এখন জাহান্নামের স্পর্শের স্বাদ আস্বাদন করো৷
﴿إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ﴾
৪৯) আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে একটি পরিমাপ অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি৷
﴿وَمَا أَمْرُنَا إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ﴾
৫০) আমার নির্দেশ একটি মাত্র নির্দেশ হয়ে থাকে এবং তা চোখের পলকে কার্যকর হয়৷
﴿وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا أَشْيَاعَكُمْ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
৫১) তোমাদের মত অনেককেই আমি ধ্বংস করেছি আছে কি কোন উপদেশ গ্রহণকারী?
﴿وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوهُ فِي الزُّبُرِ﴾
৫২) তারা যা করেছে সবই রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ আছে
﴿وَكُلُّ صَغِيرٍ وَكَبِيرٍ مُّسْتَطَرٌ﴾
৫৩) এবং প্রতিটি ছোট ও বড় বিষয়ই লিখিতভাবে বিদ্যমান আছে৷
﴿إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ﴾
৫৪) আল্লাহর নাফরমানী থেকে আত্মরক্ষাকারীরা নিশ্চিতরূপে বাগান ও ঝর্নাসমূহের মধ্যে অবস্থান করবে,
﴿فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِندَ مَلِيكٍ مُّقْتَدِرٍ﴾
৫৫) সত্যিকার মর্যাদার স্থানে মহা শক্তিধর সম্রাটের সান্নিধ্যে৷
[…] ও ১৫ , সূরা আস সাফ্ফাত,৭৫ থেকে ৮২ এবং সূরা আল কামার, ৯ থেকে ১৬ আয়াত […]