- কিয়ামত কি ও কখন হবে? পর্ব ১
- কিয়ামতের আলামত বা নিদর্শন সমূহ – কিয়ামত পর্ব ২।
- কিয়ামতের বড় আলামত সমূহ – কিয়ামত – পর্ব ৩
- কিয়ামতের বড় আলামত – মসীহুদ দাজ্জালের পরিচয়। কিয়ামত পর্ব ৪
- দাজ্জালের দৈহিক বিবরণ ও অবস্থান। – কিয়ামত পর্ব ৫
- দাজ্জাল আগমনের পূর্বে বিশ্ব পরিস্থিতি ও দাজ্জালের অবস্থান নিয়ে কিছু কথা। – কিয়ামত পর্ব ৬
- দাব্বাতুল আরদ কী? – কিয়ামত পর্ব ৮
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় ও সংখ্যা। – কিয়ামত পর্ব ৯
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় বাকি অংশ – কিয়ামত পর্ব ১০।
দাজ্জালের দৈহিক গঠনঃ
o খাট এবং দুই নলার মাঝে যথেষ্ট দূরত্বের দরুন চলনে ত্রুটিযুক্ত।
o চুল অস্বাভাবিক কুকড়ো এবং অগোছালো।
o অত্যাধিক ঘন কেশ বিশিষ্ট।
o ফোলা আঙ্গুরের ন্যায় উত্থিত চোখ। বাম চোখে সম্পূর্ণ কানা।
o অস্বাভাবিক শুভ্র দেহবর্ণ।
o প্রশস্ত কপাল।
o দু’চোখের মাঝামাঝিতে ﻙ ﻑ ﺭ (কাফের) লেখা থাকবে, যা শিক্ষিত title=”আরো…” alt=”” src=”http://www.islamerbani.ml/wp-includes/js/tinymce/plugins/wordpress/img/trans.gif” /> অশিক্ষিত সকল মুমিনের দৃষ্টিগোচর হবে।
o আঁটকুড়ে। এক কথায় দাজ্জাল খাট, বিশাল দেহ, বিশাল মাথা, উভয় চোখে ত্রুটিযুক্ত, ডান চোখটি ভাসমান আঙ্গুর সদৃশ (কানা), বাম চোখে চামড়া, ঘন কুকড়ো ও অগোছালো চুল, সাদা চামড়ার দেহ, দুই নলার মধ্যবর্তী স্থানে যথেষ্ট ফাক এবং দুই চোখের মাঝে
ﻙ ﻑ ﺭ (কাফের) লেখা বিশিষ্ট হবে।
দাজ্জালের প্রকাশ-স্থলঃ
আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “নিশ্চয় দাজ্জাল প্রাচ্যের খোরসান এলাকা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। স্থূল বর্ম সদৃশ চেহারা-ধারী কিছু প্রজাতি তার অনুসারী হবে।-” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)
দাজ্জালের প্রাথমিক প্রকাশ ও প্রসিদ্ধি (আল্লাহই ভাল জানেন) শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী কোন স্থান থেকে হবে। নাওয়াছ বিন ছামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “সে (দাজ্জাল) শাম এবং ইরাকের মধ্যবর্তী একটি সড়ক থেকে আত্মপ্রকাশ করবে।-” (মুসলিম)
দাজ্জাল ও তার গুপ্তচরের কাহিনী আমের বিন শুরাহিল থেকে বর্ণিত, তিনি ফাতেমা বিনতে কায়েস রা.-কে বললেন- সরাসরি নবী করীম সা. থেকে শুনেছেন, এমন একটি হাদিস আমাকে শুনান! ফাতেমা রা. বললেন- আমার কাছে সেরকম হাদিস-ই আছে!
বর্ণনাকারী বললেন- তাহলে শুনান!
বলতে লাগলেন- “একদা মুয়াজ্জিনের ‘-নামায দাড়িয়েছে’- ঘোষণা শুনে মসজিদে গেলাম। পুরুষদের পেছনে মহিলাদের কাতারে দাড়িয়ে নবীজীর ইমামতিতে আমরা নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মৃদু হাসি নিয়ে নবীজী মিম্বরে বসলেন।
o বললেন, সবাই নিজ নিজ স্থানে বসে থাক! কিছুক্ষণ পর বললেন- বুঝতে পেরেছ? কি জন্য তোমাদের বসতে বলেছি!!
o সবাই বলল- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল-ই বেশি জানেন!!
o বললেন- আল্লাহর শপথ! কোন উৎসাহ বা ভীতিপ্রদর্শনের জন্য তোমাদের বসতে বলিনি। তামিম দারী একজন খৃষ্টান ছিল। এখানে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। মাছীহ দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের কাছে যা বলতাম, সে-ও আমাকে সে রকম কিছু কথা শুনিয়েছে। বলেছে- একদা লাখম ও জুযাম গোত্রদ্বয়ের কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে সে সমুদ্র ভ্রমণে বের হয়। অতঃপর সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এক মাস পর্যন্ত ঢেও তাদের নিয়ে খেলা করতে থাকে। অবশেষে একদিন সূর্য প্রস্থানের সময় তাদের জাহাজটি এক অচীন দ্বীপে গিয়ে ভিড়ে। জাহাজ থেকে অবতরণ মাত্রই এক অদ্ভূত প্রাণীর সাথে তাদের সাক্ষাত ঘটে। চুল দিয়ে সারা গা ঢাকা থাকায় সামন-পেছন বুঝা যাচ্ছিল না।
o তারা বলল- কপাল পুড়ুক তোর! কে তুই?
o প্রাণীটি বলল- আমি হলাম গুপ্তচর!
o গুপ্তচর মানে?
o এত কিছু জেনে তোমাদের লাভ নেই! ওই জনশূন্য প্রান্তরে এক ব্যক্তি অধির আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। যাও! তার সাথে গিয়ে সাক্ষাত কর!
o তামীম বলল- অতঃপর শয়তান মনে করে আমরা তার থেকে কেটে পড়লাম। জনশূন্য প্রান্তরে (দুর্গ সদৃশ) গিয়ে দেখি এক মহা মানব। দু-হাত ঘাড় পর্যন্ত এবং দু-হাটু থেকে পায়ের গিঁঠ পর্যন্ত লোহার শিকলে বাঁধা। এমন সুবিশাল মানব এবং শক্ত বাঁধনযুক্ত ব্যক্তি ইতিপূর্বে কোনদিন আমরা দেখিনি।
o বললাম- ধ্বংস হোক তোর! কে তুই!
o মহা মানব বলল- এসেই যখন পড়েছ! তবে অচিরেই জানতে পারবে। আগে বল- তোমরা কারা?
o আমরা আরব্য জাতি। নৌ ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। ঝড়ের কবলে পড়ে দীর্ঘ এক মাস দিকভ্রান্ত থাকার পর অবশেষে জাহাজ এই দ্বীপে এসে ভিড়েছে। জাহাজের নিকটেই আমরা বসেছিলাম। হঠাৎ এক অদ্ভুত প্রাণীর দেখা মিলল। সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে তোর কাছে আসতে বলল। তুই নাকি আমাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিস!
o মহা মানব বলল- বাইছান এলাকার খেজুর বাগানের কি অবস্থা?
o মানে?
o অর্থাৎ বৃক্ষ গুলি থেকে কি এখনো খেজুর
হয়?
o বললাম- হ্যাঁ…!
o অচিরেই খেজুর বন্ধ হয়ে যাবে!
o মহা মানব বলল- বুহাইরা তাবারিয়ার কি অবস্থা?
o মানে?
o সেই লেকে কি এখনো পানি আছে?
o হ্যাঁ..! ওখানে প্রচুর পানি!
o অচিরেই সেই পানি চলে যাবে।
o মহা মানব বলল- যুগার ঝর্ণার কি অবস্থা?
o মানে?
o ঝর্ণায় কি আদৌ পানি অবশিষ্ট আছে? নাকি শুকিয়ে গেছে! স্থানীয় লোকেরা কি চাষাবাদের জন্য ঝর্ণার পানি ব্যবহার করতে পারে?
o হ্যাঁ..! ওই ঝর্ণা থেকে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়। স্থানীয়রা চাষাবাদে সে পানি ব্যবহার করে থাকে।
o মহা মানব বলল- আরবের শেষনবী সম্পর্কে আমাকে বল! সে কি কি করেছে!!
o বললাম- তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে গেছেন।
o আরব জাতি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি?
o হ্যাঁ…! করেছে।
o ফলাফল কি?
o আশপাশের আরবদের উপর তিনি বিজয়ী হয়েছেন। সবাই তার অনুসরণে এগিয়ে আসছে।
o বাস্তবেই এমনটি হয়ে গেছে!
o হ্যাঁ..! তাঁকে অনুসরণের মাঝেই আরবের কল্যাণ নিহিত।
o মহা মানব বলল- আমি এখন নিজের পরিচয় দিচ্ছি। শুন! আমি হলাম মাছীহ দাজ্জাল! অচিরেই আমাকে বাঁধন মুক্ত করা হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনে সারাবিশ্ব ভ্রমণ করব। তবে মক্কা এবং তাইবা-য় আমাকে ঢুকতে দেয়া হবে না। যখনই এলাকাদ্বয়ে ঢুকতে চাইব,
তরবারী হাতে ফেরেশতা আমাকে ধাওয়া করবে। সেদিন মক্কা-মদীনার প্রতিটি সড়কে ফেরেশতারা প্রহরী থাকবে।
দীর্ঘ হাদিসটি বর্ণনার পর লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে নবীজী বলতে লাগলেন- এটাই হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই হচ্ছে তাইবা নগরী (অর্থাৎ মদীনার অপর নাম তাইবা)! আমি কি তোমাদের কাছে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করতে পেরেছি?!!
সকলেই একবাক্যে বলল- হ্যাঁ..!
অতঃপর নবীজী বললেন- দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করতাম, অনেকাংশেই তা তামিমে দারীর ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মনে রেখো! দাজ্জাল হয়ত এখন শামের সাগরে আছে অথবা ইয়েমেনের সাগরে আছে; না..! বরং সে পূর্বদিকে আছে…
পূর্বদিকে আছে… পূর্বদিকে আছে…!!! (পূর্বদিকে হাতে ইশারা করছিলেন)।”
বর্ণনাকারী ফাতেমা রা. বলেন- নবীজীর এই হাদিসটি আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি! – (মুসলিম)