- কিয়ামত কি ও কখন হবে? পর্ব ১
- কিয়ামতের আলামত বা নিদর্শন সমূহ – কিয়ামত পর্ব ২।
- কিয়ামতের বড় আলামত সমূহ – কিয়ামত – পর্ব ৩
- কিয়ামতের বড় আলামত – মসীহুদ দাজ্জালের পরিচয়। কিয়ামত পর্ব ৪
- দাজ্জালের দৈহিক বিবরণ ও অবস্থান। – কিয়ামত পর্ব ৫
- দাজ্জাল আগমনের পূর্বে বিশ্ব পরিস্থিতি ও দাজ্জালের অবস্থান নিয়ে কিছু কথা। – কিয়ামত পর্ব ৬
- দাব্বাতুল আরদ কী? – কিয়ামত পর্ব ৮
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় ও সংখ্যা। – কিয়ামত পর্ব ৯
- ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় বাকি অংশ – কিয়ামত পর্ব ১০।
হাদিসের আলোকে ইয়াজুজ মাজুজের শেষ পরিণতিঃ
* হযরত খালেদ বিন আব্দুল্লাহ -আপন খালা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- একদা নবী করীম সা. বিচ্ছু দংশনের ফলে মাথায় বেন্ডিস বাঁধাবস্থায় ছিলেন। বললেন- তোমরা তো মনে কর যে, তোমাদের কোন শত্রু নেই! (অবশ্যই নয়; বরং শত্রু আছে এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে)
তোমরা যুদ্ধ করতে থাকবে। অবশেষে ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব হবে। প্রশস্ত চেহারা, ক্ষুদ্র চোখ, কৃষ্ণ-চুলে আবছা রক্তিম। প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে তারা দ্রুত ছুটে আসবে। মনে হবে, তাদের চেহারা সুপরিসরবর্ম।” (মুসনাদে আহমদ, তাবারানী)
যেভাবে প্রাচীর ভেঙে যাবে যুলকারনাইনের নির্মিত সুদৃঢ় প্রাচীরের দরুন দীর্ঘকাল তারা পৃথিবীতে আসতে পারেনি। প্রাচীরের ওপারে অবশ্যই নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা জীবন যাপন করছে। তবে অদ্যাবধি তারা সেই প্রাচীর ভাঙতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, প্রাচীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী করীম সা. বলেন- “অতঃপর প্রতিদিন তারা প্রাচীর ছেদনকার্যে লিপ্ত হয়। ছিদ্র করতে করতে যখন পুরোটা উম্মোচনের উপক্রম হয়, তখনি তাদের একজন বলে, আজ তো অনেক করলাম, চল! বাকীটা আগামীকাল করব! পরদিন আল্লাহ পাক সেই প্রাচীরকে পূর্বে থেকেও শক্ত ও মজবুতরূপে পূর্ণ করে দেন। অতঃপর যখন সে-ই সময়
আসবে এবং আল্লাহ পাক তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেবেন, তখন তাদের একজন বলে উঠবে, আজ চল! আল্লাহ চাহেন তো আগামীকাল পূর্ণ খোদাই করে ফেলব! পরদিন পূর্ণ খোদাই করে তারা প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। মানুষের ঘরবাড়ী বিনষ্ট করবে,
সমুদ্রের পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ দূর দূরান্তে পলায়ন করবে। অতঃপর আকাশের দিকে তারা তীর ছুড়বে, তীর রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে।-” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম)
* হযরত যয়নব বিনতে জাহশ রা. থেকে বর্ণিত, একদা সন্ত্রস্ত চেহারায় নবী করীম সা. তার ঘরে প্রবেশ করে বললেন- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) ধিক আরবের! তাদের অনিষ্টতা কাছিয়ে গেছে।” হাতের দুই আঙ্গুলে ইশারা করে বললেন, ইয়াজূজ-মাজূজের প্রাচীর থেকে এতটুকু আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন- সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিবর্গ থাকতেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? বললেন- হ্যাঁ..! পাপাচার বেড়ে গেলে তাই হবে!!” (বুখারী- মুসলিম)
* হযরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন-
“আল্লাহ পাক আদমকে উদ্দেশ্য করে বলবেন- হে আদম! বলবে- উপস্থিত হে আল্লাহ! সকল কল্যাণ একমাত্র আপনার হাতেই! আল্লাহ বলবেন- জাহান্নামের উৎক্ষেপণ বের কর! আদম বলবে- জাহান্নামের উৎক্ষেপণ কি হে আল্লাহ!? আল্লাহ বলবেন- প্রতি হাজার থেকে নয়শ নিরানব্বই জন। শুনা মাত্রই আতঙ্কে শিশুর চুল সাদা হয়ে যাবে। গর্ভবতীর গর্ভপাত ঘটবে। মানুষকে সেদিন মাতাল মনে হবে; বাস্তবে মাতাল নয়, আল্লাহর আযাব বড় কঠিন। -সেই মুক্তিপ্রাপ্ত একজন কে হবে- প্রশ্নের উত্তরে নবীজী বললেন- সুসংবাদ গ্রহণ কর!
তোমাদের থেকে একজন এবং ইয়াজূজ-মাজূজ থেকে এক হাজার। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম – আল্লাহু আকবার- ধ্বনি দিল। নবীজী বললেন- তোমরা জান্নাতের একতৃতীয়াংশ হবে আমি আশা করি। সাহাবায়ে কেরাম আবার-ও আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করলেন।
নবীজী আর-ও বললেন- বরং তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে আমি আশা করি। আবার-ও আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারিত হল। (বুখারী)
* হযরত নাওয়াছ বিন ছামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “অতঃপর আল্লাহ ইয়াজূজ- মাজূজকে বের করবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে অবতরণ করবে। তাদের প্রথম দল বুহাইরা তাবারিয়া-য় এসে নিমিষেই সমস্ত পানি পান করে ফেলবে।
পরবর্তী দল এসে বলতে থাকবে- এখানে কোন কালে হয়ত পানি ছিল।-” (মুসলিম)
বুহাইরা তাবারিয়াঃ একে বুহাইরাতুল জালীল (জালীল উপসাগর)-ও বলা হয়। ইংরেজীতে টাইবেরিয়ান লেক। অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তীনে অবস্থিত এ লেকটি জর্ডান নদীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে আছে। লেক’টির দৈর্ঘ্য ২৩ কিঃ মিঃ। সর্বপ্রশস্ত ১৩ কিঃ মিঃ। গভীরতা ৪৪ মিটারের বেশি হবে না। লেকটি সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে ২১০ মিটার নিচুতে অবস্থিত।
নবী করীম সা. বলেন- “অতঃপর ইয়াজূজ-মাজূজ জেরুজালেমের -জাবালে খামর-এর দিকে গিয়ে বলবেঃ জমিনের অধিবাসীকে আমরা নিঃশেষ করেছি, এখন আসমানের অধিবাসীদের নিঃশেষ করব। একথা বলে তারা আসমানের দিকে তীর ছুড়তে থাকবে।
আল্লাহ তাদের তীরকে রক্তিম করে ফিরিয়ে দেবেন। ঈসা ও তাঁর সাথীদেরকে অবরোধ করে ফেলা হবে। সেখানে তারা প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং অভাবে দিন যাপন করবে। খাদ্যের অভাবে ষাঁঢ়ের মুণ্ডু সেদিন একশ দিনারের চেয়ে-ও বেশি মূল্যের হবে। অতঃপর ঈসা ও তাঁর সাথীদের দোয়ার প্রেক্ষিতে আল্লাহ ইয়াজূজ- মাজূজদের স্কন্ধে এক প্রকার পোকা তৈরি করে দেবেন। ফলে নিমিষেই তারা ধ্বংসমুখে পতিত হবে। অতঃপর ঈসা ও তাঁর সাথীগণ তূর পর্বত থেকে নেমে এসে দেখবেন, ভূমিতে এক বিঘত পরিমাণ জায়গাও অবশিষ্ট নেই;
সর্বত্র তাদের লাশ পড়ে আছে। দুর্গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে আছে। ঈসা ও তাঁর সাথীগণ আবার-ও দোয়া করবেন। আল্লাহ পাক বড় ঊটের গলাসদৃশ বিরল কিছু পাখী পাঠাবেন। পাখীগুলো এসে ইয়াজূজ- মাজূজদের লাশগুলো আল্লাহর আদেশকৃত স্থানে ফেলে আসবে।
অতঃপর আল্লাহ জমিনে বরকতময় বৃষ্টি দিয়ে সকল জনপদ ও ঘরবাড়ীগুলো ধুয়ে দেবেন। সারা পৃথিবী আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে। অতঃপর বলা হবে- হে জমিন! ফসল উদগত কর! বরকত প্রকাশ কর! সেদিন একটি ডালিম একাধিক ব্যক্তিকে পরিতৃপ্ত করবে।
মানুষ ডালিমের খোলসকে ছায়াদানের কাজে ব্যবহার করবে। দুধের বরকত ফিরে আসবে। একটি মাত্র ঊষ্ট্রীর দুধ সেদিন বহু লোক মিলে পান করতে পারবে। গরুর দুধ সেদিন সারা গোত্রের মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বকরির দুধ সেদিন আত্মীয় স্বজন সবার জন্য যথেষ্ট হবে। এভাবে মুমিনগণ জীবনযাপন করতে থাকবেন। অবশেষে আল্লাহ মুমিনদের রূহ কব্জা করতে এক প্রকার সুবাতাস পাঠাবেন। বাহুমূলে স্পর্শিত হওয়া মাত্রই মুমিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। পৃথিবীতে কোন মুমিন অবশিষ্ট থাকবে না; থাকবে শুধু দুষ্ট ও দুশ্চরিত্র লোক, যারা গাধার ন্যায় রাস্তাঘাটে কুকর্মে লিপ্ত হবে। তাদের উপর-ই কেয়ামতের কঠিন আযাব নিপতিত হবে।-” (মুসলিম)
অপর হাদিসে- “মুমিনগণ ইয়াজূজ-মাজূজের নিক্ষেপিত তীর-ধনুক দিয়ে সাত বৎসর পর্যন্ত লাকড়ির কাজ চালাবে।
* হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- “মেরাজের রাত্রিতে নবীজী, ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আ. মিলে কেয়ামত
প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন। সবাই মিলে ঈসাকে বলতে বললে ঈসা আ. বললেন- দাজ্জাল হত্যার পর সকলেই নিজ নিজ দেশে গিয়ে দেখবে ইয়াজূজ-মাজূজ বেরিয়ে এসেছে। সবাই দ্রুত পালিয়ে আমার কাছে চলে আসবে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব। আল্লাহ ইয়াজূজ- মাজূজকে ধ্বংস করে দেবেন। সর্বত্রই তাদের পঁচা লাশ পড়ে থাকবে। আবার আল্লাহর কাছে দোয়া করব। আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তাদের লাশগুলিকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবেন।-” (মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম)
মূল লেখকঃ (najmul hassaan))