নামকরণ
সূরার প্রথম বর্ণটিই এর নাম হিসেবে গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা ক্বাফ বর্ণ দিয়ে শুরু হয়েছে ।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
ঠিক কোন সময় এ সূরা নাযিল হয়েছে তা কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় না । তবে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায়, এটি মক্কী যুগের দ্বিতীয় পর্যায়ে নাযিল হয়েছে । মক্কী যুগের দ্বিতীয় পর্যায় নবুওয়াতের তৃতীয় সন থেকে শুরু করে পঞ্চম সন পর্যন্ত বিস্তৃত । আমি সূরা আন’আমের ভূমিকায় এ যুগের বৈশিষ্টসমূহ বর্ণনা করেছি । ঐ সব বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ রেখে বিচার করলে মোটামুটি অনুমান করা যায় যে, সূরাটি নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে নাযিল হয়ে থাকবে । এ সময় কাফেরদের বিরোধিতা বেশ কঠোরতা লাভ করেছিল । কিন্তু তখনো জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়নি ।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যায় যে , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’ঈদের নামাযে এ সূরা পড়তেন ।
উম্মে হিশাম ইবনে হারেসা নাম্নী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিবেশিনী এক মহিলা বর্ণনা করেছেন যে, প্রায়ই আমি নবীর ( সা) মুখ থেকে জুমআর খুতবায় এ সূরাটি শুনতাম এবং শুনতে শুনতেই তা আমার মুখস্ত হয়েছে । অপর কিছু রেওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বেশীর ভাগ ফজরের নামাযেও এ সূরাটি পাঠ করতেন । এ থেকে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় যে, নবীর ( সা) দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা । সে জন্য এর বিষয়বস্তু অধিক সংখ্যক লোকের কাছে পৌছানোর জন্য বারবার চেষ্টা করতেন ।
সূরাটি মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে এর গুরুত্বের কারণ সহজেই উপলব্ধি করা যায় । গোটা সূরার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আখেরাত । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা মুয়াযযমায় দাওয়াতের কাজ শুরু করলে মানুষের কাছে তাঁর যে কথাটি সবচেয়ে বেশী অদ্ভুত মনে হয়েছিল তা হচ্ছে, মৃত্যুর পর পুনরায় মানুষকে জীবিত করে উঠানো হবে এবং তাদেরকে নিজের কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে । লোকজন বলতো, এটা তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার । এরূপ হতে পারে বলে বিবেক-বুদ্ধি বিশ্বাস করে না । আমাদের দেহের প্রতিটি অণু-পরমাণু যখন মাটিতে মিশে বিলীন হয়ে যাবে তখন হাজার হাজার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐসব বিক্ষিপ্ত অংশকে পুনরায় একত্রিত করে আমাদের দেহকে পুনরায় তৈরী করা হবে এবং আমরা জীবিত হয়ে যাব তা কি করে সম্ভব? এর জবাবে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এ ভাষণটি নাযিল হয় । এতে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট বাক্যে একদিকে আখেরাতের সম্ভাব্যতা ও তা সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে প্রমাণাদি পেশ করা হয়েছে । অপরদিকে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা বিস্মিত হও, বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী মনে করো কিংবা মিথ্যা বলে মনে করো তাতে কোন অবস্থায়ই সত্য, পরিবর্তিত হতে পারে না । সত্য তথা অকাট্য ও অটল সত্য হচ্ছে এই যে, তোমাদের দেহের এক একটি অণু-পরমাণু যা মাটিতে বিলীন হয়ে যায় তা কোথায় গিয়েছে এবং কি অবস্থায় কোথায় আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত আছেন । বিক্ষিপ্ত এসব অণু-পরমাণু পুনরায় একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং তোমাদেরকে ইতিপূর্বে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ তা’আলার একটি ইংগিতই যথেষ্ট । অনুরূপভাবে তোমাদের ধারণাও একটি ভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় যে, এখানে তোমাদের লাগামহীন উটের মত ছেড়ে দেয়া হয়েছে , কারো কাছে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে না । প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তা’আলা নিজেও সরাসরি তোমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ সম্পর্কে এমনকি তোমাদের মনের মধ্যে জেগে ওঠা সমস্ত ধারণা ও কল্পনা পর্যন্ত অবহিত আছেন । তাছাড়া তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের প্রত্যেকের সাথে থেকে তোমাদের সমস্ত গতিবিধি রেকর্ড করে সংরক্ষিত করে যাচ্ছে । যেভাবে বৃষ্টির একটি বিন্দু পতিত হওয়ার পর মাটি ফুড়ে উদ্ভিদরাজির অঙ্কুর বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনি নির্দিষ্ট সময় আসা মাত্র তাঁর একটি মাত্র আহবানে তোমরাও ঠিক তেমনি বেরিয়ে আসবে । আজ তোমাদের বিবেক-বুদ্ধির ওপর গাফলতের যে পর্দা পড়ে আছে তোমাদের সামনে থেকে সেদিন তা অপসারিত হবে এবং আজ যা অস্বীকার করছো সেদিন তা নিজের চোখে দেখতে পাবে । তখন তোমরা জানতে পারবে, পৃথিবীতে তোমরা দায়িত্বহীন ছিলে না, বরং নিজ কাজ-কর্মের জন্য দায়ী ছিলে । পুরস্কার ও শাস্তি, আযাব ও সওয়াব এবং জান্নাত ও দোযখ যেসব জিনিসকে আজ তোমরা আজব কল্প কাহিনী বলে মনে করছো সেদিন তা সবই তোমাদের সামনে বাস্তব সত্য হয়ে দেখা দেবে । যে জাহান্নামকে আজ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী বলে মনে করো সত্যের সাথে শত্রুতার অপরাধে সেদিন তোমাদের সেই জাহান্নামেই নিক্ষেপ করা হবে । আর যে জান্নাতের কথা শুনে আজ তোমরা বিস্মিত হচ্ছো মহা দয়ালু আল্লাহকে ভয় করে সঠিক পথে ফিরে আসা লোকেরা সেদিক তোমাদের চোখের সামনে সেই জান্নাতে চলে যাবে ।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ق ۚ وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ﴾
১) ক্বাফ, মহিমান্বিত কল্যাণময় কুরআনের শপথ৷
﴿بَلْ عَجِبُوا أَن جَاءَهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ فَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا شَيْءٌ عَجِيبٌ﴾
২) তারা বরং বিস্মিত হয়েছে এ জন্য যে, তোমাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী এসেছে৷ এরপর অস্বীকারকারীরা বলতে শুরু করলো এটা তো বড় আশ্চর্যজনক কথা,
﴿أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا ۖ ذَٰلِكَ رَجْعٌ بَعِيدٌ﴾
৩) আমরা যখন মরে যাব এবং মাটিতে মিশে যাব (তখন কি আমাদের উঠানো হবে) ? এ প্রত্যাবর্তন তো যুক্তি-বুদ্ধি বিরোধী৷
﴿قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنقُصُ الْأَرْضُ مِنْهُمْ ۖ وَعِندَنَا كِتَابٌ حَفِيظٌ﴾
৪) অথচ মাটি তার দেহের যা কিছু খেয়ে ফেলে তা সবই আমার জানা৷ আমার কাছে একখানা কিতাব আছে৷ তাতে সবকিছু সংরক্ষিত আছে৷
﴿بَلْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ فَهُمْ فِي أَمْرٍ مَّرِيجٍ﴾
৫) এসব লোকেরা তো এমন যে, যখনই তাদের কাছে সত্য এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যা মনে করেছে৷ এ কারণেই তারা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে আছে৷
﴿أَفَلَمْ يَنظُرُوا إِلَى السَّمَاءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ﴾
৬) আচ্ছা, এরা কি কখনো এদের মাথার ওপরের আসনের দিকে তাকায়নি ? আমি কিভাবে তা তৈরী করেছি এবং সজ্জিত করেছি৷ তাতে কোথাও কোন ফাটল নেই।
﴿وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ﴾
৭) ভূপৃষ্ঠকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি, তাতে পাহাড় স্থাপন করেছি এবং তার মধ্যে সব রকম সুদৃশ্য উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন করেছি৷
﴿تَبْصِرَةً وَذِكْرَىٰ لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيبٍ﴾
৮) এসব জিনিসের সবগুলোই দৃষ্টি উন্মুক্তকারী এবং শিক্ষাদানকারী ঐ সব বান্দার জন্য যারা সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করে৷
﴿وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً مُّبَارَكًا فَأَنبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ﴾
৯) আমি আসমান থেকে বরকতপূর্ণ পানি নাযিল করেছি৷ অতপর তা দ্বারা বাগান ও খাদ্য শস্য উৎপন্ন করেছি৷
﴿وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِيدٌ﴾
১০) তাছাড়া থরে থরে সজ্জিত ফলভর্তি ফাঁদি বিশিষ্ট দীর্ঘ সুউচ্চ খেজুর গাছ৷
﴿رِّزْقًا لِّلْعِبَادِ ۖ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ الْخُرُوجُ﴾
১১) এটা হচ্ছে বান্দাহদেরকে রিযিক দেয়ার ব্যবস্থা৷ এ পানি দ্বারা আমি মৃত ভূমিকে জীবন দান করি৷ (মৃতু মানুষের মাটি থেকে) বেরিয়ে আসাও এভাবেই হবে৷
﴿كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَأَصْحَابُ الرَّسِّ وَثَمُودُ﴾
১২) এদের আগে নূহের কওম, আসহাবুর রাস, সামূদ,
﴿وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ وَإِخْوَانُ لُوطٍ﴾
১৩) আদ, ফেরাউন, লূতের ভাই
﴿وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍ ۚ كُلٌّ كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ﴾
১৪) আইকবাসী এবং তুব্বা কওমের লোকেরাও অস্বীকার করছিল৷ প্রত্যেকেই রসূলদের অস্বীকার করেছিল এবং পরিণামে আমার শাস্তির প্রতিশ্রুতি তাদের জন্য কার্যকর হয়েছে৷
﴿أَفَعَيِينَا بِالْخَلْقِ الْأَوَّلِ ۚ بَلْ هُمْ فِي لَبْسٍ مِّنْ خَلْقٍ جَدِيدٍ﴾
১৫) আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করতে অক্ষম ছিলাম ? আসলে নতুন করে সৃষ্টির ব্যাপারে এসব লোক সন্দেহে নিপতিত হয়ে আছে৷
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ﴾
১৬) আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি৷ আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি৷
﴿إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ﴾
১৭) (আবার এ সরাসরি জ্ঞান ছাড়াও) দু’জন লেখক তার ডান ও বাঁ দিকে বসে সবকিছু লিপিবদ্ধ করছে৷
﴿مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾
১৮) এমন কোন শব্দ তার মুখ থেকে বের হয় না যা সংরক্ষিত করার জন্য একজন সদা প্রস্তুত রক্ষক উপস্থিত থাকে না৷
﴿وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ۖ ذَٰلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ﴾
১৯) তারপর দেখো, মৃত্যুর যন্ত্রণা পরম সত্য নিয়ে হাজির হয়েছে৷ এটা সে জিনিস যা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে৷
﴿وَنُفِخَ فِي الصُّورِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْوَعِيدِ﴾
২০) এরপর শিংগায় ফুৎকার দেয়া হলো৷ এটা সেদিন যার ভয় তোমাদের দেখানো হতো৷
﴿وَجَاءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّعَهَا سَائِقٌ وَشَهِيدٌ﴾
২১) প্রত্যেক ব্যক্তি এমন অবস্থায় এসে হাজির হলো যে, তাদের সাথে হাঁকিয়ে নিয়ে আসার মত একজন এবং সাক্ষ দেয়ার মত একজন ছিল৷
﴿لَّقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ﴾
২২) এ ব্যাপারে তুমি অজ্ঞ ছিলে৷ তাই তোমার সামনে যে আবরণ ছিল তা আমি সরিয়ে দিয়েছি৷ তাই আজ তোমার দৃষ্টি অত্যন্ত প্রখর৷
﴿وَقَالَ قَرِينُهُ هَٰذَا مَا لَدَيَّ عَتِيدٌ﴾
২৩) তার সাথী বললোঃ এতে সে হাজির আমার ওপরে যার তদারকীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷
﴿أَلْقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍ﴾
২৪) নির্দেশ দেয়া হলোঃ “জাহান্নামে নিক্ষেপ করো, প্রত্যেক কট্টর কাফেরকে – যে সত্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো,
﴿مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيبٍ﴾
২৫) কল্যাণের প্রতিবন্ধক ও সীমালংঘনকারী ছিল, সন্দেহ সংশয়ে নিপতিত ছিল
﴿الَّذِي جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيدِ﴾
২৬) এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে বসেছিল৷ নিক্ষেপ কর তাকে কঠিন আযাবে৷
﴿قَالَ قَرِينُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَٰكِن كَانَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ﴾
২৭) তার সহগামী আরয করলোঃ হে প্রভু, আমি তাকে বিদ্রোহী করিনি বরং সে নিজেই চরম গোমরাহীতে ডুবে ছিল৷
﴿قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُم بِالْوَعِيدِ﴾
২৮) জবাবে বলা হলোঃ আমার সামনে ঝগড়া করো না৷ আমি আগে তোমাদেরকে মন্দ পরিণতি সম্পকে সাবধান করে দিয়েছিলাম৷
﴿مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ﴾
২৯) আমার কথার কোন রদবদল হয় না৷ আর আমি আমার বান্দাদে জন্য অত্যাচারী নই৷
﴿يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍ﴾
৩০) সেদিনের কথা স্মরণ করো, যখন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবো যে, তোমার পেট কি ভরেছে? সে বলবে, “আরো কিছু আছে না কি?”
﴿وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ﴾
৩১) আর বেহেশতকে আল্লাহ ভীরুদের নিকটতর করা হবে- তা মোটেই দূরে থাকবে না৷
﴿هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ﴾
৩২) তখন বলা হবেঃ এ হচ্ছে সেই জিনিস, যার কথা তোমাদেরকে আগাম জানানো হতো৷ এটা প্রত্যেক প্রত্যাবর্তনকারী ও সংরক্ষণকারীর জন্য,
﴿مَّنْ خَشِيَ الرَّحْمَٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَاءَ بِقَلْبٍ مُّنِيبٍ﴾
৩৩) যে অদেখা দয়াময়কে ভয় করতো, যে অনুরক্ত হৃদয় নিয়ে এসেছে৷
﴿ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ ۖ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُودِ﴾
৩৪) বেহেশতে ঢুকে পড় শান্তির সাথে৷ সেদিন অনন্ত জীবনের দিন হবে৷
﴿لَهُم مَّا يَشَاءُونَ فِيهَا وَلَدَيْنَا مَزِيدٌ﴾
৩৫) সেখানে তাদের জন্য যা চাইবে তাই থাকবে৷ আর আমার কাছে আরো কিছু অতিরিক্ত জিনিসও থাকবে৷
﴿وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هُمْ أَشَدُّ مِنْهُم بَطْشًا فَنَقَّبُوا فِي الْبِلَادِ هَلْ مِن مَّحِيصٍ﴾
৩৬) আমি তাদের আগে আরো বহু জাতিকে ধ্বংস করেছি৷ তারা ওদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধারা ছিল এবং তারা সারা দুনিয়ার দেশগুলো তন্ন তন্ন করে ঘুরেছে৷ অথচ তারা কি কোন আশ্রয়স্থল গেলো?৪৭
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ﴾
৩৭) যাদের হৃদয় আছে কিংবা যারা একাগ্র চিত্তে কথা শোনে তাদের জন্য এ ইতিহাসে অনেক শিক্ষা রয়েছে৷
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ﴾
৩৮) আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সকল জিনিসকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি অথচ তাতে আমি ক্লান্ত হইনি৷
﴿فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ﴾
৩৯) কাজেই তারা যেসব কথা তৈরী করেছে তার ওপর ধৈর্যধারণ করো৷ আর স্বীয় প্রভুর প্রশংসা সহকারে গুণগান করতে থাকো সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের আগে,
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ﴾
৪০) আবার রাতে পুনরায় তার তার গুণগান করো এবং সিজ্দা দেয়ার পরেও করো৷
﴿وَاسْتَمِعْ يَوْمَ يُنَادِ الْمُنَادِ مِن مَّكَانٍ قَرِيبٍ﴾
৪১) আর শোনো যেদিন আহ্বানকারী (প্রত্যেক মানুষের) নিকট স্থান থেকে আহ্বান করবে,
﴿يَوْمَ يَسْمَعُونَ الصَّيْحَةَ بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْخُرُوجِ﴾
৪২) যেদিন সকলে হাশরের কোলাহল ঠিকমত শুনতে পাবে, সেদিনটি হবে কবর থেকে মৃতুদের বেরুবার দিন৷
﴿إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَإِلَيْنَا الْمَصِيرُ﴾
৪৩) আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই৷ এবং আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে সেদিন
﴿يَوْمَ تَشَقَّقُ الْأَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًا ۚ ذَٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيرٌ﴾
৪৪) সেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে, এবং লোকেরা তার ভেতর থেকে বেরিয়ে জোর কদমে ছুটতে থাকবে, এরূপ হাশর সংঘটিত করা আমার নিকট খুবই সহজ৷
﴿نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍ ۖ فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ مَن يَخَافُ وَعِيدِ﴾
৪৫) হে নবী! ওরা যেসব কথা বলে, তা আমি ভালো করেই জানি, বস্তুত তাদের কাছ থেকে বলপ্রয়োগে আনুগত্য আদায় করা তোমার কাজ নয়৷ কাজেই তুমি এ কুরআন দ্বারা আমার হুশিয়ারীকে যারা ডরায়, তাদেরকে তুমি উপদেশ দাও৷