নামকরণঃ
সূরা শুরুর ‘সা-দ’ কে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
নাযিলের হবার সময় কালঃ
যেমন সামনের দিকে বলা হবে , কোন কোন হাদীস অনুযায়ী দেখা যায় , এ সূরাটি এমন এক সময় নাযিল হয়েছিল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা মুআযযমায় প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়া শুরু করেছিলেন এবং এ কারণে কুরাইশ সরদারদের মধ্যে হৈ চৈ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ হিসেবে প্রায় নবুওয়াতের চতুর্থ বছরটি এর নাযিল হবার সময় হিসেবে গণ্য হয়। অন্যান্য হাদীসে একে হযরত উমরের (রা) ঈমান আনার পরের ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আর হযরত উমর হাবশায় হিজরাত অনুষ্ঠিত হবার পর ঈমান আনেন একথা সবার জানা । আর এক ধরনের হাদীস থেকে জানা যায় , আবু তালেবের শেষ রোগগ্রস্ততার সময় যে ঘটনা ঘটে তারই ভিত্তিতে এ সূরা নাযিল হয় । একে যদি সঠিক বলে মেনে নেয়া হয় , তাহলে এর নাযিলের সময় হিসেবে ধরতে হয় নবুওয়াতের দশম বা দ্বাদশ বছরকে।
ঐতিহাসিক পটভূমি
ইমাম আহমাদ , নাসাঈ , তিরমিযী , ইবনে জারীর , ইবনে আবী শাইবাহ , ইবনে আবী হাতেম ও মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ যেসব হাদীস উদ্ধৃত করেছেন সেগুলোর সংক্ষিপ্তসার হচ্ছেঃ যখন আবু তালেব রোগাক্রান্ত হলেন এবং কুরাইশ সরদাররা অনুভব করলো , এবার তাঁর শেষ সময় এসে গেছে , তখন তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করলো , বৃদ্ধের কাছে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলা উচিত। তিনি আমাদের ও তাঁর ভাতিজার ঝগড়া মিটিয়ে দিয়ে গেলে ভালো। নয়তো এমন ও হতে পারে , তাঁর ইন্তিকাল হয়ে যাবে এবং আমরা তাঁর পরে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) সাথে কোন কঠোর ব্যবহার করবো আর আরবের লোকেরা এ বলে আমাদের খোঁটা দেবে যে , যতদিন বৃদ্ধ লোকটি জীবিত ছিলেন ততদিন এরা তাঁর মর্যাদা রক্ষা করে চলেছে , এখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভাতিজার গায়ে হাত দিয়েছে। একথায় সবাই একমত হয় । ফলে প্রায় ২৫ জন কুরাইশ সরদার আবু তালেবের কাছে হাজির হয়। এদের অন্যতম ছিল আবু জেহেল , আবু সুফিয়ান , উমাইয়াহ ইবনে খালফ , আস ইবনে ওয়ায়েল , আসওযাদ ইবনুল মুত্তালিব , উকাবাহ ইবনে আবী মু’আইত, উতবাহ ও শাইবাহ। তারা যথারীতি প্রথমে আবু তালেবের কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযোগ পেশ করে তারপর বলে, আমরা আপনার কাছে একটি ইনসাফপূর্ণ আপোষের কথা পেশ করতে এসেছি। আপনার ভাতিজা আমাদেরকে আমাদের ধর্মের ওপর ছেড়ে দিক আমরাও তাকে তার ধর্মের ছেড়ে দিচ্ছি। সে যে মাবুদের ইবাদাত করতে চায় করুক, তার বিরুদ্ধে আমাদের কোন আপত্তি নেই । কিন্ত সে আমাদের মাবুদদের নিন্দা করবে না এবং আমরা যাতে আমাদের মাবুদদেরকে ত্যাগ করি সে প্রচেষ্টা চালাবে না। এ শর্তের ভিত্তিতে আপনি তার সাথে আমাদের সন্ধি করিয়ে দিন । আবু তালেব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকলেন। তাঁকে বললেন , ভাতিজা ! এই যে তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার কাছে এসেছে। তাদের আকাংখা , তুমি একটি ইনসাফপূর্ণ আপোষের ভিত্তিতে তাদের সাথে একমত হয়ে যাবে। এভাবে তোমার সাথে তাদের বিবাদ খতম হয়ে যাবে। তারপর কুরাইশ সরদাররা তাঁকে যে কথাগুলো বলেছিল সেগুলো তিনি তাঁকে শুনিয়ে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেনঃ “ চাচাজান ! আমি তো তাদের সামনে এমন একটি কালেমা পেশ করছি তাকে যদি তারা মেনে নেয় তাহলে সমগ্র আরব জাতি তাদের হুকুমের অনুগত হয়ে যাবে এবং অনারবরা তাদেরকে কর দিতে থাকবে। ” ১ একথা শুনে প্রথমে তো তারা হতভম্ব হয়ে গেল।
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিটি বিভিন্ন বর্ণনাকারী বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। একটি হাদীসে বলা হয়েছে তিনি বলেছেনঃ
আরবী ——————————————————————————
(অর্থাৎ আমি তাদের সামনে এমন একটি কালেমা পেশ করছি তা পাঠ করলে তারা সমগ্র আরব জয় করে ফেলবে এবং অনারবরা তাদেরকে জিযিয়া দেবে। ) অন্য একটি হাদীসের শব্দাবলী হচ্ছেঃ
আরবী —————————————————————————–
(অর্থাৎ আমি তাদেরকে এমন একটি কালেমা পড়ার ডাক দিচ্ছি যা পাঠ করলে তারা সমগ্র আরব জয় করবে এবং অনারবরা তাদের শাসনাধীন হবে। ) অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে , তিনি আবু তালেবের পরিবর্তে কুরাইশ সরদারদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ
আরবী —————————————————————————
অন্য একটি হাদীসের শব্দাবলী হচ্ছেঃ
আরবী —————————————————————————–
বর্ণনাগুলোর এ শাব্দিক পার্থক্য সত্ত্বেও বক্তব্য সবগুলোর একই। অর্থাৎ নবী করীম (সা) তাদেরকে বলেন , যদি আমি এমন একটি কালেমা তোমাদের সামনে পেশ করি যা গ্রহণ করে তোমরা আরব ও আজমের মালিক হয়ে যাবে তাহলে বলো , একটি বেশী ভালো , না তোমরা ইনসাফের নামে যে কথাটি আমার সামনে পেশ করছো সেটি বেশী ভালো ? তোমরা এ কালেমাটি মেনে নেবে অথবা যে অবস্থার মধ্যে তোমরা এখন পড়ে রয়েছো তার মধ্যেই তোমাদের পড়ে থাকতে দেবো এবং নিজের জায়গায় বসে আমি নিজের আল্লাহর ইবাদাত করতে থাকবো কোনটির মধ্যে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে ?
তারা বুঝতে পারছিল না এমন লাভজনক কথার প্রতিবাদ করবে কি বলে। কাজেই নিজেদের বক্তব্য কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে তারা বলতে শুরু করলো , তুমি একটি কালেমা বলছো কেন আমরা তো এমন দশটি কালেমা বলতে রাজি কিন্তু সেই কালেমাটি কি তাতো একবার বলো। তিনি বললেনঃ লা – ইলা – হা ইল্লাল্লাহু। একথা শুনেই তারা সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ালো এবং সে কথাগুলো বলতে বলতে চলে গেলো যা আল্লাহ এ সূরার শুরুতে উদ্ধৃত করেছেন।
ওপরে যেভাবে উল্লিখিত হয়েছে ইবনে সা’দ তাবকাতে ঠিক তেমনিভাবেই সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী এটা আবু তালেবের মৃত্যুকালীন রোগগ্রস্ততার সময়কার ঘটনা নয় বরং এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখন নবী করীম (সা) তাঁর সাধারণ দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন এবং মক্কারয় অনবরত খবর ছড়িয়ে পড়ছিল যে , আজ অমুক ব্যক্তি মুসলমান হয়ে গেছে এবং কাল অমুক ব্যক্তি। সে সময় কুরাইশ সরদাররা একের পর এক কয়েকটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আবু তালেবের কাছে পৌঁছেছিল। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ প্রচার কাজ থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছিল। এ প্রতিনিধি দলগুলোরই একটির সাথে উল্লিখিত আলাপ আলোচনা হয়।
যামাখশারী , রাযী , নিশাপুরী ও অন্যান্য কতিপয় মুফাসসির বলেন , এ প্রতিনিধি দল আবু তালেবের কাছে গিয়েছিল এমন এক সময় যখন হযরত উমরের (রা) ঈমান আনার ফলে কুরাইশ সরদাররা হকচকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাদীসের কোন কিতাবে এর সমর্থন পাওয়া যায়নি এবং মুফাসসিরগণও তাঁদের উৎসসমূহের বরাত দেননি। তবুও যদি এটা সঠিক হয়ে থাকে তাহলে একথা বোধগম্য। কারণ কাফের কুরাইশরা প্রথমেই এ দৃশ্য দেখে ভীত হয়ে পড়েছিল যে , ইসলামের দাওয়াতের নিয়ে তাদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তি উঠেছেন যিনি নিজের পারিবারিক আভিজাত্য , নিষ্কলংক চরিত্র , বুদ্ধিমত্তা , প্রজ্ঞা ও বিচার বিবেচনার দিক দিয়ে সমস্ত জাতির মধ্যে অদ্বিতীয় । তারপর আবু বকরের মতো লোক তাঁর ডানহাত , যাকে মক্কা ও তার আশপাশের এলাকার প্রত্যেকটি শিশুও একজন অত্যন্ত ভদ্র , বিবেচক , সত্যবাদী ও পবিত্র পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে জানে। এখন যখন তারা দেখলো , উমর ইবনে খাত্তাবের মতো অসম সাহসী ও দৃঢ় সংকল্প ব্যক্তিও এ দু’জনের সাথে মিলিত হয়েছেন তখন নিশ্চিতভাবেই তারা অনুভব করে থাকবে যে , বিপদ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
ওপরে যে মজলিসে উল্লেখ করা হয়েছে তার ওপর মন্তব্য দিয়েই সূরার সূচনা করা হয়েছে। কাফের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যকার আলাপ – আলোচনার ভিত্তিতে আল্লাহ বলেছেন , তাদের অস্বীকারের আসল কারণ ইসলামী দাওয়াতের কোন ক্রুতি নয় বরং এর আসল কারণ হচ্ছে , তাদের আত্মম্ভরিতা , হিংসা ও একগুঁয়েমীর ওপর অবিচল থাকা। নিজেদের জ্ঞাতি বেরাদরির এক ব্যক্তিকে আল্লাহর নবী বলে মেনে নিয়ে তাঁর আনুগত্য করতে তারা প্রস্তুত নয়। তাদের পূর্বপুরুষদেরকে তারা যেমন জাহেলী ধ্যান – ধারণায় বিশ্বাসী পেয়েছে ঠিক তেমনি ধারণা কল্পনার ওপর তারা নিজেরাও অবিচল থাকতে চায় আর যখন এ জাহেলিয়াতের আবরণ ছিন্ন করে এক ব্যক্তি তাদের সামনে আসল সত্য উপস্থাপন করেন তখন তারা উৎকর্ণ হয় এবং তাঁর কথাকে অদ্ভূত , অভিনব ও অসম্ভব গণ্য করে । তাদের মতে , তাওহীদ ও আখেরাতের ধারণা কেবল যে , অগ্রহণযোগ্য তাই নয় বরং এটা এমন একটা ধারণা যা নিয়ে কেবল ঠাট্টা তামাশাই করা যেতে পারে।
এরপর আল্লাহ সূরার শুরুর দিকে এবং শেষ বাক্যগুলোতেও কাফেরদেরকে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন যে , আজ তোমরা যে ব্যক্তিকে বিদ্রূপ করছো এবং যার নেতৃত্ব গ্রহণ করতে জোরালো অস্বীকৃতি জানাচ্ছো , খুব শিগগির সে – ই বিজয়ী হবে এবং সে সময়ও দূরে নয় যখন যে মক্কা শহরে তোমরা তাঁকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছো , এ শহরেই তোমরা তাঁর সামনে অবনত মস্তক হবে।
এরপর একের পর এক ৯ জন পয়গম্বরের কথা বলা হয়েছে । এঁদের মধ্যে হযরত দাউদ (আ) ও হযরত সুলাইমানের (আ) কাহিনী বেশী বিস্তারিত । এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ শ্রোতাদেরকে একথা হৃদয়ংগম করিয়েছেন যে , ইনসাফের আইন পুরোপুরি ব্যক্তি নিরপেক্ষ । মানুষের সঠিক মনোভাব ও কর্মনীতিই তার কাছে গ্রহণীয় । অন্যায় কথা , যেই বলুক না কেন , তিনি তাকে পাকড়াও করেন। ভুলের ওপর যারা অবিচল থাকার চেষ্টা করে না বরং জানার সাথে সাথেই তাওবা করে এবং দুনিয়ায় আখেরাতের জবাবদিহির কথা মনে রেখে জীবন যাপন করে তারাই তার কাছে পছন্দনীয়।
এরপর অনুগত ও বিদ্রোহী বান্দারা আখেরাতের জীবনে যে পরিণামের সম্মুখীন হবে তার চিত্র অংকন করা হয়েছে এবং এ প্রসংগে কাফেরদেরকে বিশেষ করে দু’টি কথা বলা হয়েছে। এক , আজ যেসব সরদার ও ধর্মীয় নেতাদের পেছনে মূর্খ লোকেরা অন্ধের মতো ভ্রষ্টতার দিকে ছুটে চলছে আগামীতে তারাই জাহান্নামের পৌঁছে যাবে তাদের অনুসারীদের আগে এবং তারা উভয়দল পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে। দুই , আজ যেসব মু’মিনকে এরা লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত মনে করছে আগামীতে এরা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখবে জাহান্নামে কোথাও তাদের নাম নিশানাও নেই এবং এরা নিজেরাই তার আযাবে পাকড়াও হয়েছে।
সবশেষে আদম (আ) ও ইবলিসের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফের কুরাইশদেরকে একথা বলা যে , মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে নত হবার পথে যে অহংকার তোমাদের বাধা দিচ্ছে সে একই অহংকার আদমের সামনে নত হতে ইবলিসকে বাধা দিয়েছিল। আল্লাহ আদমকে যে মর্যাদা দিয়েছিলেন ইবলিস তাতে ঈর্ষান্বিত হয়েছিল এবং আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে লানতের ভাগী হয়েছিল। অনুরূপভাবে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তাতে তোমাদের হিংসা হচ্ছে এবং আল্লাহ যাঁকে রসূল নিযুক্ত করেছেন তাঁর আনুগত্য করতে প্রস্তুত হচ্ছো না। তাই ইবলিসের যে পরিণতি হবে সে একই পরিণতি হবে তোমাদেরও ।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ص ۚ وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ﴾
১) সা-দ৷ উপদেশপূর্ণ কুরআনের পপথ৷
﴿بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ﴾
২) বরং এরাই, যারা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, প্রচণ্ড অহংকার ও জিদে লিপ্ত হয়েছে ৷
﴿كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ فَنَادَوا وَّلَاتَ حِينَ مَنَاصٍ﴾
৩) এদের পূর্বে আমি এমনি আরো কত জাতিকে ধ্বংস করছি (এবং যখন তাদের সর্বনাশ এসে গেছে৷ তারা চিৎকার করে উঠেছে, কিন্তু সেটি রক্ষা পাওয়ার সময় নয়৷
﴿وَعَجِبُوا أَن جَاءَهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ ۖ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ﴾
৪) এরা একথা শুনে বড়ই অবাক হয়েছে যে, এদের নিজেদের মধ্য থেকেই একজন ভীতি প্রদর্শনকারী, এসে গেছে৷ অস্বীকারকারীরা বলতে থাকে, “এ হচ্ছে যাদুকর, বড়ই মিথ্যুক,
﴿أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ﴾
৫) সকল খোদার বদলে সেকি মাত্র একজনকেই খোদা বানিয়ে নিয়েছে ? এতো বড় বিস্ময়কর কথা!
﴿وَانطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَىٰ آلِهَتِكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ﴾
৬) আর জাতর সরদাররা একথা বলতে বলতে বের হয়ে গেলো, “চলো, অবিচল থাকো নিজেদের উপাস্যদের উপাসনায়৷ একথা তো ভিন্নতর উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে
﴿مَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَٰذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ﴾
৭) নিকট অতীতের মিল্লাতগুলোর মধ্য থেকে কারো কাছ থেকে তো আমরা একথা শুনিনি৷ এটি একটি মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছুই নয়৷
﴿أَأُنزِلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ مِن بَيْنِنَا ۚ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِّن ذِكْرِي ۖ بَل لَّمَّا يَذُوقُوا عَذَابِ﴾
৮) আমাদের মধ্যে কি মাত্র এ এক ব্যক্তিই থেকে গিয়েছিল যার কাছে আল্লাহর যিক্র নাযিল করা হয়েছে ?”আসল কথা হচ্ছে, এরা আমার যিক্র-এর ব্যাপারে সন্দেহ করছে আমার আযাবের স্বাদ পায়নি বলেই এরা এসব করছে৷
﴿أَمْ عِندَهُمْ خَزَائِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ الْعَزِيزِ الْوَهَّابِ﴾
৯) তোমার মহানদাতা ও পরাক্রমশালী পরওয়ারদিগারের রহমতের ভাণ্ডার কি এদের আয়ত্বাধীনে আছে ?
﴿أَمْ لَهُم مُّلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ فَلْيَرْتَقُوا فِي الْأَسْبَابِ﴾
১০) এরা কি আসমান-যমীন এবং তাদের মাঝখানের সবকিছুর মালিক ? বেশ, তাহলে এরা কার্যকারণ জগতের উচ্চতম শিখরসমূহে আরোহণ করে দেখুক৷
﴿جُندٌ مَّا هُنَالِكَ مَهْزُومٌ مِّنَ الْأَحْزَابِ﴾
১১) বহুদলের মধ্য থেকে এতো ছোট্ট একটি দল, এখানেই এটি পরাজিত হবে৷
﴿كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ ذُو الْأَوْتَادِ﴾
১২) এরপূর্বে নূহের সম্প্রদায়,
﴿وَثَمُودُ وَقَوْمُ لُوطٍ وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ ۚ أُولَٰئِكَ الْأَحْزَابُ﴾
১৩) আদ, কীলকধারী ফেরাউন, সামূদ, লূতের সম্প্রদায় ও আইকাবাসীরা মিথ্যা আরোপ করেছিল৷ তারা ছিল বিরাট দল৷
﴿إِن كُلٌّ إِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ﴾
১৪) তাদের প্রত্যেকেই রসূলগণকে অস্বীকার করেছে৷ ফলে তাদের প্রত্যেকের ওপর আমার শাস্তির ফায়সালা কার্যকর হয়েই গেছে৷
﴿وَمَا يَنظُرُ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً مَّا لَهَا مِن فَوَاقٍ﴾
১৫) এরাও শুধু একটি বিষ্ফোরণের অপেক্ষায় আছে, যার পর আর দ্বিতীয় কোন বিষ্ফোরণ হবে না৷
﴿وَقَالُوا رَبَّنَا عَجِّل لَّنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ﴾
১৬) আর এরা বলে, হে আমাদের রব! হিসেবের দিনের আগেই আমাদের অংশ দ্রুত আমাদের দিয়ে দাও৷
﴿اصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
১৭) হে নবী! এরা যে কথা বলে তার ওপর সবর করো এবং এদের সামনে আমার বান্দা দাউদের কাহিনী বর্ণনা করো, যে ছিল বিরাট শক্তিধর, প্রত্যেকটি ব্যাপারে ছিল আল্লাহ অভিমুখী৷
﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾
১৮) পর্বতমালাকে আমি বিজিত করে রেখেছিলাম তার সাথে, ফলে সকাল সাঁঝে তারা তার সাথে আমার গুণগান, পবিত্রতা ও মহিমা প্রচার করতো৷
﴿وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً ۖ كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ﴾
১৯) পাখপাখারী সমবেত হতো এবং সবাই তার তাসবীহ অভিমুখী হয়ে যেতো৷
﴿وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ﴾
২০) আমি মজবুত করে দিয়েছিলাম তার সালতানাত, তাকে দান করছিলাম হিকমত এবং যোগ্যতা দিয়েছিলাম ফায়সালাকারী কথা বলার৷
﴿وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ﴾
২১) তারপর তোমার কাছে কি পৌঁছছে মামলাকারীদের খবর, যারা দেওয়াল টপকে তার মহলে পৌঁছে গিয়েছিল ?
﴿إِذْ دَخَلُوا عَلَىٰ دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ خَصْمَانِ بَغَىٰ بَعْضُنَا عَلَىٰ بَعْضٍ فَاحْكُم بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَىٰ سَوَاءِ الصِّرَاطِ﴾
২২) যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছুলো, তাদেরকে দেখে সে ঘাবড়ে গেলো তারা বললো, “ভয় পাবেন না, আমরা মামলার দুইপক্ষ৷ আমাদের একপক্ষ অন্য পক্ষের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে৷ আপনি আমাদের মধ্যে যথাযথ সত্য সহকারে ফায়সালা করে দিন, বেইনসাফী করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন৷
﴿إِنَّ هَٰذَا أَخِي لَهُ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيهَا وَعَزَّنِي فِي الْخِطَابِ﴾
২৩) এ হচ্ছে আমার ভাই, এর আছে নিরানব্বইটি দুম্বী এবং আমার মাত্র একটি৷ সে আমাকে বললো, এ একটি দুম্বীও আমাকে দিয়ে দাও এবং কথাবার্তায় সে আমাকে দাবিয়ে নিল৷”
﴿قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَىٰ نِعَاجِهِ ۖ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَّا هُمْ ۗ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ ۩﴾
২৪) দাউদ জবাব দিল, “এ ব্যক্তি নিজের দুম্বীর সাথে তোমার দুম্বী যুক্ত করার দাবী করে অবশ্যই তোমার প্রতি জুলুম করেছে৷ আর আসল ব্যাপার হচ্ছে, মিলেমিশে একসাথে বসবাসকারীরা অনেক সময় একে অন্যের প্রতি বাড়াবাড়ি করে থাকে, তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে একমাত্র তারাই এতে লিপ্ত হয় না এবং এ ধরনের লোক অতি অল্প৷” (একথা বলতে বলতেই) দাউদ বুঝতে পারলো, এ তো আমি আসলে তাকে পরীক্ষা করেছি, কাজেই সে নিজের রবের কাছে ক্ষমা চাইলো, সিজদানত হলো এবং তার দিকে রুজু করলো৷
﴿فَغَفَرْنَا لَهُ ذَٰلِكَ ۖ وَإِنَّ لَهُ عِندَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ﴾
২৫) তখন আমি তার ত্রুটি ক্ষমা করে দিলাম এবং নিশ্চয়ই আমার কাছে তার জন্য রয়েছে নৈকট্যের মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান৷
﴿يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ﴾
২৬) (আমি তাকে বললাম) “ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্য সহকারে শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করো এবং প্রবৃত্তির কামনার অনুসরণ করো না, কারণ তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপরথগামী করবে৷ যারা আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী হয় অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি, যেহেতু তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে৷”
﴿وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًا ۚ ذَٰلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ﴾
২৭) আমি তো আকাশ ও পৃথিবীকে এবং তাদের মাঝখানে যে জগত রয়েছে তাকে অনর্থক সৃষ্টি করিনি৷ এতো যারা কুফরী করেছে তাদের ধারণা আর এ ধরনের কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুনে ধ্বংস হওয়া৷
﴿أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ﴾
২৮) যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আর যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাদেরকে আমি কি সমান করে দেবো ? মুত্তাকীদেরকে কি আমি দুষ্কৃতকারীদের মতো করে দেবো?
﴿كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
২৯) এটি একটি অত্যন্ত বরকতপূর্ন কিতাব, যা (হে মুহাম্মদ!) আমি তোমার প্রতি নাযল করেছি, যাতে এরা তার আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞানী ও চিন্তাশীশরা তা থেকে শিক্ষা নেয়৷
﴿وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
৩০) আর দাউদকে আমি সুলাইমন (রূপ) সন্তান দিয়েছি, সর্বোত্তম বান্দা, বিপুলভাবে নিজের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী৷
﴿إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ﴾
৩১) উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সে সময় যখন অপরাহ্নে তার সামনে খুব পরিপাটি করে সাজানো দ্রুতগতি সম্পন্ন ঘোড়া পেশ করা হলো৷
﴿فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ﴾
৩২) তখন সে বললো, “আমি এ সম্পদ-প্রীতি অবলম্বন করেছি আমার রবের স্মরণের কারণে,” এমনকি যখন সে ঘোড়াগুলো দৃষ্টি আগোচরে চলে গেলো৷
﴿رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ﴾
৩৩) তখন (সে হুকুম দিল) তাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো তারপর তাদের পায়ের গোছায় ও ঘাড়ে হাত বুলাতে লাগলো৷
﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَأَلْقَيْنَا عَلَىٰ كُرْسِيِّهِ جَسَدًا ثُمَّ أَنَابَ﴾
৩৪) আর (দেখো) সুলাইমানকেও আমি পরীক্ষায় ফেলেছি এবং তার আসনে নিক্ষেপ করেছি একটি শরীর৷ তারপর সে রুজু করলো৷
﴿قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَّا يَنبَغِي لِأَحَدٍ مِّن بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ﴾
৩৫) এবং বললো, হে আমার রব! আমাকে মাফ করে দাও এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করো যা আমার পরে আর কারো জন্য শোভন হবে না; নিসন্দেহে তুমিই আসল দাতা৷”
﴿فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيحَ تَجْرِي بِأَمْرِهِ رُخَاءً حَيْثُ أَصَابَ﴾
৩৬) তখন আমি বাতাসকে তার জন্য অনুগত করে দিলাম, যা তার হুকুমে যেদিকে সে চাইতো মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত হতো৷
﴿وَالشَّيَاطِينَ كُلَّ بَنَّاءٍ وَغَوَّاصٍ﴾
৩৭) আর শয়তানদেরকে বিজিত করে দিয়েছি, সব ধরনের গৃহনির্মাণ কারিগর ও ডবুরী
﴿وَآخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ﴾
৩৮) এবং অন্য যারা ছিল শৃংখলিত৷
﴿هَٰذَا عَطَاؤُنَا فَامْنُنْ أَوْ أَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
৩৯) (আমি তাকে বললাম) “এ আমার দান, তোমাকে ইখিয়ার দেয়া হচ্ছে, যাকে চাও তাকে দাও এবং যাকে চাও তাকে দেয়া থেকে বিরত থাকে, কোন হিসেবে নেই৷”
﴿وَإِنَّ لَهُ عِندَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ﴾
৪০) অবশ্যই তার জন্য আমার কাছে রয়েছে নৈকট্যের মর্যাদা ও শুভ পরিণাম৷
﴿وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ﴾
৪১) আর স্মরণ করো আমার বান্দা আইয়ূবের কথা যখন সে তার রবকে ডাকলো এই বলে যে, শয়তান আমাকে কঠিন যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷
﴿ارْكُضْ بِرِجْلِكَ ۖ هَٰذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ﴾
৪২) (আমি তাকে হুকুম দিলাম) তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত করো, এ হচ্ছে ঠাণ্ডা পানি গোসল করার জন্য এবং পান করার জন্য৷
﴿وَوَهَبْنَا لَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
৪৩) আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার পরিবার পরিজন এবং সেই সাথে তাদের মতো আরো, নিজের পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধি ও চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষণীয় হিসেবে৷
﴿وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِب بِّهِ وَلَا تَحْنَثْ ۗ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًا ۚ نِّعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
৪৪) (আর আমি তাকে বললাম) এক আমি ঝাড়- নাও এবং তা দিয়ে আঘাত করো এবং নিজের কসম ভংগ করো না৷ আমি তাকে সবরকারী পেয়েছি, উত্তম বান্দা ছিল সে, নিজের রবের অভিমুখী৷
﴿وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ﴾
৪৫) আর আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা স্মরণ করো৷ তারা ছিল বড়ই কর্মশক্তির অধিকারী ও বিচক্ষণ
﴿إِنَّا أَخْلَصْنَاهُم بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ﴾
৪৬) আমি একটি নির্ভেজাল গুণের ভিত্তিতে তাদেরকে নির্বাচিত করেছিলাম এবং তা ছিল পরলোকের স্মরণ৷
﴿وَإِنَّهُمْ عِندَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْأَخْيَارِ﴾
৪৭) নিশ্চিতভাবে আমার কাছে তারা বিশিষ্ট সৎলোক হিসেবে গণ্য৷
﴿وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ﴾
৪৮) আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা’ ও যুল কিফ্ল-এর কথা স্মরণ করা৷ এরা সবাই সৎলোকদের অন্তরভূক্ত ছিল৷
﴿هَٰذَا ذِكْرٌ ۚ وَإِنَّ لِلْمُتَّقِينَ لَحُسْنَ مَآبٍ﴾
৪৯) এ ছিল একটি স্মরণ৷ (এখন শোনো) মুত্তাকীদের জন্য নিশ্চিতভাবেই রয়েছে উত্তম আবাস্ত
﴿جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْأَبْوَابُ﴾
৫০) চিরন্তন জান্নাত, যার দরোজাগুলো খোলা থাকবে তাদের জন্য৷
﴿مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ﴾
৫১) সেখানে তারা বসে থাকবে হেলান দিয়ে, বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়ের ফরমাশ করতে থাকবে৷
﴿وَعِندَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ﴾
৫২) এবং তাদের কাছে থাকবে লজ্জাবতী কম বয়সী স্ত্রীরা৷
﴿هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ﴾
৫৩) এসব এমন জিনিস যেগুলো হিসেবের দিন দেবার জন্য তোমাদের কাছে অংগীকার করা হচ্ছে৷
﴿إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِن نَّفَادٍ﴾
৫৪) এ হচ্ছে আমার রিযিক, যা কখনো শেষ হবে না৷
﴿هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ﴾
৫৫) এতো হচ্ছে মুত্তাকীদের পরিণাম আর বিদ্রোহীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম আবাস
﴿جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
৫৬) জাহান্নাম, যেখানে তারা দগ্ধীভূত হবে, সেটি বড়ই খারাপ আবাস৷
﴿هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ﴾
৫৭) এ হচ্ছে তাদের জন্য, কাজেই তারা স্বাদ আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানির, পুঁজের
﴿وَآخَرُ مِن شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ﴾
৫৮) ও এ ধরনের অন্যান্য তিক্ততার৷
﴿هَٰذَا فَوْجٌ مُّقْتَحِمٌ مَّعَكُمْ ۖ لَا مَرْحَبًا بِهِمْ ۚ إِنَّهُمْ صَالُو النَّارِ﴾
৫৯) (নিজেদের অনুসারীদের জাহান্নামের দিকে আসতে দেখে তারা পরস্পর বলাবলি করবে) “এ একটি বাহিনী তোমাদের কাছে ঢুকে চলে আসছে, এদের জন্য কোন স্বাগত সম্ভাষণ নেই, এরা আগুনে ঝলসিত হবে৷”
﴿قَالُوا بَلْ أَنتُمْ لَا مَرْحَبًا بِكُمْ ۖ أَنتُمْ قَدَّمْتُمُوهُ لَنَا ۖ فَبِئْسَ الْقَرَارُ﴾
৬০) তারা তাদেরকে জবাব দেবে, “না, বরং তোমরাই ঝলসিত হচ্ছো, কোন অভিনন্দন নেই তোমাদের জন্য তোমরাই তো আমাদের পূর্বে এ পরিণাম এনেছো, কেমন নিকৃষ্ট এ আবাস!”
﴿قَالُوا رَبَّنَا مَن قَدَّمَ لَنَا هَٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِي النَّارِ﴾
৬১) তারপর তারা বলবে, “হে আমাদের রব! যে ব্যক্তি আমাদের এ পরিণতিতে পৌঁছুবার ব্যবস্থা করেছে তাকে দোজখে দ্বিগুণ শাস্তি দাও৷”
﴿وَقَالُوا مَا لَنَا لَا نَرَىٰ رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُم مِّنَ الْأَشْرَارِ﴾
৬২) আর তারা পরস্পর বলাবলি করবে, কি ব্যাপার, আমরা তাদেরকে কোথাও দেখছি না, যাদেরকে আমরা দুনিয়ায় খারাপ মনে করতাম?
﴿أَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا أَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْأَبْصَارُ﴾
৬৩) আমরা কি অযথা তাদেরকে বিদ্রূপের পাত্র বানিয়ে নিয়েছিলাম অথবা তারা কোথাও দৃষ্টি অগোচরে আছে?”
﴿إِنَّ ذَٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ أَهْلِ النَّارِ﴾
৬৪) অবশ্যই একথা সত্য, দোজখবাসীদের মধ্যে এসব বিবাদ হবে৷
﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنذِرٌ ۖ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
৬৫) হে নবী! এদেরকে বলো, “আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র৷ আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই৷ তিনি একক, সবার ওপর আধিপত্যশীল৷
﴿رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ﴾
৬৬) আকাশ ও পৃথিবীর মালিক এবং এ দু’য়ের মধ্যে অবস্থানকারী সমস্ত জিনিসের মালিক, পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল৷”
﴿قُلْ هُوَ نَبَأٌ عَظِيمٌ﴾
৬৭) এদেরকে বলো, “এটি একটি মহাসংবাদ
﴿أَنتُمْ عَنْهُ مُعْرِضُونَ﴾
৬৮) যা শুনে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও৷”
﴿مَا كَانَ لِيَ مِنْ عِلْمٍ بِالْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ إِذْ يَخْتَصِمُونَ﴾
৬৯) (এদেরকে বলো) “উর্ধলোকে যখন বিতর্ক হচ্ছিল সে সময়ের কোন জ্ঞান আমার ছিল না৷
﴿إِن يُوحَىٰ إِلَيَّ إِلَّا أَنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ﴾
৭০) আমাকে তো অহীর মাধ্যমে একথাগুলো এ জন্য জানিয়ে দেয়া হয় যে আমি সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷”
﴿إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ﴾
৭১) যখন তোমার রব ফেরশ্তাদেরকে বললো, “আমি মাটি দিয়ে একটি মানুষ তৈরি করবো৷
﴿فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ﴾
৭২) তারপর যখন অমিতাকে পুরোপুরি তৈরি করে ফেলবো এবং তার মধ্যে নিজের প্রাণ ফুঁকে দেবো৷ তখন তোমরা তার সামনে সিজদানত হয়ে যেয়ো৷”
﴿فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ﴾
৭৩) এ হুকুম অনুযায়ী ফেরেশ্তারা সবাই সিজদানত হয়ে গেলো,
﴿إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ﴾
৭৪) কিন্তু ইবলিস নিজে শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং সে কাফেরদের অন্তরভুক্ত হয়ে গেলো৷
﴿قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ﴾
৭৫) রব বললেন, “ হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?”
﴿قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ﴾
৭৬) সে জবাব দিল, “আমি তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে এবং তাকে মাটি থেকে৷”
﴿قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ﴾
৭৭) বললেন, “ঠিক আছে, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, তুমি বিতাড়িত
﴿وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৭৮) এবং প্রতিদান দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লানত৷”
﴿قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
৭৯) সে বললো, “ হে আমার রব! একথাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এদেরকে যখন পুনরায় উঠানো হবে সে সময় পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও৷”
﴿قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ﴾
৮০) বললেন, ঠিক আছে, তোমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হলো
﴿إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ﴾
৮১) যার সময় আমি জানি৷”
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৮২) সে বললো, “তোমার ইজ্জতের কসম, আমি এদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবোই,
﴿إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴾
৮৩) তবে একমাত্র যাদেরকে তুমি একনিষ্ঠ করে নিয়েছো তাদেরকে ছাড়া৷” বললেন,
﴿قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ﴾
৮৪) ৮৪. “তাহলে এটিই সত্য এবং আমি সত্যই বলে থাকি যে,
﴿لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكَ وَمِمَّن تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৮৫) আমি তোমাকে এবং এসব লোকদের মধ্য থেকে যারা তোমার আনুগত্য করবে তাদের বাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবো৷”
﴿قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ﴾
৮৬) (হে নবী!) এদেরকে বলো, আমি এ প্রচার কাজের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইছি না এবং আমি বানোয়াট লোকদের একজনও নই৷
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ﴾
৮৭) এ তো একটি উপদেশ সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য
﴿وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينٍ﴾
৮৮) এবং সামান্য সময় অতিবাহিত হবার পরই এ সম্পর্কে তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে৷