শুক্রবার, মার্চ 29
Shadow

সূরা আল আম্বিয়া (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু)

‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’। লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথেঃ


নামকরণ

কোন বিশেষ আয়াত থেকে এ সূরার নাম গৃহীত হয়নি। এর মধ্যে যেহেতু ধারাবাহিকভাবে বহু নবীর কথা আলোচিত হয়েছে তাই এর নাম রাখা হয়েছে “আল আম্বিয়া”।

এটাও সূরার বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিরোনাম নয় বরং নিছক সূরা চিহ্নিত করার একটি আলামত মাত্র।

নাযিলের সময়-কাল

বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী উভয়ের দৃষ্টিতেই মনে হয় এর নাযিলের সময়-কাল ছিল মক্কী জীবনের মাঝামাঝি অর্থাৎ আমাদের বিভক্তিকরণের দৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের তৃতীয় ভাগে। শেষ ভাগের সূরাগুলোর মধ্যে যে বৈশিষ্ট পাওয়া যায় এর পটভূমিতে তা ফুটে ওঠে না।

বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরাইশ সরদারদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলছিল এ সূরায় তা আলোচিত হয়েছে। তারা নবী করীমের (সা) রিসালাতের দাবী এবং তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসের দাওয়াতের বিরুদ্ধে যেসব সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি উত্থাপন করতো তার জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তার মোকাবিলায় যেসব কৌশল অবলম্বন করা হতো সেগুলোর বিরুদ্ধে হুকমি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাদের অশুভ ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা যে ধরনের গাফলতি ও ঔদ্ধত্যের মনোভাব নিয়ে তার দাওয়াতকে আগ্রাহ্য করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সবশেষে তাদেরকে একথা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তিকে তোমরা নিজেদের জন্য দুঃখ ও বিপদ মনে করছো তিনি আসলে তোমাদের জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।

ভাষণের মধ্যে বিশেষভাবে যে সমস্ত আলোচিত হয়েছে সেগুলো নিচে দেয়া হলোঃ

একঃ মানুষ কখনো রসূল হতে পারে না, মক্কার কাফেরদের এ বিভ্রান্তি এবং এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল মেনে নিতে অস্বীকার করাকে-বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নিরসন ও খণ্ডন করা হয়েছে।

দুইঃ নবী করীমের (সা) ও কুরআনের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন ও পরস্পর বিরোধী ধরনের আপত্তি উত্থাপন করা এবং কোন একটি কথার ওপর অবিচল না থাকার-ওপর সংক্ষিপ্তভাবে কিন্তু অত্যন্ত জোরালো ও অর্থপূর্ণ পদ্ধতিতে পাকড়াও করা হয়েছে।

তিনঃ তাদের ধারণা ছিল, জীবন নেহাতই একটি খেলা, কিছুদিন খেলা করার পর তাকে এমনিই খতম হয়ে যেতে হবে, এর কোন ফল বা পরিণতি ভুগতে হবে না। কোন প্রকার হিসেব নিকেশ এবং শাস্তি ও পুরস্কারের অবকাশ এখানে নেই।-যে ধরনের গাফলতি ও অবজ্ঞা সহকারে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের প্রত্যাখ্যান করছিল, ঐ ধারণাই যেহেতু তার মূল ছিল, তাই বড়ই হৃদয়গাহী পদ্ধতিতে এর প্রতিকার করা হয়েছে।

চারঃ শিরকের প্রতি তাদের অবিচল নিষ্ঠা এবং তাওহীদের বিরুদ্ধে অন্ধ বিদ্বেষ ছিল তাদের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে বিরোধের মূল ভিত্তি।-এর সংশোধনের জন্য শিরকের বিরুদ্ধে ও তাওহীদের পক্ষে সংক্ষিপ্ত কিন্তু মোক্ষম ও চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদান করা হয়েছে।

পাঁচঃ এ ভুল ধারণাও তাদের ছিল যে, নবীকে বারবার মিথ্যা বলা সত্ত্বেও যখন তাদের ওপর কোন আযাব আসে না তখন নিশ্চয়ই নবী মিথ্যুক এবং তিনি আমাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে যে আযাবের ভয় দেখান তা নিছক অন্তসারশূন্য হুকমি ছাড়া আর কিছুই নয়।-একে যুক্তি ও উপদেশ উভয় পদ্ধতিতে দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এরপর নবীগণের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী থেকে কতিপয় নজির পেশ করা হয়েছে। এগুলো থেকে একথা অনুধাবন করানোই উদ্দেশ্য যে, মানবেতিহাসের বিভিন্ন যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব পয়গম্বর এসেছিলেন তারা সবাই ছিলেন মানুষ। নবুওয়াতের বিশিষ্ট গুণ বাদ দিলে অন্যান্য গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের মতই মানুষ ছিলেন। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের গুণাবলী এবং খোদায়ীর সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। বরং নিজেদের প্রত্যেকটি প্রয়োজনের জন্য তারা সবসময় আল্লাহর সামনে হাত পাততেন। এই সংগে একই ঐতিহাসিক নজির থেকে আরো দুটি কথাও সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, নবীদের ওপর বিভিন্ন প্রকার বিপদ-আপদ এসেছে এবং তাদের বিরোধীরাও তাদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে তাদেরকে সাহায্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত সকল নবী একই দীনের অনুসারী ছিলেন। এবং সেটি ছিল সেই দীন যেটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেশ করেছেন। এটিই মানব সম্প্রদায়ের আসল ধর্ম। বাদবাকি যতগুলো ধর্ম দুনিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো নিছক পথভ্রষ্ট মানুষদের বিভেদাত্মক প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সবশেষে বলা হয়েছে, এ দীনের অনুকরণ ও অনুসরণের ওপরই মানুষের নাজাত ও মুক্তি নির্ভরশীল। যারা এ দীন গ্রহণ করবে তারাই আল্লাহর শেষ আদালত থেকে সফলকাম হয়ে বের হয়ে আসবে এবং তারাই হবে এ পৃথিবীর উত্তরাধিকারী। আর যারা তাকে প্রত্যাখান করবে তারা আখেরাতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পরিণতির সম্মুখীন হবে। শেষ বিচারের সময় আসার আগেই আল্লাহ নিজের নবীর মাধ্যমে মানুষকে এ সত্য সম্পর্কে অবহিত করে চলছেন, এটি তাঁর বিরাট মেহেরবানী। এ অবস্থায় নবীর আগমনকে যারা নিজেদের জন্য রহমতের পরিবর্তে ধ্বংস মনে করে তারা অজ্ঞ ও মুর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়।

_____________

 

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ﴾

১) মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় কাছে এসে গেছে, অথচ সে গাফলতির মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে৷

﴿مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ﴾

২) তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে উপদেশ আসে, তা তারা দ্বিধাগ্রস্তভাবে শোনে এবং খেলার মধ্যে ডুবে থাকে,

﴿لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ ۗ وَأَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِينَ ظَلَمُوا هَلْ هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ ۖ أَفَتَأْتُونَ السِّحْرَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَ﴾

৩) তাদের মন (অন্য চিন্তায়) আচ্ছন্ন৷ আর জালেমরা পরস্পরের মধ্যে কানাকানি করে যে, “এ ব্যক্তি মূলত তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কি, তাহলে কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর ফাঁদে পড়বে ?

﴿قَالَ رَبِّي يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾

৪) রসূল বললো, আমার রব এমন প্রত্যেকটি কথা জানেন যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে বলা হয়, তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন৷

﴿بَلْ قَالُوا أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ بَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌ فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ كَمَا أُرْسِلَ الْأَوَّلُونَ﴾

৫) তারা বলে, “বরং এসব বিক্ষিপ্ত স্বপ্ন, বরং এসব তার মনগড়া বরং এ ব্যক্তি কবি৷ নয়তো সে আনুক একটি নিদর্শন যেমন পূর্ববর্তীকালের নবীদেরকে পাঠানো হয়েছিল নিদর্শন সহকারে৷”

﴿مَا آمَنَتْ قَبْلَهُم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا ۖ أَفَهُمْ يُؤْمِنُونَ﴾

৬) অথচ এদের আগে আমি যেসব জনবসতিকে ধ্বংস করেছি, তাদের কেউ ঈমান আনেনি৷ এখন কি এরা ঈমান আনবে ?

﴿وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۖ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾

৭) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম৷ তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো৷

﴿وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوا خَالِدِينَ﴾

৮) সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না এবং তারা চিরজীবিও ছিল না৷

﴿ثُمَّ صَدَقْنَاهُمُ الْوَعْدَ فَأَنجَيْنَاهُمْ وَمَن نَّشَاءُ وَأَهْلَكْنَا الْمُسْرِفِينَ﴾

৯) তারপর দেখে নাও আমি তাদের সাথে আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছি এবং তাদেরকে ও যাকে যাকে আমি চেয়েছি রক্ষা করেছি এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷

﴿لَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾

১০) হে লোকেরা ! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি বুঝ না ?

﴿وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا آخَرِينَ﴾

১১) কত অত্যাচারী জনবসতিকে আমি বিধ্বস্ত করে দিয়েছি এবং তাদের পর উঠিয়েছি অন্য জাতিকে৷

﴿فَلَمَّا أَحَسُّوا بَأْسَنَا إِذَا هُم مِّنْهَا يَرْكُضُونَ﴾

১২) যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো, পালাতে লাগলো সেখান থেকে৷

﴿لَا تَرْكُضُوا وَارْجِعُوا إِلَىٰ مَا أُتْرِفْتُمْ فِيهِ وَمَسَاكِنِكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُونَ﴾

১৩) (বলা হলো) “পালায়ো না, চলে যাও তোমাদের গৃহে ও ভোগ্য সামগ্রীর মধ্যে, যেগুলোর মধ্যে তোমরা আরাম করছিলে, হয়তো তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷”

﴿قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾

১৪) বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম৷”

﴿فَمَا زَالَت تِّلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتَّىٰ جَعَلْنَاهُمْ حَصِيدًا خَامِدِينَ﴾

১৫) আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি৷

﴿وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ﴾

১৬) এ আকাশ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যে যা কিছুই আছে এগুলো আমি খেলাচ্ছলে তৈরি করিনি৷

﴿لَوْ أَرَدْنَا أَن نَّتَّخِذَ لَهْوًا لَّاتَّخَذْنَاهُ مِن لَّدُنَّا إِن كُنَّا فَاعِلِينَ﴾

১৭) যদি আমি কোনো খেলনা তৈরি করতে চাইতাম এবং এমনি ধরনের কিছু আমাকে করতে হতো তাহলে নিজেরই কাছ থেকে করে নিতাম৷

﴿بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ فَيَدْمَغُهُ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٌ ۚ وَلَكُمُ الْوَيْلُ مِمَّا تَصِفُونَ﴾

১৮) কিন্তু আমি তো মিথ্যার ওপর সত্যের আঘাত হানি, যা মিথ্যার মাথা গুঁড়িয়ে দেয় এবং সে দেখতে দেখতে নিশ্চিহ্ন হয়৷ আর তোমাদের জন্য ধ্বংস! যেসব কথা তোমরা তৈরি করো সেগুলোর বদৌলতে৷

﴿وَلَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَنْ عِندَهُ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ﴾

১৯) পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যে সৃষ্টিই আছে তা আল্লাহরই৷ আর যে (ফেরেশতারা) তাঁর কাছে আছে তারা না নিজেদেরকে বড় মনে করে তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় এবং না ক্লান্ত ও বিষন্ন হয়,

﴿يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ﴾

২০) দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিরাম-বিশ্রাম নেয় না৷

﴿أَمِ اتَّخَذُوا آلِهَةً مِّنَ الْأَرْضِ هُمْ يُنشِرُونَ﴾

২১) এদের তৈরি মাটির দেবতাগুলো কি এমন পর্যায়ের যে, তারা (প্রাণহীনকে প্রাণ দান করে) দাঁড় করিয়ে দিতে পারে ?

﴿لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾

২২) যদি আকাশে ও পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ হতো তাহলে (পৃথিবী ও আকাশ) উভয়ের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো৷ কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে আরশের প্রভুব আল্লাহ তা থেকে পাক-পবিত্র৷

﴿لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ﴾

২৩) তাঁর কাজের জন্য (কারো সামনে) তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে না বরং তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে৷

﴿أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً ۖ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ ۖ هَٰذَا ذِكْرُ مَن مَّعِيَ وَذِكْرُ مَن قَبْلِي ۗ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ ۖ فَهُم مُّعْرِضُونَ﴾

২৪) তাঁকে বাদ দিয়ে তারা কি অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে ? হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রমাণ আনো৷ এ কিতাবও হাজির, যার মধ্যে আছে আমার যুগের লোকদের জন্য উপদেশ এবং সে কিতাবগুলোও হাজির, যেগুলোর মধ্যে ছিল আমার পূর্ববর্তী লোকদের জন্য নসিহত৷” কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই প্রকৃত সত্য থেকে বেখবর, কাজেই মুখ ফিরিয়ে আছে৷

﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ﴾

২৫) আমি তোমার পূর্বে যে রসূলই পাঠিয়েছি তার প্রতি এ অহী করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই কাজেই তোমরা আমারই বন্দেগী করো৷

﴿وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَٰنُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۚ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ﴾

২৬) এরা বলে, “করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেন৷” সুবহানাল্লাহ! তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা৷

﴿لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾

২৭) তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলে না এবং শুধুমাত্র তাঁর হুকুমে কাজ করে৷

﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾

২৮) যাকিছু তাদের সামনে আছে এবং যাকিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন৷ যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত৷

﴿وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَٰهٌ مِّن دُونِهِ فَذَٰلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ﴾

২৯) আর তাদের মধ্যে যে বলবে, আল্লাহ ছাড়া আমিও একজন ইলাহ, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দান করবো, আমার এখানে এটিই জালেমদের প্রতিফল৷

﴿أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ﴾

৩০) যারা (নবীর কথা মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা কি চিন্তা করে না যে, এসব আকাশ ও পৃথিবী এক সাথে মিশে ছিল, তারপর আমি তাদেরকে আলাদা করলাম এবং পানি থেকে সৃষ্টি করলাম প্রত্যেকটি প্রাণীকে৷ তারা কি (আমার এ সৃষ্টি ক্ষমতাকে) মানে না ?

﴿وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ﴾

৩১) আর আমি পৃথিবীতে পাহাড় বসিয়ে দিয়েছি, যাতে সে তাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং তার মধ্যে চওড়া পথ তৈরি করে দিয়েছি, হয়তো লোকেরা নিজেদের পথ জেনে নেবে৷

﴿وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ﴾

৩২) আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ,  কিন্তু তারা এমন যে, এ নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টিই দেয় না৷

﴿وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ﴾

৩৩) আর আল্লাহই রাত ও দিন তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে৷

﴿وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ ۖ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ﴾

৩৪) আর (হে মুহাম্মাদ!) অনন্ত জীবন তো আমি তোমার পূর্বেও কোনো মানুষকে দেইনি ; যদি তুমি মরে যাও তাহলে এরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে ?

﴿كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ﴾

৩৫) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷

﴿وَإِذَا رَآكَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَٰذَا الَّذِي يَذْكُرُ آلِهَتَكُمْ وَهُم بِذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ هُمْ كَافِرُونَ﴾

৩৬) এ সত্য অস্বীকারকারীরা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে৷ বলে, “এ কি সেই ব্যক্তি যে তোমাদের দেবদেবীদের সমালোচনা করে ?” অথচ তাদের নিজেদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা করুণাময়ের যিকরের অস্বীকারকারী৷

﴿خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ ۚ سَأُرِيكُمْ آيَاتِي فَلَا تَسْتَعْجِلُونِ﴾

৩৭) মানুষ দ্রুততাপ্রবণ সৃষ্টি৷ এখনই আমি তোমাদের দেখিয়ে দিচ্ছি নিজের নিদর্শনাবলী, আমাকে তাড়াহুড়া করতে বলো না৷

﴿وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾

৩৮) এরা বলে, “এ হুমকি কবে পূর্ণ হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ?”

﴿لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُوا حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ﴾

৩৯) হায়! যদি এ কাফেরদের সেই সময়ের কিছু জ্ঞান থাকতো যখন এরা নিজেদের মুখ ও পিঠ আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং এদেরকে কোথাও থেকে সাহায্যও করা হবে না৷

﴿بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ﴾

৪০) সে আপদ তাদের ওপর আকস্মিকভাবে এসে পড়বে এবং তাদেরকে হঠাৎ এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তারা তার প্রতিরোধও করতে পারবে না৷ এবং মুহূর্তকালের অবকাশও লাভ করতে সক্ষম হবে না৷

﴿وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾

৪১) তোমার পূর্বের রসূলদেরকেও বিদ্রূপ করা হয়েছে কিন্তু বিদ্রূপকারীরা যা নিয়ে বিদ্রূপ করতো, শেষ পর্যন্ত তারই কবলে তাদেরকে পড়তে হয়েছে৷

﴿قُلْ مَن يَكْلَؤُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمَٰنِ ۗ بَلْ هُمْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِم مُّعْرِضُونَ﴾

৪২) হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, কে তোমাদের রাতে ও দিনে রহমানের হাত থেকে বাঁচাতে পারে ?  কিন্তু তারা নিজেদের রবের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷

﴿أَمْ لَهُمْ آلِهَةٌ تَمْنَعُهُم مِّن دُونِنَا ۚ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَ أَنفُسِهِمْ وَلَا هُم مِّنَّا يُصْحَبُونَ﴾

৪৩) তাদের কাছে কি এমন কিছু ইলাহ আছে যারা আমার মুকাবিলায় তাদেরকে রক্ষা করবে ? তারা না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে, না আমার সমর্থন লাভ করে৷

﴿بَلْ مَتَّعْنَا هَٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ ۗ أَفَلَا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ﴾

৪৪) আসল কথা হচ্ছে, তাদেরকে ও তাদের পূর্বপুরুষদেরকে আমি জীবনের উপায়-উপকরণ দিয়েই এসেছি৷ এমনকি তারা দিন পেয়ে গেছে৷ কিন্তু তারা কি দেখে না, আমি বিভিন্ন দিক থেকে পৃথিবীকে সংকুচিত করে আনছি ? তবুও কি তারা বিজয়ী হবে ?

﴿قُلْ إِنَّمَا أُنذِرُكُم بِالْوَحْيِ ۚ وَلَا يَسْمَعُ الصُّمُّ الدُّعَاءَ إِذَا مَا يُنذَرُونَ﴾

৪৫) তাদেরকে বলে দাও, “আমি তো অহীর ভিত্তিতে তোমাদেরকে জানাচ্ছি”-কিন্তু বধিররা ডাক শুনতে পায় না, যখন তাদেরকে সতর্ক করা হয়৷

﴿وَلَئِن مَّسَّتْهُمْ نَفْحَةٌ مِّنْ عَذَابِ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾

৪৬) আর যদি তোমার রবের আযাব তাদেরকে সামান্য স্পর্শ করে যায়, তাহলে তারা তৎক্ষণাত চিৎকার দিয়ে উঠবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম৷

﴿وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ۖ وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَاسِبِينَ﴾

৪৭) কিয়ামতের দিন আমি যথাযথ ওজন করার দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবো৷ ফলে কোনো ব্যক্তির প্রতি সামান্যতম জুলুম হবে না৷ যার তিল পরিমাণও কোনো কর্ম থাকবে তাও আমি সামনে আনবো এবং হিসেব করার জন্য আমি যথেষ্ট৷

﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ وَهَارُونَ الْفُرْقَانَ وَضِيَاءً وَذِكْرًا لِّلْمُتَّقِينَ﴾

৪৮) পূর্বে আমি মূসা ও হারুনকে দিয়েছিলাম ফুরকান, জ্যোতি ও ‘যিকির’ এমনসব মুত্তাকীদের কল্যাণার্থে

﴿الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَهُم مِّنَ السَّاعَةِ مُشْفِقُونَ﴾

৪৯) যারা না দেখে তাদের রবকে ভয় করে এবং যারা (হিসেবে নিকেশের) সে সময়ের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত৷

﴿وَهَٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ أَنزَلْنَاهُ ۚ أَفَأَنتُمْ لَهُ مُنكِرُونَ﴾

৫০) আর এখন এ বরকত সম্পন্ন “যিকির” আমি (তোমাদের জন্য) নাযিল করেছি৷ তবুও কি তোমরা একে মেনে নিতে অস্বীকার করো ?

﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رُشْدَهُ مِن قَبْلُ وَكُنَّا بِهِ عَالِمِينَ﴾

৫১) এরও আগে আমি ইবরাহীমকে শুভ বুদ্ধি ও সত্যের জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি তাকে খুব ভালোভাবেই জানতাম৷

﴿إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ﴾

৫২) সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন সে তার নিজের বাপকে ও জাতিকে বলেছিল, “এ মূর্তিগুলো কেমন, যেগুলোর প্রতি তোমরা ভক্তিতে গদগদ হচ্ছো ?”

﴿قَالُوا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ﴾

৫৩) তারা জবাব দিলঃ “আমাদের বাপ-দাদাদেরকে আমরা এদের ইবাদাতরত অবস্থায় পেয়েছি৷”

﴿قَالَ لَقَدْ كُنتُمْ أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾

৫৪) সে বললো, তোমরাও পথভ্রষ্ট এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই অবস্থান করছিল৷”

﴿قَالُوا أَجِئْتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنتَ مِنَ اللَّاعِبِينَ﴾

৫৫) তারা বললো, তুমি কি আমাদের সামনে তোমার প্রকৃত মনের কথা বলছো, না নিছক কৌতুক করছো ?

﴿قَالَ بَل رَّبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ﴾

৫৬) সে জবাব দিল, “না, বরং আসলে তোমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব এবং এদের স্রষ্টা৷ এর স্বপক্ষে আমি তোমাদের সামনে সাক্ষ দিচ্ছি৷

﴿وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُم بَعْدَ أَن تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ﴾

৫৭) আর আল্লাহর কসম, তোমাদের অনুপস্থিতিতে আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷”

﴿فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ﴾

৫৮) সে অনুসারে সে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেললো এবং শুধুমাত্র বড়টিকে ছেড়ে দিল, যাতে তারা হয়তো তার দিকে ফিরে আসতে পারে৷

﴿قَالُوا مَن فَعَلَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ﴾

৫৯) (তারা এসে মূর্তিগুলোর এ অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো, “আমাদের ইলাহদের এ অবস্থা করলো কে, বড়ই জালেম সে৷”

﴿قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ﴾

৬০) (কেউ কেউ) বললো, “আমরা এক যুবককে এদের কথা বলতে শুনেছিলাম, তার নাম ইবরাহীম৷”

﴿قَالُوا فَأْتُوا بِهِ عَلَىٰ أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ﴾

৬১) তারা বললো, “তাহলে তাকে ধরে নিয়ে এসো সবার সামনে, যাতে লোকেরা দেখে নেয়” (কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়)৷

﴿قَالُوا أَأَنتَ فَعَلْتَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ﴾

৬২) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো ?”

﴿قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِن كَانُوا يَنطِقُونَ﴾

৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে৷”

﴿فَرَجَعُوا إِلَىٰ أَنفُسِهِمْ فَقَالُوا إِنَّكُمْ أَنتُمُ الظَّالِمُونَ﴾

৬৪) একথা শুনে তারা নিজেদের বিবেকের দিকে ফিরলো এবং (মনে মনে) বলতে লাগলো, “সত্যিই তোমরা নিজেরাই জালেম৷”

﴿ثُمَّ نُكِسُوا عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَٰؤُلَاءِ يَنطِقُونَ﴾

৬৫) কিন্তু আবার তাদের মত পাল্টে গেলো  এবং বলতে থাকলো, “তুমি জানো, এরা কথা বলে না৷”

﴿قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ﴾

৬৬) ইবরাহীম বললো, “তাহলে তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব জিনিসের পূজা করছো যারা তোমাদের না উপকার করতে পারে, না ক্ষতি ?

﴿أُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾

৬৭) ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যের তোমরা পূজা করছো তাদেরকে৷ তোমাদের কি একটুও বুদ্ধি নেই ?”

﴿قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ﴾

৬৮) তারা বললো, “পুড়িয়ে ফেলো একে এবং সাহায্য করো তোমাদের উপাস্যদেরকে, যদি তোমরা কিছু করতে চাও৷”

﴿قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ﴾

৬৯) আমি বললামঃ “হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য৷”

﴿وَأَرَادُوا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِينَ﴾

৭০) তারা চাচ্ছিল ইবরাহীমের ক্ষতি করতে কিন্তু আমি তাদেরকে ভীষণভাবে ব্যর্থ করে দিলাম৷

﴿وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ﴾

৭১) আর আমি তাকে ও লূতকে বাঁচিয়ে এমন দেশের দিকে নিয়ে গেলাম যেখানে আমি দুনিয়াবাসীদের জন্য বরকত রেখেছিলাম৷

﴿وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ﴾

৭২) আর তাকে আমি ইসহাক দান করলাম এবং এর ওপর অতিরিক্ত ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে করলাম সৎকর্মশীল৷

﴿وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ ۖ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ﴾

৭৩) আর আমি তাদেরকে নেতা বানিয়ে দিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথনির্দেশা দিতো এবং আমি তাদেরকে অহীর মাধ্যমে সৎকাজের, নামায কায়েম করার ও যাকাত দেবার নির্দেশ দিয়েছিলাম এবং তারা আমার ইবাদাত করতো৷

﴿وَلُوطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَت تَّعْمَلُ الْخَبَائِثَ ۗ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِينَ﴾

৭৪) আর লূতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম এবং তাকে এমন জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম যার অধিবাসীরা বদ কাজে লিপ্ত ছিল-আসলে তারা ছিল বড়ই দুরাচারী পাপিষ্ঠ জাতি

﴿وَأَدْخَلْنَاهُ فِي رَحْمَتِنَا ۖ إِنَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ﴾

৭৫) আর লূতকে আমি নিজের রহমতের আওতায় নিয়ে নিয়েছিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তরভুক্ত৷

﴿وَنُوحًا إِذْ نَادَىٰ مِن قَبْلُ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ﴾

৭৬) আর এ একই নিয়ামত আমি নূহকে দান করেছিলাম৷ স্মরণ করো যখন এদের সবার আগে সে আমাকে ডেকেছিল, আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ও তার পরিবারবর্গকে মহাবিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলাম৷

﴿وَنَصَرْنَاهُ مِنَ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ﴾

৭৭) আর এমন সম্প্রদায়ের মুকাবিলায় তাকে সাহায্য করেছিলাম যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিল৷ তারা খুবই খারাপ লোক ছিল, কাজেই আমি তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম৷

﴿وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ﴾

৭৮) আর এ নিয়ামতই আমি দাউদ ও সুলাইমানকে দান করেছিলাম৷ স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তারা উভয়ই একটি শস্য ক্ষেতের মোকদ্দমার ফায়সালা করছিল, যেখানে রাতের বেলা ছড়িয়ে পড়েছিল অন্য লোকদের ছাগল এবং আমি নিজেই দেখছিলাম তাদের বিচার৷

﴿فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ ۚ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ ۚ وَكُنَّا فَاعِلِينَ﴾

৭৯) সে সময় আমি সুলাইমানকে সঠিক ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, অথচ প্রজ্ঞা ও জ্ঞান আমি উভয়কেই দান করেছিলাম৷ দাউদের সাথে আমি পর্বতরাজী ও পক্ষীকূলকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যারা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো, এ কাজের কর্তা আমিই ছিলাম৷

﴿وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُم مِّن بَأْسِكُمْ ۖ فَهَلْ أَنتُمْ شَاكِرُونَ﴾

৮০) আর আমি তাকে তোমাদের উপকারার্থে বর্ম নির্মাণ শিল্প শিখিয়েছিলাম, যাতে তোমাদেরকে পরস্পরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তাহলে কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে ?

﴿وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ عَاصِفَةً تَجْرِي بِأَمْرِهِ إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عَالِمِينَ﴾

৮১) আর সুলায়মানের জন্য আমি প্রবল বায়ু প্রবাহকে বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যা তার হুকুম এমন দেশের দিকে প্রবাহিত হতো যার মধ্যে আমি বরকত রেখেছিলাম আমি সব জিনিসের জ্ঞান রাখি৷

﴿وَمِنَ الشَّيَاطِينِ مَن يَغُوصُونَ لَهُ وَيَعْمَلُونَ عَمَلًا دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَكُنَّا لَهُمْ حَافِظِينَ﴾

৮২) আর শয়তানের মধ্য থেকে এমন অনেককে আমি তার অনুগত করে দিয়েছিলাম যারা তার জন্য ডুবুরীর কাজ করতো এবং এছাড়া অন্য কাজও করতো, আমিই ছিলাম এদের সবার তত্ত্বাবধায়ক৷

﴿وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾

৮৩) আর (এ একই বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান) আমি আইয়ুবকে দিয়েছিলাম৷ স্মরণ করো, যখন সে তার রবকে ডাকলো, “আমি রোগগ্রস্ত হয়ে গেছি এবং তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাকারী৷”

﴿فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِن ضُرٍّ ۖ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَذِكْرَىٰ لِلْعَابِدِينَ﴾

৮৪) আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম এবং শুধুমাত্র তার পরিবার পরিজনই তাকে দেইনি বরং এই সাথে এ পরিমাণ আরো দিয়েছিলাম, নিজের বিশেষ করুণা হিসেবে এবং এজন্য যে, এটা একটা শিক্ষা হবে ইবাদাতকারীদের জন্য৷

﴿وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ﴾

৮৫) আর এ নিয়ামতই ইসমাঈল, ইদরিস ও যুলকিফ্‌লকে দিয়েছিলাম, এরা সবাই সবরকারী ছিল

﴿وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِي رَحْمَتِنَا ۖ إِنَّهُم مِّنَ الصَّالِحِينَ﴾

৮৬) এবং এদেরকে আমি নিজের অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছিলাম, তারা ছিল সৎকর্মশীল৷

﴿وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ﴾

৮৭) আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহ ভাজন করেছিলাম৷  স্মরণ করো যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করবো না৷ শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলো :  “তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি৷”

﴿فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ﴾

৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷

﴿وَزَكَرِيَّا إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ﴾

৮৯) আর যাকারিয়ার কথা (স্মরণ করো), যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল : “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই৷”

﴿فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَىٰ وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا ۖ وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ﴾

৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ইয়াহ্‌ইয়া দান করেছিলাম, আর তার স্ত্রীকে তার জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম৷ তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

﴿وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا آيَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾

৯১) আর সেই মহিলা যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, আমি তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছিলাম নিজের রূহ থেকে এবং তাকে ও তার পুত্রকে সারা দুনিয়ার জন্য নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম৷

﴿إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ﴾

৯২) তোমাদের এ উম্মত আসলে একই উম্মত৷ আর আমি তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা আমার ইবাদাত করো৷

﴿وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ ۖ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ﴾

৯৩) কিন্তু (নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে) লোকেরা পরস্পরের মধ্যে নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে৷ সবাইকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷

﴿فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ﴾

৯৪) কাজেই যে ব্যক্তি মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকাজ করে, তার কাজের অমর্যাদা করা হবে না এবং আমি তা লিখে রাখছি৷

﴿وَحَرَامٌ عَلَىٰ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا أَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُونَ﴾

৯৫) আর যে জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি তার অধিবাসিরা আবার ফিরে আসবে, এটা সম্ভব নয়৷

﴿حَتَّىٰ إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ﴾

৯৬) এমন কি যখন ইয়াজুজ ও মাজুজকে খুলে দেয়া হবে, প্রতি উচ্চ ভূমি থেকে তারা বের হয়ে পড়বে

﴿وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِينَ﴾

৯৭) এবং সত্য ওয়াদা পুরা হবার সময় কাছে এসে যাবে তখন যারা কুফরী করেছিল হঠাৎ তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে৷ তারা বলবে, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য৷ আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম বরং আমরা দোষী ছিলাম৷

﴿إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ﴾

৯৮) অবশ্যই তোমরা এবং তোমাদের যেসব মাবুদকে তোমরা পূজা করো, সবাই জাহান্নামের ইন্ধন, সেখানেই তোমাদের যেতে হবে৷

﴿لَوْ كَانَ هَٰؤُلَاءِ آلِهَةً مَّا وَرَدُوهَا ۖ وَكُلٌّ فِيهَا خَالِدُونَ﴾

৯৯) যদি তারা সত্যিই আল্লাহ হতো, তাহলে সেখানে যেতো না৷ এখন সবাইকে চিরদিন তারই মধ্যে থাকতে হবে৷

﴿لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ﴾

১০০) সেখানে তারা হাঁসফাঁস করতে থাকবে এবং তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা কোনো কথা শুনতে পাবে না৷

﴿إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَىٰ أُولَٰئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ﴾

১০১) তবে যাদের ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে পূর্বাহ্নেই কল্যাণের ফায়সালা হয়ে গিয়েছে তাদেরকে অবশ্যি এ থেকে দূরে রাখা হবে,

﴿لَا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا ۖ وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنفُسُهُمْ خَالِدُونَ﴾

১০২) তারা সামান্যতম খস্‌খসানিও তারা শুনবে না এবং তারা চিরকাল নিজেদের মনমতো জিনিসের মধ্যে অবস্থান করবে৷

﴿لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ هَٰذَا يَوْمُكُمُ الَّذِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ﴾

১০৩) সেই চরম ভীতিকর অবস্থা তাদেরকে একটুও পেরেশান করবে না এবং ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে এই বলে, “এ তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হতো৷”

﴿يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ ۚ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ ۚ وَعْدًا عَلَيْنَا ۚ إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ﴾

১০৪) সেদিন, যখন আকাশকে আমি এমনভাবে গুটিয়ে ফেলবো যেমন বাণ্ডিলের মধ্যে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত কাগজ, যেভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম ঠিক তেমনিভাবে আবার তার পুনরাবৃত্তি করবো, এ একটি প্রতিশ্রুতি, যা আমার দায়িত্বের অন্তরভুক্ত এবং এ কাজ আমাকে অবশ্যই করতে হবে৷

﴿وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ﴾

১০৫) আর যবুরে আমি উপদেশের পর একথা লিখে দিয়েছি যে, যমীনের উত্তরাধিকারী হবে আমার নেক বান্দারা৷

﴿إِنَّ فِي هَٰذَا لَبَلَاغًا لِّقَوْمٍ عَابِدِينَ﴾

১০৬) এর মধ্যে একটি বড় খবর আছে ইবাদাতকারী লোকদের জন্য৷

﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾

১০৭) হে মুহাম্মাদ! আমি যে তোমাকে পাঠিয়েছি, এটা আসলে দুনিয়াবাসীদের জন্য আমার রহমত৷

﴿قُلْ إِنَّمَا يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾

১০৮) এদেরকে বলো, “আমার কাছে যে অহী আসে তা হচ্ছে এই যে, কেবলমাত্র এক ইলাহই তোমাদের ইলাহ, তারপর কি তোমরা আনুগত্যের শির নত করছো ?”

﴿فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ آذَنتُكُمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۖ وَإِنْ أَدْرِي أَقَرِيبٌ أَم بَعِيدٌ مَّا تُوعَدُونَ﴾

১০৯) যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও, “আমি সোচ্চার কণ্ঠে তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমি জানি না, তোমাদের সাথে যে বিষয়ের ওয়াদা করা হচ্ছে তা আসন্ন, না দূরবর্তী৷

﴿إِنَّهُ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُونَ﴾

১১০) আল্লাহ সে কথাও জানেন যা সোচ্চার কণ্ঠে বলা হয় এবং তাও যা তোমরা গোপনে করো৷

﴿وَإِنْ أَدْرِي لَعَلَّهُ فِتْنَةٌ لَّكُمْ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ﴾

১১১) আমিতো মনে করি, হয়তো এটা (বিলম্ব) তোমাদের জন্য এটা পরীক্ষা এবং একটা বিশেষ সময় পর্যন্ত তোমাদের জীবন উপভোগ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে :

﴿قَالَ رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ ۗ وَرَبُّنَا الرَّحْمَٰنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ﴾

১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷”

 

 



‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’। লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথেঃ

1 Comment

মন্তব্য করুন

Verified by MonsterInsights