- কিয়ামত কি ও কখন হবে? পর্ব ১
- কিয়ামতের আলামত বা নিদর্শন সমূহ – কিয়ামত পর্ব ২।
- কিয়ামতের বড় আলামত সমূহ – কিয়ামত – পর্ব ৩
- কিয়ামতের বড় আলামত – মসীহুদ দাজ্জালের পরিচয়। কিয়ামত পর্ব ৪
- দাজ্জালের দৈহিক বিবরণ ও অবস্থান। – কিয়ামত পর্ব ৫
- দাজ্জাল আগমনের পূর্বে বিশ্ব পরিস্থিতি ও দাজ্জালের অবস্থান নিয়ে কিছু কথা। – কিয়ামত পর্ব ৬
- দাব্বাতুল আরদ কী? – কিয়ামত পর্ব ৮
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় ও সংখ্যা। – কিয়ামত পর্ব ৯
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় বাকি অংশ – কিয়ামত পর্ব ১০।
মসীহুদ দাজ্জালের পরিচয়।
দাজ্জালের ব্যপারে কিছু সাধারণ প্রশ।
* কে এই দাজ্জাল?
* সে কি বর্তমানে জীবিত?
* ইতিপূর্বে কেউ তাকে দেখেছে?
* তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য কি?
* আবির্ভাবের কারণ কি?
* কিছু ভ্রান্ত প্রচারণা।
কে এই দাজ্জাল?
সে আদম সন্তানের-ই একজন। মুমিনদের পরীক্ষার জন্য আল্লাহ পাক তাকে অলৌকিক কিছু বৈশিষ্ট্য দেবেন। তার দৈহিক ও চরিত্রগত গুণাবলী বর্ণনা করে নবী করীম সা. স্বীয় উম্মতকে তার থেকে বেঁচে থাকার আদেশ করেছেন।
দাজ্জাল সম্পর্কে আমাদের বলতে হবে, কারণঃ জ্ঞান-ই উত্তোরণের একমাত্র পথ। ফেতনা গ্রাস করে ফেলবে- এই ভয়ে হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. সবসময় নবীজীর কাছে অনিষ্টকর ফেতনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন।
দাজ্জালের ফেতনাটি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ফেতনা। সকল নবী-রাসূল স্ব স্ব উম্মতকে তার ব্যাপারে সতর্ক করতেন।
শেষ নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সা. তার ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উম্মতকে বারংবার সতর্ক করে গেছেন। সুতরাং দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য, ফেতনা ও বাঁচার উপায় জানা থাকলেই -আল্লাহ পাক আপনাকে আমাকে সকলকে তার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন- ইনশাল্লাহ।
দাজ্জালের চেহারার এক পার্শ্ব ভ্রু ও চক্ষুবিহীন হবে।
দাজ্জাল এসেছে আরবী শব্দ “দাজাল” থেকে। যার অর্থ- সত্য ঢেকে দেয়া, ছদ্ম আবরণে লুকিয়ে রাখা, প্রতারিত করা, মিথ্যা বলা ইত্যাদি। দাজ্জাল শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে মহা-মিথ্যুক।
সে ইসলামের সত্যতা ঢাকার চেষ্টা করবে।
দাজ্জাল কিসের দাবী করবে?
মহা-দুর্ভিক্ষের কালে দাজ্জাল খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এসে বলবে, “আমি হচ্ছি সমগ্র জগতেরপালনকর্তা। হে লোকসকল! তোমরা আমার
প্রতি ঈমান আন! আমি তোমাদের খাদ্য দেব, পানীয় দেব, সম্পদ দেব, যা চাও- সব দেব”।
নবী করীম সা. বলেছেন- “স্মরণ রেখো! দাজ্জাল কিন্তু একচোখে কানা হবে। আর তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা কানা নন!!” (বুখারী)
ইবনে সাইয়াদ সম্পর্কে দু-টি কথা নবীযুগে মদীনায় এক ইহুদী-পুত্র ছিল। নাম ছিল ইবনে সাইয়াদ। তার অলৌকিক কর্মকাণ্ডের খবর শুনে নবীজী তাকে দাজ্জাল সন্দেহ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, একদা উমর রা.- কে সাথে নিয়ে নবীজী ইবনে সাইয়াদের খবর নেয়ার জন্য গমন করলেন। গিয়ে দেখেন- সে ছোট্ট বালকদের সাথে বনী মুগালা’র দূর্গের কাছে খেলাধুলা করছে। সে-সময় ইবনে সাইয়াদের বয়স ১৫ ছুঁই ছুঁই। অজান্তেই পেছনে গিয়ে নবীজী তার পিঠে মৃদু আঘাত করলেন।
– ইবনে সাইয়াদকে নবীজী বললেন- তুমি কি মান যে, আমি হলাম আল্লাহর রাসূল?
– ইবনে সাইয়াদ নবীজীর দিকে তাকিয়ে বলল- আমি আপনাকে মূর্খদের নবী মনে করি। অতঃপর সে পাল্টা নবীজীকে বলতে লাগল-
আপনি কি মানেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল?
– নবীজী প্রত্যাখ্যানের সুরে বললেন- আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনলাম। বললেন- স্বপ্নে তুই কি দেখিস?
– সে বলল- কখনো সত্যবাদী আবার কখনো মিথ্যাবাদী দেখি।
– নবীজী বললেন- তোর বিষয়টি তো গড়বড় মনে হচ্ছে!! আচ্ছা অন্তরে তোর জন্য একটি কথা লুকিয়েছি, বল তো- সেটা কি?!!
– ইবনে সাইয়াদ বলল- (দুখ দুখ) ধোঁয়া!
– নবীজী বললেন- দূরে সর! নির্ধারিত সময়ের আগে তুই কিছুই করতে পারবি না! (মূলত রাসুলুল্লাহ সা: এর অন্তরে তখন সুরায়ে দুখান স্থির ছিল। আর ইবনে সাইয়াদ ভন্ড হওয়ায় তা আঁচ করতে পারে নি। তাই সে দুখ দুখ উচ্চারণ করেছে। )
– উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে উমর রা. বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! অনুমতি দিন- এক্ষুণি তার মস্তক নামিয়ে দেই!
– নবীজী বললেন- সে-ই যদি প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তোমার নয়; ঈসা বিন মারিয়াম এর হাতে সে নিহত হবে। আর যদি দাজ্জাল
না হয়, তবে অনর্থক হত্যা করেই বা কি লাভ..!!” (মুসলিম)
সালেম বিন আব্দুল্লাহ বলেন- আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর রা.কে বলতে শুনেছি- “অতঃপর নবী করীম সা. উবাই বিন কা’বকে সাথে নিয়ে ইবনে সাইয়াদের খেজুর বাগানে গেলেন। বাগানে ঢোকার পর নবীজী খর্জুর কাণ্ডের পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে সামনে এগুতে লাগলেন, ইবনে সাইয়াদ টের পাওয়ার আগেই যেন একা একা বসে সে যা বলছে- শুনতে পান। নবীজী তাকে দেখলেন, সে চাদরের বিছানায় গা এলিয়ে কি যেন ফিসফিস করছে। হঠাৎ তার মা এসে নবীজীকে দেখে বলতে লাগল- ওহে সাফী (ইবনে সাইয়াদের ডাকনাম)! মুহাম্মদ এসে পড়েছে! ইবনে সাইয়াদ সজাগ হয়ে ফিসফিস বন্ধ করে দেয়। তখন
নবীজী বলতে লাগলেন- হতভাগী না আসলে আজ-ই প্রকাশ হয়ে যেত (যে, সে দাজ্জাল না অন্য কিছু!) ” – (মুসলিম শরীফ)
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা আমরা হজ্ব বা উমরা পালনে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সাথে ইবনে সাইয়াদ -ও ছিল। পথিমধ্যে আমরা একস্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করলাম। সাথীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে দূরে চলে গেল। আমি এবং ইবনে সাইয়াদ শুধু রয়ে গেলাম। সে যেহেতু সন্দেজনক -তাই মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর সে তার মালপত্র আমার মালপত্রের সাথে এনে রাখল। আমি বললাম- প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তাই একসাথে রাখার চেয়ে আলাদা রাখাই ভাল, ওই বৃক্ষের নিচে যদি রাখতে..!! ইবনে সাইয়াদ মালপত্র নিয়ে দূরের বৃক্ষের নিচে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বকরীর দুধের ব্যবস্থা হলে একটি পাত্রে দুধ
ভর্তি করে সে আমার জন্য নিয়ে এলো। বলল- পান কর হে আবূ সাঈদ! বললাম- এমনিতেই প্রচণ্ড গরম, তার উপর দুধ পান করলে পেটের অবস্থা বারোটা বেজে যাবে (কোন মতেই আমি তার হাতের দুধ পান করতে চাচ্ছিলাম না)।
তখন ইবনে সাইয়াদ বলতে লাগল-
হে আবু সাঈদ! আমার ইচ্ছা হয়- লম্বা একটা দড়ি গাছের সাথে ঝুলিয়ে নিজেকে ফাঁস দিয়ে দিই। মানুষের এই আচরণ আমার আর ভাল্লাগে না!! হে আবু সাঈদ! তোমরাই (আনসার সম্প্রদায়) নবী করীম সা.এর হাদিস সম্পর্কে বেশি অবগত। বিশেষ করে তুমি তো অনেক হাদিস জান!। বল তো- নবীজী কি বলে যান নি- যে, তার (দাজ্জালের) কোন সন্তান হবে না!?/ অথচ মদীনায় আমি সন্তান রেখে এসেছি!
নবীজী কি বলেননি- সে (দাজ্জাল) মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না!?? অথচ আমি মদীনা থেকে মক্কায় হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি!! আবু সাঈদ বলেন- ইবনে সাইয়াদের এ ব্যথাভরা কথাগুলো শুনে আমি তাকে ক্ষমা-ই করে দিতে চেয়েছিলাম- এমন সময়
সে বলতে লাগল- আল্লাহ কসম! অবশ্যই আমি দাজ্জালের জন্মস্থান এবং বর্তমানে সে কোথায় আছে, জানি!!
আমি বললাম- কপাল পুড়ুক তোর!!” (মুসলিম)
উলামায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে যে, সে প্রকৃত দাজ্জাল নয়। তবে অন্যতম মিথ্যুক। গণক শয়তানেরা তার কাছে সংবাদ সরবরাহ করত। ধারণা করা হয় যে, শেষ জীবনে সে তওবা করে সংশোধিত হয়েছিল। (আল্লাহই ভাল জানেন)
চলবে…
মূল লেখকঃ ((najmul hassaan))