মঙ্গলবার, মার্চ 21
Shadow

সূরা ফালাক্ব ও নাস – অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনার সূরা।

‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’। লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথেঃ


সব ধরনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দুই সূরা

পবিত্র কোরআনে কারিমের শেষের দু’টি সূরাকে মুআউবিয়াতায়ন বলে। এ দুই সূরার একটির নাম সূরা ফালাক এবং অন্যটির নাম সূরা নাস। উভয় সূরা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফালাক ১১৩ নম্বর সূরা, আয়াত ৫টি, রুকু ১টি আর সূরা নাসের আয়াত ৬টি, রুকু ১টি। এই দুই সূরার মাধ্যমে কোরআন শরিফ শেষ করা হয়েছে।

এই দুই সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। অর্থা‍ৎ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। আর আল্লাহতায়ালা এই দুই সূরার মাঝে সব অনিষ্ট থেকে হেফাজতের অসীম শক্তি ও প্রভাব রেখেছেন এবং বিভিন্ন হাদিসে এ সূরার ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো।

এক. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখাও যায়নি এবং শোনাও যায়নি। আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। -সহি মুসলিম হাদিস নং-৮১৪

দুই. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনির পেছনে চলছিলাম, তিনি আমাকে বললেন, হে উকবা: আমি কি তোমাকে পঠিত দু’টি উত্তম সূরা শিখাব না, ফলে তিনি আমাকে শিখালেন কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। আমার মনে নেই, এ দু’টি সূরা কত বেশি আমাকে আনন্দ দিয়েছে। -আবু দাউদ হাদিস নং-১৪৬২

তিন. হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে জাবের তুমি পড়। আমি বললাম আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমি কি পড়ব। তিনি বললেন, তুমি পড় কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। ফলে আমি সূরা দু’টি পড়লাম অতঃপর তিনি বললেন, এই দুই সূরা পড়তে থাকবে (কারণ) এই দুই সূরার মতো (অন্য সূরা) সহজে পড়তে পারবে না।- সুনানে নাসাঈ ৮/২৫৪ ও সহি ইবনে হিববান, হাদিস নং-৭৯৬

চার. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সূরা ইউসুফ, সূরা হুদ পড়ি। তিনি বললেন হে উকবা! তুমি কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক পড়। কেননা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দ ও পৌঁছার ক্ষেত্রে সহজ অন্য কোনো সূরা পড়ার মধ্যে নেই। যদি সম্ভব হয় তাহলে তোমার থেকে এটা ছুটে না যায়। সুতরাং তুমি এটা পড়তে থাকবে। -মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪০

পাঁচ. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। -সহি বুখারি ৫০১৭, সুনানে আবু দাউদ : ৫০৫৮, জামে তিরমিজি, হাদিস নং-৩৪০২

ছয়. হজরত উকবা ইবনে আমের জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমি এর মতো অনুরূপ দেখিনি। কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। -জামে তিরমিজি, হাদিস নং-২৯০২

তিন কুলের ফজিলতঃ

হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে যুহফা ও আবওয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় চলছিলাম।

এমন সময় আমাদেরকে প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকারে ঢেকে ফেলে।

তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সূরা কুল-আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব ও সূরা কুল-আউযু বিরাব্বিন্নাস দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন।

আর বললেন, হে উকবা! এগুলো দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা, এগুলোর ন্যায় কোন সূরা দ্বারা, কোন প্রার্থনাকারী আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে না।

অর্থাৎ এই দুই সূরা আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য সব থেকে উত্তম সূরা।

(আবু দাউদ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, একবার আমরা ঝড় বৃষ্টি ও ঘোর অন্ধকারময় এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তালাশে বাহির হলাম এবং তাকে পেলাম।

তখন তিনি বললেন, পড়। আমি বললাম, কী পড়বো?  তিনি বললেন, তিনবার পড়- “কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল-আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব ও কুল- আউযু বিরাব্বিন্নাস”

এটা প্রত্যেক বস্তুর (বিপদাপদের) মোকাবেলায় জন্য যথেষ্ট হবে।

(তিরমিযী, আবু দাঊদ ও নাসাঈ)

হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, একবার আমি বললাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ! (বিপদ হতে রক্ষার ব্যাপারে) আমি কি সূরা হুদ পড়ব?

না সূরা ইউসুফ? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে সূরা “কুল-আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব” অপেক্ষা আল্লাহর নিকট উত্তম কোন সূরা, তুমি কখনো পড়তে পারবে না।

(আহমদ, নাসাঈ ও দারেমী)

হুজুর সা. প্রত্যেক রাতে প্রথমে নিজের শরীর ফু দিতেন অত:পর সূরা এখলাস, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস পাঠ করতেন:

হযরত আয়শা (রা.) হতে বর্ণিত আছে নবী কারীম (সা.) যখন প্রত্যেক রাতে শয্যা গ্রহণ করতেন, দুই হাতের তালু একত্র করে ফু দিতেন।

অত:পর তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস পড়তেন। তৎপর দুই হাতের তালু দ্বারা আপন শরীরে যা সম্ভবপর হত মুছে ফেলতেন।

আরম্ভ করতেন মাথা ও চেহারা এবং শরীরে সম্মুখভাগ থেকে। এইরূপ তিনি তিনবার করতেন।

(মোত্তা:)

ব্যাখ্যা:

এই হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, হুজুর (সা.) প্রথমে দুই হাতের তালু একত্র করে ফু দিতেন, অত:পর তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস পাঠ করতেন।

সুতরাং কিছু ধর্মজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বলেছেন যে, নবীজীর এই নিয়মটা জাদুকরদের বিরোধীতা করার জন্য। কেননা তারা প্রথমে পাঠ করে এবং পরে ফু দেয়।

সুরা নাস ও ফালাক্বের আরো কিছু ফজিলত:

হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আশ্চর্য!  আজ রাতে এমন কতক আয়াত নাজিল হয়েছে,

যা পূর্বে এর অনুরূপ কোন আয়াত দেখা যায়নি। “কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব” ও “কুল আউযু বিরাব্বিন নাস”

(মুসলিম)

সূরা আল ইখলাস অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু

সূরা আল ফালাক অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু

সূরা আন নাস অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু

ব্যাখ্যা:

বিপদআপদ হতে আল্লাহর স্মরণ হওয়ার পক্ষে এই সূরাগুলির অপেক্ষা উত্তম সূরা আর নেই।

আহ! আজ আমরা কোথায় আছি! আজ আমাদের এ পরিণামের জন্য কি আমাদের এ অবেহেলাই দায়ী নয়?

আল্লামা ইকবালের ভাষায়:

“তারা ছিল বিশ্বে সেরা হয়ে মুসলমান,

তোমরা হলে বিড়ম্বিত ছেড়ে দিয়ে, আল কোরআন ”

(সূত্র: কোরআনের মহিমা-১২৬,১২৭)



‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’। লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথেঃ

মন্তব্য করুন

Verified by MonsterInsights