নামকরণ :
সূরার প্রথম শব্দ ওয়াল লাইল ( আরবী ) – কে এই সূরার নাম গণ্য করা হয়েছে।
নাযিলের সময় – কাল
পূর্ববর্তী সূরা আশ শামসের সাথে এই সূরাটির বিষয়বস্তুর গভীর মিল দেখা যায়। এদিক দিয়ে এদের একটিকে অপরটির ব্যাখ্যা বলে মনে হয়। একই কথাকে সূরা আশ শামসে একভাবে বলা হয়েছে আবার সেটিকে এই সূরার অন্যভাবে বলা হয়েছে। এথেকে আন্দাজ করা যায় , এ দু’টি সূরা প্রায় একই যুগে নাযিল হয়।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :
জীবনের দু’টি ভিন্ন ভিন্ন পথের পার্থক্য এবং তাদের পরিণাম ও ফলাফলের প্রভেদ বর্ণনা করাই হচ্ছে এর মূল বিষয়বস্তু । বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এ সূরাটি দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগটি শুরু থেকে ১১ আয়াত পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ভাগটি ১২ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রথম অংশে বলা হয়েছে , মানুষ ব্যক্তিগত , জাতিগত ও দলগতভাবে দুনিয়ায় যা কিছু প্রচেষ্টা ও কর্ম তৎপরতা চালায় তা অনিবার্যভাবে নৈতিক দিক দিয়ে ঠিক তেমনি বিভিন্ন যেমন দিন ও রাত এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। তারপর কুরআনের ছোট ছোট সূরাগুলোর বর্ণনাভংগী অনুযায়ী প্রচেষ্টা ও কর্মের সমগ্র যোগফল থেকে এক ধরনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট এবং অন্য ধরনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট নিয়ে নমূনা হিসেবে পেশ করা হয়েছে। এই বৈশিষ্টগুলোর বর্ণনা শুনে এদের মধ্যকার পার্থক্য সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। কারণ এক ধরনের মৌলিক বৈশিষ্ট যে ধরনের জীবন পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করে অন্য ধরনের মৌলিক বৈশিষ্টে ঠিক তার বিপরীতধর্মী জীবন পদ্ধতির চিহ্ন ফুটে ওঠে। এই উভয় প্রকার নমুনা বর্ণনা করা হয়েছে ছোট ছোট , আকর্ষণীয় , সুন্দর ও সুগঠিত বাক্যের সাহায্যে। শোনার সাথে সাথে এগুলোর মর্মবাণী মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে যায় এবং সে সহজে সেগুলো আওড়াতে থাকে। প্রথম ধরনের বৈশিষ্টগুলো হচ্ছে : অর্থ – সম্পদ দান করা , আল্লাহভীতি ও তাকওয়া অবলম্বন করা এবং সৎবৃত্তিকে সৎবৃত্তি বলে মেনে নেয়া। দ্বিতীয় ধরনের বৈশিষ্টগুলো হচ্ছে : কৃপণতা করা , আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির পরোয়া না করা এবং ভালো কথাকে মিথ্যা গণ্য করা । তারপর বলা হয়েছে , এই উভয় ধরনের সুস্পষ্ট পরস্পর বিরোধী কর্মপদ্ধতি নিজের পরিণাম ও ফলাফলের দিক থেকে মোটেই এক নয়। বরং যেমন এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী , ঠিক তেমনি এদের ফলাফলও বিপরীতধর্মী । যে ব্যক্তি বা দল প্রথম কর্মপদ্ধতিটি গ্রহণ করবে তার জন্য মহান আল্লাহ জীবনের সত্য সরল পথটি সহজ লভ্য করে দেবেন। এ অবস্থায় তার জন্য সৎকাজ করা সহজ ও অসৎকাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। আর যারা দ্বিতীয় কর্মপদ্ধতিটি অবলম্বন করবে আল্লাহ জীবনের নোংরা , অপরিচ্ছন্ন ও কঠিন পথ তাদের জন্য সহজ করে দেবেন। এ অবস্থায় তাদের জন্য অসৎকাজ করা সহজ এবং সৎকাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ বর্ণনা এমন একটি বাক্যের দ্বারা শেষ করা হয়েছে যা তীরবেগে হৃদয়ে প্রবেশ করে মনের ওপর প্রভার বিস্তার করে সে বাক্যটি হচ্ছে : দুনিয়ার এই ধন – সম্পদ যার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়ে দেয় , এসব তো কবরে তার সাথে যাবে না , তাহলে মরণের পরে এগুলো তার কি কাজে লাগবে ? দ্বিতীয় অংশের ও এই একই রকম সংক্ষিপ্তভাবে তিনটি মৌলিক তত্ব পেশ করা হয়েছে।
[important]এক , দুনিয়ার এই পরীক্ষাগারে আল্লাহ মানুষকে অগ্রিম কিছু না জানিয়ে একেবারে অজ্ঞ করে পাঠিয়ে দেননি । বরং জীবনের বিভিন্ন পথের মধ্যে সোজা পথ কোনটি এটি তাকে জানিয়ে দেবার দায়িত্ব তিনি নিজের জিম্মায় নিয়েছেন। এই সংগে একথা বলার প্রয়োজন ছিল না যে , নিজের রসূল ও নিজের কিতাব পাঠিয়ে দিয়ে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছেন। কারণ সবাইকে পথ দেখাবার জন্য রসূল ও কুরআন সবার সামনে উপস্থিত ছিল। দুই , দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ । তাঁর কাছে দুনিয়া চাইলে তাও পাওয়া যাবে আবার আখেরাত চাইলে তাও তিনি দেবেন। এখন মানুষ এর মধ্য থেকে কোনটি চাইবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মানুষের নিজের দায়িত্ব। তিন , রসূল ও কিতাবের মাধ্যমে যে ন্যায় ও কল্যাণ পেশ করা হচ্ছে , যে হতভাগ্য ব্যক্তি তাকে মিথ্যা গণ্য করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে , তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে জ্বলন্ত আগুন। আর যে আল্লাহভীরু ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিস্বার্থভাবে নিছক নিজের রবের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের ধন মাল সৎপথে ব্যয় করবে তার রব তার প্রতি সন্তুষ্টি হবেন এবং তাকে এত বেশী দান করবেন যার ফলে সে খুশী হয়ে যাবে।[/important]
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰ﴾
১) রাতের কসম যখন তা ঢেকে যায়৷
﴿وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّىٰ﴾
২) দিনের কসম যখন তা উজ্জ্বল হয়৷
﴿وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنثَىٰ﴾
৩) আর সেই সত্তার কসম যিনি পুরুষ ও স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন ৷
﴿إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّىٰ﴾
৪) আসলে তোমাদের প্রচেষ্টা নানা ধরনের৷
﴿فَأَمَّا مَنْ أَعْطَىٰ وَاتَّقَىٰ﴾
৫) কাজেই যে ( আল্লাহর পথে ) ধন সম্পদ দান করেছে ,
﴿وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَىٰ﴾
৬) ( আল্লাহর নাফরমানি থেকে ) দূরে থেকেছে
﴿فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَىٰ﴾
৭) এবং সৎবৃত্তিতে সত্য বলে মেনে নিয়েছে ,তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ – সুবিধা দেবো৷
﴿وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَىٰ﴾
৮) আর যে কৃপণতা করেছে , আল্লাহ থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে
﴿وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَىٰ﴾
৯) এবং সৎবৃত্তিকে মিথ্যা গণ্য করেছে ,
﴿فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَىٰ﴾
১০) তাকে আমি কঠিন পথের সুযোগ – সুবিধা দেবো৷
﴿وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّىٰ﴾
১১) আর তার ধন – সম্পদ তার কোন কাজে লাগবে যখন সে ধবংস হয়ে যাবে ?
﴿إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَىٰ﴾
১২) নিসন্দেহে পথনির্দেশ দেয়া তো আমার দায়িত্বের অন্তরভুক্ত৷
﴿وَإِنَّ لَنَا لَلْآخِرَةَ وَالْأُولَىٰ﴾
১৩) আর আসলে আমি তো আখেরাত ও দুনিয়া উভয়েরই মালিক৷
﴿فَأَنذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظَّىٰ﴾
১৪) তাই আমি তোমাদের সাবধান করে দিয়েছি জ্বলন্ত আগুন থেকে৷
﴿لَا يَصْلَاهَا إِلَّا الْأَشْقَى﴾
১৫) যে চরম হতভাগ্য ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
﴿الَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ﴾
১৬) সে ছাড়া আর কেউ তাতে ঝলসে যাবে না৷
﴿وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى﴾
১৭) আর যে পরম মুত্তাকী ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জনের জন্য নিজের ধন – সম্পদ দান করে
﴿الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّىٰ﴾
১৮) তাকে তা থেকে দূরে রাখা হবে৷
﴿وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَىٰ﴾
১৯) তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহ নেই যার প্রতিদান তাকে দিতে হবে৷
﴿إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَىٰ﴾
২০) সেতো কেবলমাত্র নিজের রবের সন্তুষ্টিলাভের জন্য এ কাজ করে ৷
﴿وَلَسَوْفَ يَرْضَىٰ﴾
২১) আর তিনি অবশ্যি ( তার প্রতি ) সন্তুষ্ট হবেন৷