নামকরণ
২২৪ আয়াতের (আরবী) থেকে সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে ।
নাযিলের সময়-কাল
বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী থেকে বুঝা যাচ্ছে এবং হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে যে, এ সূরাটির নাযিলের সময়-কাল হচ্ছে মক্কার মধ্যবর্তীকালীন যুগ । ইবনে আব্বাসের (রা) বর্ণনামতে প্রথমে সূরা তা-হা নাযিল হয়, তারপর ওয়াকি’আহ এবং এরপর সূরা
আশ শু’আরা । (রূহুল মাআনী, ১৯ খণ্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা) আর সূরা তা-হা সম্পর্কে জানা আছে, এটি হযরত উমরের (আ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নাযিল হয়েছিল ।
বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষয়
ভাষণের পটভূমি হচ্ছে, মক্কার কাফেররা লাগাতার অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের মোকাবিলা করছিল । এ জন্য তারা বিভিন্ন রকমের বাহানাবাজীর আশ্রয় নিচ্ছিল । কখনো বলতো, তুমি তো আমাদের কোন চিহ্ন দেখালে না, তাহলে আমরা কেমন করে তোমাকে নবী বলে মেনে নেবো । কখনো তাঁকে কবি ও গণক আখ্যা দিয়ে তাঁর শিক্ষা ও উপদেশাবলীকে কথার মারপ্যাঁচে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতো । আবার কখনো তাঁর মিশনকে হালকা ও গুরুত্বহীন করে দেবার জন্য বলতো, কয়েকজন মূর্খ ও অর্বাচীন যুবক অথবা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসারী হয়েছে, অথচ এ শিক্ষা যদি তেমন প্রেরণাদায়ক ও প্রাণপ্রবাহে পূর্ণ হতো তাহলে জাতির শ্রেষ্ঠ লোকেরা , পণ্ডিত, জ্ঞানী-গুণী ও সরদাররা একে গ্রহণ করে নিতো । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলিষ্ঠ যুক্তি সহকারে তাদের আকীদা-বিশ্বাসের ভ্রান্তি এবং তাওহীদ ও আখেরাতের সত্যতা বুঝাবার চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন । কিন্তু তারা হঠকারিতার নিত্য নতুন পথ অবলম্বন করতে কখনোই ক্লান্ত হতো না । এ জিনিসটি রসূলুল্লাহর (সা) জন্য অসহ্য মর্মযাতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এ দুঃখে তিনি চরম মানসিক পীড়ন অনুভব করছিলেন ।
এহেন অবস্থায় এ সূরাটি নাযিল হয় । বক্তব্যের সূচনা এভাবে হয়ঃ তুমি এদের জন্য ভাবতে ভাবতে নিজের প্রাণ শক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছো কেন? এরা কোন নিদর্শন দেখেনি, এটাই এদের ঈমান না আনার কারণ নয় । বরং এর কারণ হচ্ছে, এরা একগুয়ে ও হঠকারী । এরা বুঝালেও বুঝে না । এরা এমন কোন নিদর্শনের প্রত্যাশী, যা জোর পূর্বক এদের মাথা নুইয়ে দেবে । আর এ নিদর্শন যথাসময়ে যখন এসে যাবে তখন তারা নিজেরাই জানতে পারবে, যে কথা তাদেরকে বুঝানো হচ্ছিল তা একেবারেই সঠিক ও ও সত্য ছিল । এ ভূমিকার পর দশ রুকূ’ পর্যন্ত ধারবাহিকভাবে যে বিষয়বস্তুটি বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, সত্য প্রত্যাশীদের জন্য আল্লাহর সর্বত্র নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে । সেগুলো দেখে তারা সত্যকে চিনতে পারে । কিন্তু হঠকারীরা কখনো বিশ্ব-জগতের নিদর্শনাদি এবং নবীদের মু’জিযাসমূহ তথা কোন জিনিস দেখেও ঈমান আনেনি । যতক্ষণ না আল্লাহর আযাব এসে তাদেরকে পাকড়াও করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের গোমরাহীর ওপর অবিচল থেকেছে । এ সম্বন্ধের প্রেক্ষিতে এখানে ইতিহাসের সাতটি জাতির অবস্থা পেশ করা হয়েছে । মক্কার কাফেররা এ সময় যে হঠকারী নীতি অবলম্বন করে চলছিল ইতিহাসের এ সাতটি জাতিও সেকালে সেই একই নীতির আশ্রয় নিয়েছিল । এ ঐতিহাসিক বর্ণনার আওতাধীনে কতিপয় কথা মানস পটে অংকিত করে দেয়া হয়েছে ।
একঃ নিদর্শন দু’ধরনের । এক ধরনের নিদর্শন আল্লাহর যমীনে চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে । সেগুলো দেখে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি নবী যে জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছেন সেটি সত্য হতে পারে কিনা সে সম্পর্কে অনুসন্ধান ও গবেষণা করতে পারে । দ্বিতীয় ধরনের নিদর্শন ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় দেখেছে, নূহের সম্প্রদায় দেখেছে, আদ ও সামূদ দেখেছে, লূতের সম্প্রদায় ও আইকাবাসীরাও দেখেছে । এখন কাফেররা কোন ধরনের নিদর্শন দেখতে চায় এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার ।
দুইঃ সকল যুগে কাফেরদের মনোভাব একই রকম ছিল । তাদের যুক্তি ছিল একই প্রকার । তাদের আপত্তি ছিল একই । ঈমান না আনার জন্য তারা একই বাহানাবাজীর আশ্রয় নিয়েছে । শেষ পর্যন্ত তারা একই পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে । অন্যদিকে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক নবীর শিক্ষা একই ছিল । তাদের চরিত্র ও জীবননীতি একই রঙে রঞ্জিত ছিল । নিজেদের বিরোধীদের মোকাবিলায় তাঁদের যুক্তি-প্রমাণের ধরণ ছিল একই । আর তাঁদের সবার সাথে আল্লাহর রহমতও ছিল একই ধরনের । এ দু’টি আদর্শের উপস্থিতি ইতিহাসের পাতায় রয়েছে । কাফেররা নিজেরাই দেখতে পারে তাদের নিজেদের কোন ধরনের ছবি পাওয়া যায় এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিসত্তায় কোন ধরনের আদর্শের নিদর্শন পাওয়া যায় ।
তৃতীয় যে কথাটির বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সেটি হচ্ছে আল্লাহ একদিকে যেমন অজেয় শক্তি, পরাক্রম ও ক্ষমতার অধিকারী অপরদিকে তেমনি পরম করুণাময়ও । ইতিহাসে একদিকে রয়েছে তাঁর ক্রোধের দৃষ্টান্ত এবং অন্যদিকে রহমতেরও । এখন লোকদের নিজেদেরকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা নিজেদের তাঁর রহমতের যোগ্য বানাবে না ক্রোধের ।
শেষ রুকূ’তে এ আলোচনাটির উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা যদি নিদর্শনই দেখাতে চাও, তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলো যেসব ভয়াবহ নিদর্শন দেখেছিল সেগুলো দেখতে চাও কেন? এ কুরআনকে দেখো । এটি তোমাদের নিজেদের ভাষায় রয়েছে । মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখো । তাঁর সাথীদেরকে দেখো । এটা কি কোন শয়তান বা জিনের বাণী হতে পারে? এ বাণীর উপস্থাপককে কি তোমাদের গণৎকার বলে মনে হচ্ছে? মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদেরকে কি তোমরা কবি ও তাদের সহযোগী ও সমমনারা যেমন হয় তেমনি ধরনের দেখেছো? জিদ ও হঠকারিতার কথা আলাদা । কিন্তু নিজেদের অন্তরের অন্তস্থলে উঁকি দিয়ে দেখো সেখানে কি এর সমর্থন পাওয়া যায়? যদি মনে মনে তোমরা নিজেরাই জানো গণকবৃত্তি ও কাব্যচর্চার সাথে তাঁর দূরতম কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে এই সাথে একথাও জেনে নাও, তোমরা জুলুম করছো, কাজেই জালেমের পরিণামই তোমাদের ভোগ করতে হবে ।
______________
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ طسم﴾
১) তা-সীন-মীম৷
﴿تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ﴾
২) এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত৷
﴿لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ﴾
৩) হে মুহাম্মাদ! এ লোকেরা ঈমান আনছে না বলে তুমি যেন দুঃখে নিজের প্রাণ বিনষ্ট করে দিতে বসেছ৷
﴿إِن نَّشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاءِ آيَةً فَظَلَّتْ أَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِينَ﴾
৪) আমি চাইলে আকাশ থেকে এমন নিদর্শন অবতীর্ণ করতে পারতাম যার ফলে তাদের ঘাড় তার সামনে নত হয়ে যেতো৷
﴿وَمَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ مُحْدَثٍ إِلَّا كَانُوا عَنْهُ مُعْرِضِينَ﴾
৫) তাদের কাছে দয়াময়ের পক্ষ থেকে যে নতুন নসীহতই আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়৷
﴿فَقَدْ كَذَّبُوا فَسَيَأْتِيهِمْ أَنبَاءُ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
৬) এখন যখন তারা মিথ্যা আরোপ করেছে৷ তখন তারা যে জিনিসের প্রতি বিদ্রূপ করে চলেছে, অচিরেই তার প্রকৃত স্বরূপ (বিভিন্ন পদ্ধতিতে) তারা অবগত হবে৷
﴿أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الْأَرْضِ كَمْ أَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ﴾
৭) আর তারা কি কখনো পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি? আমি কত রকমের কত বিপুল পরিমাণ উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ তার মধ্যে সৃষ্টি করেছি?
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
৮) নিশ্চয়ই তার মধ্যে একটি নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মু’মিন নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
৯) আর যথার্থই তোমার রব পরাক্রান্ত এবং অনুগ্রহশীলও৷
﴿وَإِذْ نَادَىٰ رَبُّكَ مُوسَىٰ أَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾
১০) তাদেরকে সে সময়ের কথা শুনাও যখন তোমার রব মূসাকে ডেকে বলেছিলেন, “যালেম সম্প্রদায়ের কাছে যাও-
﴿قَوْمَ فِرْعَوْنَ ۚ أَلَا يَتَّقُونَ﴾
১১) ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কাছে তারা কি ভয় করে না?”
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي أَخَافُ أَن يُكَذِّبُونِ﴾
১২) সে বললো, “হে আমার রব! আমার ভয় হয় তারা আমাকে মিথ্যা বলবে,
﴿وَيَضِيقُ صَدْرِي وَلَا يَنطَلِقُ لِسَانِي فَأَرْسِلْ إِلَىٰ هَارُونَ﴾
১৩) আমার বক্ষ সংকুচিত হচ্ছে এবং আমার জিহ্বা সঞ্চালিত হচ্ছে না৷ আপনি হারুনের প্রতি রিসালাত পাঠান৷
﴿وَلَهُمْ عَلَيَّ ذَنبٌ فَأَخَافُ أَن يَقْتُلُونِ﴾
১৪) আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের একটি অভিযোগও আছে৷ তাই আমার আশংকা হয় তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে৷”
﴿قَالَ كَلَّا ۖ فَاذْهَبَا بِآيَاتِنَا ۖ إِنَّا مَعَكُم مُّسْتَمِعُونَ﴾
১৫) আল্লাহ্ বললেন, “কখ্খনো না, তোমরা দু’জন যাও আমার নিদর্শনগুলো নিয়ে,
﴿فَأْتِيَا فِرْعَوْنَ فَقُولَا إِنَّا رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১৬) ফেরাউনের কাছে যাও এবং তাকে বলো, রাব্বুল আলামীন আমাদের পাঠিয়েছেন,
﴿أَنْ أَرْسِلْ مَعَنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
১৭) যাতে তুমি বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দাও সে জন্য৷”
﴿قَالَ أَلَمْ نُرَبِّكَ فِينَا وَلِيدًا وَلَبِثْتَ فِينَا مِنْ عُمُرِكَ سِنِينَ﴾
১৮) ফেরাউন বললো, “আমরা কি তোমাকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করিনি যখন ছোট্ট শিশুটি ছিলে? বেশ ক’টি বছর আমাদের এখানে কাটিয়েছো,
﴿وَفَعَلْتَ فَعْلَتَكَ الَّتِي فَعَلْتَ وَأَنتَ مِنَ الْكَافِرِينَ﴾
১৯) এবং তারপর তুমি যে কর্মটি করেছ তাতো করেছোই; তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ৷”
﴿قَالَ فَعَلْتُهَا إِذًا وَأَنَا مِنَ الضَّالِّينَ﴾
২০) মূসা জবাব দিল, “সে সময় অজ্ঞতার মধ্যে আমি সে কাজ করেছিলাম৷
﴿فَفَرَرْتُ مِنكُمْ لَمَّا خِفْتُكُمْ فَوَهَبَ لِي رَبِّي حُكْمًا وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُرْسَلِينَ﴾
২১) তারপর তোমাদের ভয়ে আমি পালিয়ে গেলাম৷ এরপর আমার রব আমাকে “হুকম” দান করলেন এবং আমাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন৷
﴿وَتِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا عَلَيَّ أَنْ عَبَّدتَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
২২) আর তোমার অনুগ্রহের কথা যা তুমি আমার প্রতি দেখিয়েছো, তার আসল কথা হচ্ছে এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছিলে৷”
﴿قَالَ فِرْعَوْنُ وَمَا رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾
২৩) ফেরাউন বললো, “রাব্বুল আলামীন আবার কে?
﴿قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ﴾
২৪) মূসা জবাব দিল, “আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রব এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে যা কিছু আছে তাদেরও রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপনকারী হও৷”
﴿قَالَ لِمَنْ حَوْلَهُ أَلَا تَسْتَمِعُونَ﴾
২৫) ফেরাউন তার আশপাশের লোকদের বললো, “তোমরা শুনছো তো!”
﴿قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ﴾
২৬) মূসা বললো, “তোমাদেরও রব এবং তোমাদের বাপ-দাদাদেরও রব যারা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে৷”
﴿قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ الَّذِي أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ لَمَجْنُونٌ﴾
২৭) ফেরাউন (উপস্থিত লোকদের) বললো, “তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এ রসূল সাহেবটি তো দেখছি একেবারেই পাগল৷”
﴿قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ﴾
২৮) মূসা বললো, “পূর্ব ও পশ্চিম এবং যা কিছু তার মাঝখানে আছে সবার রব, যদি তোমরা কিছু বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী হতে৷”
﴿قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَٰهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ﴾
২৯) ফেরাউন বললো, “যদি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে মেনে নাও, তাহলে কারাগারে যারা পচে মরছে তোমাকেও তাদের দলে ভিড়িয়ে দেবো৷”
﴿قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكَ بِشَيْءٍ مُّبِينٍ﴾
৩০) মূসা বললো, “আমি যদি তোমার সামনে একটি সুস্পষ্ট জিনিস আনি তবুও?”
﴿قَالَ فَأْتِ بِهِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
৩১) ফেরাউন বললো, “বেশ তুমি আনো যদি তুমি সত্যবাদী হও৷”
﴿فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُّبِينٌ﴾
৩২) (তার মুখ থেকে একথা বের হতেই) মূসা নিজের লাঠিটি ছুঁড়ে মারলো৷ তৎক্ষনাৎ সেটি হলো একটি সাক্ষাৎ অজগর৷”
﴿وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ﴾
৩৩) তারপর সে নিজের হাত (বগলের ভেতর থেকে) টেনে বের করলো এবং তা সকল প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে চকমক্ করছিল৷
﴿قَالَ لِلْمَلَإِ حَوْلَهُ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ﴾
৩৪) ফেরাউন তার চারপাশে উপস্থিত সরদারদেরকে বললো, “এ ব্যক্তি নিশ্চয়ই একজন দক্ষ যাদুকর৷
﴿يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُم بِسِحْرِهِ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ﴾
৩৫) নিজের যাদুর জোরে সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়৷ এখন বলো তোমরা কী হুকুম দিচ্ছো?”
﴿قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَابْعَثْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ﴾
৩৬) তারা বললো, “তাকে ও তার ভাইকে আটক করো এবং শহরে শহরে হরকরা পাঠাও৷
﴿يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَحَّارٍ عَلِيمٍ﴾
৩৭) তারা প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে তোমার কাছে নিয়ে আসুক৷”
﴿فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِمِيقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ﴾
৩৮) তাই একদিন নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদেরকে একত্র করা হলো৷
﴿وَقِيلَ لِلنَّاسِ هَلْ أَنتُم مُّجْتَمِعُونَ﴾
৩৯) এবং লোকদেরকে বলা হলো, “তোমরাও কি সমাবেশে যাবে?
﴿لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِن كَانُوا هُمُ الْغَالِبِينَ﴾
৪০) হয়তো আমরা যাদুকরদের ধর্মের অনুসরণের উপরই বহাল থাকবো, যদি তারা বিজয়ী হয়৷”
﴿فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالُوا لِفِرْعَوْنَ أَئِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ﴾
৪১) যখন যাদুকররা ময়দানে এলো, তারা ফেরাউনকে বললো, “আমরা কি পুরস্কার পাবো, যদি আমরা বিজয়ী হই?”
﴿قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ إِذًا لَّمِنَ الْمُقَرَّبِينَ﴾
৪২) সে বললো, “হাঁ, আর তোমরা তো সে সময় নিকটবর্তীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে৷”
﴿قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنتُم مُّلْقُونَ﴾
৪৩) মূসা বললো, “তোমাদের যা নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ কর৷”
﴿فَأَلْقَوْا حِبَالَهُمْ وَعِصِيَّهُمْ وَقَالُوا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ إِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُونَ﴾
৪৪) তারা তখনই নিজেদের দড়িদড়া ও লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করলো এবং বললো, “ফেরাউনের ইজ্জতের কসম, আমরাই বিজয়ী হবো৷”
﴿فَأَلْقَىٰ مُوسَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ﴾
৪৫) তারপর মূসা নিজের লাঠিটি নিক্ষেপ করলো৷ অকস্মাত সে তাদের কৃত্রিম কীর্তিগুলো গ্রাস করতে থাকলো৷
﴿فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ﴾
৪৬) তখন সকল যাদুকর স্বতস্ফূর্তভাবে সিজদাবনত হয়ে পড়লো৷
﴿قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৪৭) এবং বলে উঠলো, “মেনে নিলাম আমরা রাব্বুল ‘আলামীনকে………
﴿رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ﴾
৪৮) -মূসা ও হারুনের রবকে৷”
﴿قَالَ آمَنتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ فَلَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ۚ لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৪৯) ফেরাউন বললো, “তোমরা মূসার কথা মেনে নিলে আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই! নিশ্চয়ই এ তোমাদের প্রধান, যে তোমাদের যাদু শিখিয়েছে৷ বেশ, এখনই তোমরা জানবে৷ আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কর্তন করাবো এবং তোমাদের সবাইকে শূলবিদ্ধ করবো৷”
﴿قَالُوا لَا ضَيْرَ ۖ إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ﴾
৫০) তারা বলল, “কোন পরোয়া নেই, আমরা নিজেদের রবের কাছে পৌঁছে যাবো৷
﴿إِنَّا نَطْمَعُ أَن يَغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَا أَن كُنَّا أَوَّلَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
৫১) আর আমরা আশা করি আমাদের রব আমাদের গোনাহ্ মাফ করে দেবেন, কেননা, সবার আগে আমরা ঈমান এনেছি”৷
﴿وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي إِنَّكُم مُّتَّبَعُونَ﴾
৫২) আমি মূসার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এই মর্মেঃ “রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে যাও, তোমাদের পিছু নেয়া হবে৷”
﴿فَأَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ﴾
৫৩) এর ফলে ফেরাউন (সৈন্য একত্র করার জন্য) নগরে নগরে নকীব পাঠালো (এবং বলে পাঠালোঃ)
﴿إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ﴾
৫৪) এরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক,
﴿وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَائِظُونَ﴾
৫৫) এরা আমাদের নারাজ করেছে
﴿وَإِنَّا لَجَمِيعٌ حَاذِرُونَ﴾
৫৬) এবং আমরা একটি দল, সদা-সতর্ক থাকাই আমাদের রীতি”৷
﴿فَأَخْرَجْنَاهُم مِّن جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ﴾
৫৭) এভাবে আমি তাদেরকে বের করে এনেছি তাদের বাগ-বাগীচা, নদী-নির্ঝরিনী,
﴿وَكُنُوزٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ﴾
৫৮) ধন-ভাণ্ডার ও সুরম্য আবাসগৃহসমূহ থেকে৷
﴿كَذَٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
৫৯) এসব ঘটেছে তাদের সাথে আর (অন্যদিকে) আমি বনী ইসরাঈলকে ঐ সব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি৷
﴿فَأَتْبَعُوهُم مُّشْرِقِينَ﴾
৬০) সকাল হতেই তারা এদের পিছু নিয়ে বের হয়ে পড়লো৷
﴿فَلَمَّا تَرَاءَى الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَابُ مُوسَىٰ إِنَّا لَمُدْرَكُونَ﴾
৬১) দু’দল যখন পরস্পরকে দেখতে পেলো তখন মূসার সাথীরা চিৎকার করে উঠলো, “আমরা তো পাকড়াও হয়ে গেলাম৷”
﴿قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ﴾
৬২) মূসা বললো, “কখ্খনো না, আমার সাথে আছেন আমার রব, তিনি নিশ্চয়ই আমাকে পথ দেখাবেন৷”
﴿فَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنِ اضْرِب بِّعَصَاكَ الْبَحْرَ ۖ فَانفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ﴾
৬৩) আমি মূসাকে ওহীর মাধ্যমে হুকুম দিলাম, “মারো তোমার লাঠি সাগরের বুকে৷” সহসাই সাগর দীর্ণ হয়ে গেল এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা হয়ে গেলো এক একটি বিশাল পাহাড়ের মতো৷
﴿وَأَزْلَفْنَا ثَمَّ الْآخَرِينَ﴾
৬৪) এ জায়গায়ই আমি দ্বিতীয় দলটিকেও নিকটে আনলাম৷
﴿وَأَنجَيْنَا مُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُ أَجْمَعِينَ﴾
৬৫) মূসা ও তার সমস্ত লোককে যারা তার সঙ্গে ছিল আমি উদ্ধার করলাম
﴿ثُمَّ أَغْرَقْنَا الْآخَرِينَ﴾
৬৬) এবং অন্যদেরকে ডুবিয়ে দিলাম৷
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
৬৭) এ ঘটনার মধ্যে আছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু এদের অধিকাংশ অমান্যকারী নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
৬৮) আর প্রকৃতপক্ষে তোমাদের রব পরাক্রমশালীও আবার দয়াময়ও৷
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ إِبْرَاهِيمَ﴾
৬৯) আর তাদেরকে ইবরাহীমের কাহিনী শুনিয়ে দাও,
﴿إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ﴾
৭০) যখন সে তার বাপ ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমরা কিসের পূজা করো?”
﴿قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ﴾
৭১) তারা বললো, “আমরা কতিপয় মূর্তির পূজা করি এবং তাদের সেবায় আমরা নিমগ্ন থাকি৷”
﴿قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ﴾
৭২) সে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা যখন তাদেরকে ডাকো তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে?
﴿أَوْ يَنفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ﴾
৭৩) অথবা তোমাদের কি কিছু উপকার বা ক্ষতি করে?”
﴿قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءَنَا كَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ﴾
৭৪) তারা জবাব দিল, “না, বরং আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমনটিই করতে দেখেছি৷”
﴿قَالَ أَفَرَأَيْتُم مَّا كُنتُمْ تَعْبُدُونَ﴾
৭৫) এ কথায় ইবরাহীম বললো, “কখনো কি তোমরা (চোখ মেলে)
﴿أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُونَ﴾
৭৬) সেই জিনিসগুলো দেখেছো যাদের বন্দেগী তোমরা এবং তোমাদের অতীত পূর্বপুরুষেরা করতে অভ্যস্ত?
﴿فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ﴾
৭৭) এরা তো সবাই আমার দুশমন একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া,
﴿الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ﴾
৭৮) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই আমাকে পথ দেখিয়েছেন৷
﴿وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ﴾
৭৯) তিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান
﴿وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ﴾
৮০) এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন৷
﴿وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ﴾
৮১) তিনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন এবং পুনর্বার আমাকে জীবন দান করবেন৷
﴿وَالَّذِي أَطْمَعُ أَن يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ﴾
৮২) তাঁর কাছে আমি আশা করি, প্রতিদান দিবসে তিনি আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন৷”
﴿رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ﴾
৮৩) (এরপর ইবরাহীম দোয়া করলোঃ) “হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে শামিল কর৷
﴿وَاجْعَل لِّي لِسَانَ صِدْقٍ فِي الْآخِرِينَ﴾
৮৪) আর পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আমার সত্যিকার খ্যাতি ছড়িয়ে দিও
﴿وَاجْعَلْنِي مِن وَرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيمِ﴾
৮৫) এবং আমাকে নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো৷
﴿وَاغْفِرْ لِأَبِي إِنَّهُ كَانَ مِنَ الضَّالِّينَ﴾
৮৬) আর আমার বাপকে মাফ করে দিও, নিঃসন্দেহে তিনি পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত ছিলেন
﴿وَلَا تُخْزِنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ﴾
৮৭) এবং সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না যেদিন সবাইকে জীবিত করে উঠানো হবে,
﴿يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ﴾
৮৮) যেদিন অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে লাগবে না,
﴿إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ﴾
৮৯) তবে যে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে৷”
﴿وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ﴾
৯০) –(সেদিন ) জান্নাত মুত্তাকীদের কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে
﴿وَبُرِّزَتِ الْجَحِيمُ لِلْغَاوِينَ﴾
৯১) এবং জাহান্নাম পথভ্রষ্টদের সামনে খুলে দেয়া হবে৷
﴿وَقِيلَ لَهُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَعْبُدُونَ﴾
৯২) আর তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ইবাদাত করতে তারা এখন কোথায়?
﴿مِن دُونِ اللَّهِ هَلْ يَنصُرُونَكُمْ أَوْ يَنتَصِرُونَ﴾
৯৩) তারা কি এখন তোমাদের কিছু সাহায্য করছে অথবা আত্মরক্ষা করতে পারে? ”
﴿فَكُبْكِبُوا فِيهَا هُمْ وَالْغَاوُونَ﴾
৯৪) তারপর সেই উপাস্যদেরকে এবং
﴿وَجُنُودُ إِبْلِيسَ أَجْمَعُونَ﴾
৯৫) এই পথভ্রষ্টদেরকে আর ইবলীসের বাহিনীর সবাইকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে৷
﴿قَالُوا وَهُمْ فِيهَا يَخْتَصِمُونَ﴾
৯৬) সেখানে এরা সবাই পরস্পর ঝগড়া করবে এবং পথভ্রষ্টরা (নিজেদের উপাস্যদেরকে) বলবে,
﴿تَاللَّهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৯৭) “আল্লাহর কসম আমরা তো স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলাম,
﴿إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৯৮) যখন তোমাদের দিচ্ছিলাম রাব্বুল আলামীনের সমকক্ষের মর্যাদা৷
﴿وَمَا أَضَلَّنَا إِلَّا الْمُجْرِمُونَ﴾
৯৯) আর এ অপরাধীরাই আমাদেরকে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করেছে৷
﴿فَمَا لَنَا مِن شَافِعِينَ﴾
১০০) এখন আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই
﴿وَلَا صَدِيقٍ حَمِيمٍ﴾
১০১) এবং কোন অন্তরংগ বন্ধুও নেই৷
﴿فَلَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১০২) হায় যদি আমাদের আবার একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ মিলতো, তাহলে আমরা মুমিন হয়ে যেতাম৷”
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১০৩) নিঃসন্দেহে এর মধ্যে একটি বড় নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু এদের অধিকাংশ মুমিন নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১০৪) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালীও এবং করুণাময়ও৷
﴿كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ الْمُرْسَلِينَ﴾
১০৫) নূহের সম্প্রদায় রাসূলদেরকে মিথ্যুক বললো৷
﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ نُوحٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾
১০৬) স্মরণ কর যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিল, “তোমরা কি ভয় কর না?
﴿إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ﴾
১০৭) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১০৮) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর৷
﴿وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১০৯) একাজে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই৷ আমাকে প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রাব্বুল আলামীনের৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১১০) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (নির্দ্বিধায়) আমার আনুগত্য কর৷”
﴿قَالُوا أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ﴾
১১১) তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?”
﴿قَالَ وَمَا عِلْمِي بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১১২) নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো৷
﴿إِنْ حِسَابُهُمْ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّي ۖ لَوْ تَشْعُرُونَ﴾
১১৩) তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ৷
﴿وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১১৪) হায়! যদি তোমরা একটু সচেতন হতে৷ যে ঈমান আনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়৷
﴿إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ﴾
১১৫) আমি তো মূলত একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷
﴿قَالُوا لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَا نُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ﴾
১১৬) তারা বললো, “হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই বিপর্যস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে৷”
﴿قَالَ رَبِّ إِنَّ قَوْمِي كَذَّبُونِ﴾
১১৭) নূহ দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমার জাতি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে৷
﴿فَافْتَحْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَنَجِّنِي وَمَن مَّعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১১৮) এখন আমার ও তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ফায়সালা করে দাও এবং আমার সাথে যেসব মু’মিন আছে তাদেরকে রক্ষা করো৷”
﴿فَأَنجَيْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ﴾
১১৯) শেষ পর্যন্ত আমি একটি বোঝাই করা নৌযানে তাকে ও তার সাথীদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম,
﴿ثُمَّ أَغْرَقْنَا بَعْدُ الْبَاقِينَ﴾
১২০) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে ডুবিয়ে দিলাম৷
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১২১) নিশ্চিতভাবে এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১২২) আর আসল ব্যপার হচ্ছে, তোমার রব পরাক্রমশালী এবং করুণাময়ও৷
﴿كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ﴾
১২৩) আদ জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾
১২৪) স্মরণ করো যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বলেছিলো, “তোমরা ভয় করছো না ?
﴿إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ﴾
১২৫) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১২৬) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১২৭) আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না৷ আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের৷
﴿أَتَبْنُونَ بِكُلِّ رِيعٍ آيَةً تَعْبَثُونَ﴾
১২৮) তোমাদের এ কী অবস্থা, প্রত্যেক উঁচু জায়গায় অনর্থক একটি ইমারত বানিয়ে ফেলেছো
﴿وَتَتَّخِذُونَ مَصَانِعَ لَعَلَّكُمْ تَخْلُدُونَ﴾
১২৯) এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মান করছো, যেন তোমরা চিরকাল থাকবে?
﴿وَإِذَا بَطَشْتُم بَطَشْتُمْ جَبَّارِينَ﴾
১৩০) আর যখন কারো ওপর হাত ওঠাও প্রবল এক নায়ক হয়ে হাত ওঠাও৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১৩১) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَاتَّقُوا الَّذِي أَمَدَّكُم بِمَا تَعْلَمُونَ﴾
১৩২) তাকে ভয় করো যিনি এমন কিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা জানো৷
﴿أَمَدَّكُم بِأَنْعَامٍ وَبَنِينَ﴾
১৩৩) তোমাদের দিয়েছেন পশু,
﴿وَجَنَّاتٍ وَعُيُونٍ﴾
১৩৪) সন্তান-সন্ততি, উদ্যান ও পানির প্রস্রবনসমূহ৷
﴿إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৩৫) আমি ভয় করছি তোমাদের ওপর একটি বড় দিনের আযাবের৷”
﴿قَالُوا سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَوَعَظْتَ أَمْ لَمْ تَكُن مِّنَ الْوَاعِظِينَ﴾
১৩৬) তারা জবাব দিল, “তুমি উপদেশ দাও বা না দাও, আমাদের জন্য এ সবই সমান৷
﴿إِنْ هَٰذَا إِلَّا خُلُقُ الْأَوَّلِينَ﴾
১৩৭) এ ব্যাপারগুলো তো এমনিই ঘটে চলে আসছে
﴿وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ﴾
১৩৮) এবং আমরা আযাবের শিকার হবো না৷”
﴿فَكَذَّبُوهُ فَأَهْلَكْنَاهُمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৩৯) শেষ পর্যন্ত তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করলো এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম৷ নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে আছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশই মেনে নেয়নি৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১৪০) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব যেমন পরাক্রমশালী তেমন করুণাময়ও৷
﴿كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ﴾
১৪১) সামূদ জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾
১৪২) স্মরণ করো যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বললোঃ “তোমরা কি ভয় করো না?
﴿إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ﴾
১৪৩) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১৪৪) কাজেই তোমার আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১৪৫) এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান প্রত্যাশী নই৷ আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের৷
﴿أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا آمِنِينَ﴾
১৪৬) এখানে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর মাঝখানে কি তোমাদের এমনিই নিশ্চিন্তে থাকতে দেয়া হবে?
﴿فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ﴾
১৪৭) এসব উদ্যান ও প্রস্রবনের মধ্যে?
﴿وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ﴾
১৪৮) এসব শস্য ক্ষেত ও রসালো গুচ্ছ বিশিষ্ট খেজুর বাগানের মধ্যে?
﴿وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ﴾
১৪৯) তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মান করছো৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১৫০) আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ﴾
১৫১) যেসব লাগামহীন লোক পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে
﴿الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ﴾
১৫২) এবং কোন সংস্কার সাধন করে না তাদের আনুগত্য করো না৷
﴿قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ﴾
১৫৩) তারা জবাব দিল, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি৷
﴿مَا أَنتَ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا فَأْتِ بِآيَةٍ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
১৫৪) তুমি আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কি? কোন নিদর্শন আনো, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো৷”
﴿قَالَ هَٰذِهِ نَاقَةٌ لَّهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ﴾
১৫৫) সালেহ বললো, “এ উটনীটি রইলো৷ এর পানি পান করার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট এবং তোমাদের সবার পানি পান করার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট রইলো৷
﴿وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৫৬) একে কখনো পীড়ন করো না, অন্যথায় একটি মহা দিবসের আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে৷”
﴿فَعَقَرُوهَا فَأَصْبَحُوا نَادِمِينَ﴾
১৫৭) তারা তার পায়ের গিঁঠের রগ কেটে দিল এবং শেষে অনুতপ্ত হতে থাকলো৷
﴿فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৫৮) আযাব তাদেরকে গ্রাস করলো৷ নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশই মান্যকারী নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১৫৯) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব হচ্ছেন পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও৷
﴿كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ﴾
১৬০) লূতের জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো
﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾
১৬১) স্মরন করো যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি ভয় করো না?
﴿إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ﴾
১৬২) আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১৬৩) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১৬৪) এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই৷ আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের৷
﴿أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ﴾
১৬৫) তোমরা কি গোটা দুনিয়ার মধ্যে পুরুষদের কাছে যাও
﴿وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ﴾
১৬৬) এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা পরিহার করে থাকো? বরং তোমরা তো সীমা-ই অতিক্রম করে গেছো৷”
﴿قَالُوا لَئِن لَّمْ تَنتَهِ يَا لُوطُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِينَ﴾
১৬৭) তারা বললো, “হে লূত! যদি তুমি এসব কথা থেকে বিরত না হও, তাহলে আমাদের জনপদগুলো থেকে যেসব লোককে বের করে দেয়া হয়েছে তুমিও নির্ঘাত তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে৷”
﴿قَالَ إِنِّي لِعَمَلِكُم مِّنَ الْقَالِينَ﴾
১৬৮) সে বললো, “তোমাদের এসব কৃত কর্মের জন্য যারা দুঃখবোধ করে আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত৷
﴿رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ﴾
১৬৯) হে আমার রব! আমাকে ও আমার পরিবার পরিজন কে এদের কুকর্ম থেকে মুক্তি দাও৷”
﴿فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ﴾
১৭০) শেষে আমি তাকে ও তার সমস্ত পরিবার পরিজনকে রক্ষা করলাম,
﴿إِلَّا عَجُوزًا فِي الْغَابِرِينَ﴾
১৭১) এক বৃদ্ধ ছাড়া, যে পেছনে অবস্থানকারীদের দলভূক্ত ছিল৷
﴿ثُمَّ دَمَّرْنَا الْآخَرِينَ﴾
১৭২) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম
﴿وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا ۖ فَسَاءَ مَطَرُ الْمُنذَرِينَ﴾
১৭৩) এবং তাদের ওপর বর্ষন করলাম একটি বৃষ্টিধারা, যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের ওপর বর্ষিত এ বৃষ্টি ছিল বড়ই নিকৃষ্ট৷
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৭৪) নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই মান্যকারী নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১৭৫) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং করুণাময়ও৷
﴿كَذَّبَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ﴾
১৭৬) আইকাবাসীরা রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
﴿إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ﴾
১৭৭) যখন শো’আইব তাদেরকে বলেছিল, “তোমরা কি ভয় করো না?
﴿إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ﴾
১৭৮) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল৷
﴿فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
১৭৯) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷
﴿وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১৮০) আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান প্রতাশী নই৷ আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের৷
﴿أَوْفُوا الْكَيْلَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُخْسِرِينَ﴾
১৮১) তোমরা মাপ পূর্ণ করে দাও এবং কাউকে কম দিয়ে না৷
﴿وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ﴾
১৮২) সঠিক পাল্লায় ওজন করো
﴿وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ﴾
১৮৩) এবং লোকদেরকে তাদের জিনিস কম দিয়ো না৷ যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে বেড়িয়ো না
﴿وَاتَّقُوا الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالْجِبِلَّةَ الْأَوَّلِينَ﴾
১৮৪) এবং সেই সত্ত্বাকে ভয় করো যিনি তোমাদের ও অতীতের প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছেন৷”
﴿قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ﴾
১৮৫) তারা বললো, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি
﴿وَمَا أَنتَ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَإِن نَّظُنُّكَ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ﴾
১৮৬) এবং তুমি আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও৷ আর আমরা তো তোমাকে একেবারেই মিথ্যুক মনে করি৷
﴿فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَاءِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
১৮৭) যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে আকাশের একটি টুকরো ভেঙ্গে আমাদের ওপর ফেলে দাও৷”
﴿قَالَ رَبِّي أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
১৮৮) শো’আইব বললো, আমার রব জানেন তোমরা যা কিছু করছো৷”
﴿فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৮৯) তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো৷ শেষ পর্যন্ত ছাতার দিনের আযাব তাদের ওপর এসে পড়ল এবং তা ছিল বড়ই ভয়াবহ দিনের আযাব৷
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৯০) নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়৷
﴿وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ﴾
১৯১) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও৷
﴿وَإِنَّهُ لَتَنزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১৯২) এটি রব্বুল আলামীনের নাযিল করা জিনিস৷
﴿نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ﴾
১৯৩) একে নিয়ে আমানতদার রূহ
﴿عَلَىٰ قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنذِرِينَ﴾
১৯৪) অবতরন করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও যারা (আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর সৃষ্টির জন্য) সতর্ককারী হয়,
﴿بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُّبِينٍ﴾
১৯৫) পরিস্কার আরবী ভাষায়৷
﴿وَإِنَّهُ لَفِي زُبُرِ الْأَوَّلِينَ﴾
১৯৬) আর আগের লোকদের কিতাবেও এ কথা আছে৷
﴿أَوَلَمْ يَكُن لَّهُمْ آيَةً أَن يَعْلَمَهُ عُلَمَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
১৯৭) এটা কি এদের (মক্কাবাসীদের) জন্য কোন নিদর্শন নয় যে, বনীইসরাইলে আলেম সমাজ একে জানে?
﴿وَلَوْ نَزَّلْنَاهُ عَلَىٰ بَعْضِ الْأَعْجَمِينَ﴾
১৯৮) (কিন্তু এদের হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমি এতদূর গড়িয়েছে যে) যদি আমি এটা কোন অনারব ব্যক্তির উপর নাযিল করে দিতাম
﴿فَقَرَأَهُ عَلَيْهِم مَّا كَانُوا بِهِ مُؤْمِنِينَ﴾
১৯৯) এবং সে এই (প্রাঞ্জল আরবীয় বাণী) তাদেরকে পড়ে শোনাত তবুও এরা মেনে নিত না৷
﴿كَذَٰلِكَ سَلَكْنَاهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ﴾
২০০) অনুরূপভাবে একে (কথা) আমি অপরাধীদের হৃদয়ে বিদ্ধ করে দিয়েছি৷
﴿لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ﴾
২০১) তারা এর প্রতি ঈমান আনে না যতক্ষন না কঠিন শাস্তি দেখে নেয়৷
﴿فَيَأْتِيَهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
২০২) তারপর যখন তা অসচেতন অবস্থায় তাদের ওপর এসে পড়ে
﴿فَيَقُولُوا هَلْ نَحْنُ مُنظَرُونَ﴾
২০৩) তখন তারা বলে, “এখন আমরা কি অবকাশ পেতে পারি”?
﴿أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُونَ﴾
২০৪) এরা কি আমার আযাব ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছে?
﴿أَفَرَأَيْتَ إِن مَّتَّعْنَاهُمْ سِنِينَ﴾
২০৫) তুমি কি কিছু ভেবে দেখেছো, যদি আমি তাদেরকে বছরের পর বছর ভোগ বিলাসের অবকাশও দিই
﴿ثُمَّ جَاءَهُم مَّا كَانُوا يُوعَدُونَ﴾
২০৬) এবং তারপর আবার সেই একই জিনিস তাদের ওপর এসে পড়ে যায় ভয় তাদেরকে দেখানো হচ্ছে,
﴿مَا أَغْنَىٰ عَنْهُم مَّا كَانُوا يُمَتَّعُونَ﴾
২০৭) তাহলে জীবন যাপনের এ উপকরণগুলো যা তার এ যাবত পেয়ে আসছে এগুলো তাদের কোন কাজে লাগবে না?
﴿وَمَا أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلَّا لَهَا مُنذِرُونَ﴾
২০৮) (দেখো) আমি কখনো কোন জনপদকে তার জন্য উপদেশ
﴿ذِكْرَىٰ وَمَا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾
২০৯) দেয়ার যোগ্য সতর্ককারী না পাঠিয়ে ধ্বংস করিনি এবং আমি জালেম ছিলাম না৷
﴿وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِينُ﴾
২১০) এ (সুস্পষ্ট কিতাবটি) নিয়ে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়নি৷
﴿وَمَا يَنبَغِي لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيعُونَ﴾
২১১) এ কাজটি তাদের শোভাও পায় না৷ এবং তারা এমনটি করতেই পারে না৷
﴿إِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُولُونَ﴾
২১২) তাদের কে তো এর শ্রবন থেকেও দূরে রাখা হয়েছে৷
﴿فَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَتَكُونَ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ﴾
২১৩) কাজেই হে মুহাম্মদ! আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডেকো না, নয়তো তুমিও শাস্তি লাভকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে৷
﴿وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ﴾
২১৪) নিজের নিকটতম আত্নীয়-পরিজনদের ভয় দেখাও
﴿وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
২১৫) এবং মুমিনদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরন করে তাদের সাথে বিনম্র ব্যবহার করো৷
﴿فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ﴾
২১৬) কিন্তু যদি তারা তোমার নাফরমানী করে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, তোমরা যা কিছু করো আমি তা থেকে দায়মুক্ত৷
﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ﴾
২১৭) আর সেই পরাক্রান্ত ও দয়াময়ের উপর নির্ভর করো
﴿الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ﴾
২১৮) যিনি তোমাকে দেখতে থাকেন যখন তুমি ওঠো
﴿وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ﴾
২১৯) এবং সিজ্দাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা ও নড়া-চড়ার প্রতি দৃষ্টি রাখেন৷
﴿إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾
২২০) তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন৷
﴿هَلْ أُنَبِّئُكُمْ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ الشَّيَاطِينُ﴾
২২১) হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার উপর অবতীর্ণ হয়?
﴿تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ﴾
২২২) তারা তো প্রত্যেক জালিয়াত বদকারের উপর অবতীর্ণ হয়৷
﴿يُلْقُونَ السَّمْعَ وَأَكْثَرُهُمْ كَاذِبُونَ﴾
২২৩) শোনা কথা কানে ঢুকিয়ে দেয় এবং এর বেশির ভাগই হয় মিথ্যা৷
﴿وَالشُّعَرَاءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ﴾
২২৪) আর কবিরা! তাদের পেছনে চলে পথভ্রান্ত যারা৷
﴿أَلَمْ تَرَ أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ يَهِيمُونَ﴾
২২৫) তুমি কি দেখ না তারা উপতক্যায় উপত্যকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়
﴿وَأَنَّهُمْ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ﴾
২২৬) এবং এমনসব কথা বলে যা তারা করে না?
﴿إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا ۗ وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ﴾
২২৭) তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করে তারা তাদের প্রতি জুলুম করা হলে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়৷ আর জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের পরিণাম কি!