সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । আমরা শুধু তারই প্রশংসা করি এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তার নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই।
আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
ইরশাদ হচ্ছে-
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাকে ভয় কর আর সাবধান, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ (আলে ইমরান:১০২)
‘‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী, আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচনা করে থাক এবং আত্মীয়- জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।’’ (নিসা:১)
আরো বলেন-
‘‘হে ঈমানদার গণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’’ (আল আহযাব:৭০-৭১)
নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আর্দশ হল রাসূলের আদর্শ। আর সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল মনগড়া ও নব প্রবর্তিত বিষয় তথা বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই হল গোমরাহী। আর প্রতিটি গোরাহীর পরিনাম জাহান্নাম।
আল্লাহ বলেন:
‘‘যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।’’ (নিসা:৩১)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, কারণ ছগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন- সালাত, সওম, জুমআ, রমযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘পাচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমআ হতে অন্য জুমআ এবং এক রমযান হতে অন্য রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ হতে বেচে থাকা যায়।’’ (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকা অতীব জরুরী । যদিও জ্ঞানীরা বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না । আর একই গুনাহ বার বার করলে তা ছগীরা থাকে না।
অতএব কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন রা. বলেন – লোকেরা রাসূল সা.কে ভাল ভাল বিষয়গুলি জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। কবি বলেন-
‘‘আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি তা করার উদ্দেশে নয়,বরং খারাপি হতে রক্ষা পেতে। কারণ, যে লোক মন্দ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখে না সে তাতে পতিত হয়।’’
বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করে যে সব কবীরা গুনাহ হাফেয ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী তার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘‘আল কাবায়ের’’ এ উল্লেখ করেছেন সে গুলোসহ আরো কিছু কবীরা গুনাহের আলোচনা করা হয়েছে।
এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ হতে বেচে থাকাও সম্ভব হবে।
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন কোন স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহর নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে র্প্রাথনা করছি যে,এই রিসালার মধ্যে যে বিষয়গুলি রয়েছে তার দ্বারা আমাকে এবং সমস্ত মুসলমানকে প্রতিদান দিবেন ঐ দিন যে দিন কোন ধন সম্পদ ও সন্তান কারো উপকারে আসবে না। একমাত্র ঐ ব্যক্তি উপকৃত হবে যে আল্লাহর নিকট সরল মন নিয়ে উপস্থিত হবেন । আর এই আমল সহ অন্য সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি তার সন্তুষ্টি অর্জন ও কুরআন, হাদীসের অনুসৃত পথ নির্দেশনা অনুসলরণ করার তওফীক দিন।
কবীরা গুনাহ কি?
অনেকেই মনে করেন,কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অর্ন্তভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোন কবীরা গুনাহ নেই।
একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন- কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত-(তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)।
ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয়নি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হল: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই ছগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা ছগীরা (ছোট ) গুনাহ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নীচে তুলে ধরা হলঃ
শিরক দুই প্রকারঃ
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি।
যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক ।
দীলল:
‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’’ (নিসা: ৪৮)
২.শিরকে আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘‘অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।’’ (মাউন:৪-৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘‘আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।’’ (মুসলিম:৫৩০০)
আল্লাহ বলেন:—
‘‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না,আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।’’ (সূরা আল-ফোরকান:৬৮-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
আল্লাহ বলেন:
‘‘কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।’’ (বাকারা:১০২)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি? তিনি জবাবে বলেন
১- আল্লাহর সাথে শরিক করা,
২- যাদু করা,
৩- অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আললাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন,
৪- সুদ খাওয়া,
৫-এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা,
৬- জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা,
৭- সতী সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।’’ (বুখারী:২৫৬)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
‘‘তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’’ (মারইয়াম ৫৯-৬০)
হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।’’ (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘‘আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’’ (আহমাদ:২১৮৫৯)
আল্লাহ বলেন-
‘‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’’ (আল ইমরান:১৮০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল,
(২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
(৩) যাকাত দেয়া,
(৪) হজ্জ করা,
(৫) রামযান মাসের সওম রাখা।’’] (বুখারী:৭)
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-
‘‘আর এ ঘরের হজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।’’ (আল-ইমরান:৯৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না ? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’’ (বুখারী:৬৪৬)
আল্লাহ বলেন-
‘‘ক্ষমতা লাভের পর স্মভবত: তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিস্মপাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।’’ (মুহাম্মদ:২২-২৩)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আত্মীয়তার ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’’ ( মুসলিম:৪৬৩৩)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না । নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ওঅতি মন্দ পথ।’’ (ইসরা:৩২)
রাসূলেকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।’’ (তিরমিযি:২৫৪৯)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (মুসলিম:৪৮০২)
আল্লাহ বলেন-
‘‘এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদদিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়।’’ (আ‘রাফ; ৮০-৮১)
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।’’ (তিরমিযি:১২৭৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।’’ (তিরমিযী , সহীহ আল জামে)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।’’ (বাকারা : ২৭৫)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘‘সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর হলো কোন মুসলমানের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।’’ (হাকেম, সহীহ আল জামে)
আল্লাহ বলেন-
‘‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’’ (নিসা: ১০)
আল্লাহ বলেন-
‘‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।’’ (যুমার: ৬০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।’’ (বুখারী:১০৭)
হাসান রাহ. বলেন- স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেননি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেননি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করল এবং কুফরী করল।’’
আল্লাহ বলেন-
‘‘&আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান হতে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।’’ (আনফাল:১৬)
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলমানরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আল্লাহ বলেন-
‘‘শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ (সূরা আশ-শূরা : ৪২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।’’ (মুসলিম:৪৮৬৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
‘‘অত্যাচার কেয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।’’ ( বুখারী:২২৬৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।’’ (ইবনে আসাকির , সহীহ আল জামে)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।’’ (আবু দাউদ:২৫৫৯)
বর্তমানে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক কারণ আমরা আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করি। । আর বাতিলের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ, নির্বিকার এবং অন্যায়ের কোন প্রতিকার নেই।
আল্লাহ বলেন-
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না’’ (সূরা নাহল:২৩)
যে ব্যক্তি সত্যের বিরুদ্ধে অহংকার করে তার ঈমান তার কোন উপকার করতে পারে না। ইবলিস-এর অবস্থা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমান অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি চায় তার জামা-কাপড়, জুতা -সেন্ডেল সুন্দর হোম তাহলে এটাও কি অহংকার? রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অর্থাৎ এগুলি অহংকারের অর্ন্তভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানূষকে অবজ্ঞা করা।’’ (মুসলিম)
আল্লাহ বলেন-
‘‘অহংকার বশে তুমি মানুকে অবজ্ঞা করোনা এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না ।’’ (লোকমান:১৮)
রাসূল সা বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা বলেন-: মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে টানা হেচাড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’’ (মুসলিম)
আল্লাহ বলেন-
‘‘ তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না ।’’ (সূরা আল ফুরকান: ৭২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাত-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।’’ (বুখারী:৬৪৬০)
আল্লাহ বলেন-
‘‘হে মুমিনগন ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নায় । অতএব এগুলো তেকে বেচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৯০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।’’ (মুসলিম:৩৭৩৪)
‘‘আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রোতা, প্রস্ত্ততকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন। ’’ (আবূ দাউদ:৩১৮৯)
আল্লাহ বলেন-
‘‘হে মুমিনগন ! এই যে মদ ,জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয় । অতএব তোমরা এগুলো থেকে বেচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।’’ (মায়েদা: ৯০)
আল্লাহ বলেন-
‘‘যারা সতী সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’’ (আন নূর: ২৩)
কোন সতী সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়াকে কযফ বলে (قذف) বলে।
যে ব্যক্তি গনীমতের মাল পাওনাদেরদের মধ্যে বন্টন পূর্বে কোন কিছু আত্নসাৎ করে করে, সে,কেয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে বহন করা অবস্থায় উপস্থিত হবে।
আল্লাহ বলেন-
‘‘আর যে ব্যক্তি গনীমাতের মালে খেয়ানত করল সে কেয়ামতের দিবসে সেই খেয়ানতকৃত বস্ত্ত বহন করে উপস্থিত হবে।’’ (সূরা আল-ইমরান:১৬১)
শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্নসাৎ বা তাতে খিয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ বলেন-
‘‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দন্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।’’ (সূরা মায়েদা: ৩৮)
অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেয়া। বা তাদের পিছু নিয়োতদের ইজ্জত স্মভ্রম বিনষ্ট করা।
আল্লাহ বলেন-
‘‘আর যারা আল্লাহ, তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করেতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হল তাদের পাথির্ব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৩৩)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোন মুসলামের সম্পদকে অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত।’’ (বুখারী:৬৬৪৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কবীরা গুনাহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা । মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা’’। (বুখারী:৬১৮২)
জুলুম বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করা অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেয়া, তাদের উপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের উপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম। আল্লাহ বলেন-
‘‘অত্যাচারী রা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।’’ (সূরা আশ-শুআরা: ২২৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘তোমরা যুলুম করা থেকে বেচে থাক, কারণ যুলম কেয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার পরিণতি হবে’’ (মুসলিম:৪৬৭৫)
বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি, কারণ এতে মানুষের উপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী চাদাবাজ মূলত যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে জুলুমকারী ও অত্যাচারী।
আল্লাহ বলেন-
‘‘ব্যবস্থা নেয়া হবে শুধূ তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি।’’ ( সূরা আশ-শুরা : ৪২)
নবী করীম এরশাদ করেন-
তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন অনেক সালাত, সওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, করেছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে । কেয়ামাতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা ছওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেয়া হবে। যদি তার নেক আমলের ছওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তাখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তার পর তাকের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ।’’ (মুসলিম:৭৬৮৬)
আল্লাহ বলেন-
‘‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’’ (সূরা আল বাকারা: ১৮৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘‘কোন ব্যক্তি দীর্ঘপথ অথিক্রমা করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা-বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দুআ করতে থাকে আর বলতে থাকে: হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দুআ কবুল করা হবে?’’
(মুসলিম:১৬৮৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা জুলমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (সূরা আন-নিসা: ২৯-৩০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিজেকে হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা দোযখের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। ’’ (মসলিম:১৫৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায় । আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথ্যুক হিসাবে তার নাম লেখা হয়।’’ (বুখারী:৫৬২৯)
আল্লাহ বলেন-
‘‘এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।’’ (আল-ইমরান: ৬১)
আল্লাহ বলেন-
‘‘এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৪৪)
তিনি আরো বলেন-
এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা জালেম।’’
তিনি আরো বলেন-
‘‘যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকর্য পরিচালনা করে না তারা ফাসেক।’’ (সূরা আল-মায়েদা : ৪৭)
আল্লাহ বলেন:
‘‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।’’ (বাকারা: ১৮৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।’’ (আহমাদ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোন বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপটোকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।’’
(আহমদ:৬৬৮৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘আল্লাহ তাআলা পুরুষের বেশ ধারনকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারনকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।’’ (আবুদাউদ: ৩৫৭৪))
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জন্য জান্নাত হারাম করেছেন,
(১) যে মদ তৈরী করে
(২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে
(৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।’’ (আহমাদ:৫৮৩৯)
দাইউস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।’’ (আহমাদ:৭৯৩৭)
এর ব্যাখ্যা হল: কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
‘‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন বড় বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্য জন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।’’ (বুখারী, মুসলিম:৬১১)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র করা।’’ (সূরা আল-মুদ্দাসসির:৪)
অতএব, আপনাদের কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না জড়ায়। যদি কোন কারণে জড়িয়েও যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নিবেন।
আমরা আমাদের নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য এই বিপদ হতে মহান আল্লাহর দয়া ও রহমতের দ্বারা পরিত্রাণ কামনা করছি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘তোমাদের নিকট কি পৌছে নাই যে, যে ব্যক্তি চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃত করে অথবা চেহারার উপর আঘাত করে আমি তার উপর অভিশাপ করছি।’’ (আবু দাউদ:২২০১)
আল্লাহ বলেন-
‘‘আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরা আল-বাকারা: ১৫৯-১৩০)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের উপর প্রধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’’ (ইবনে মাজা:২৫৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি দ্বীনি এলেম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’’ (আবু দাউদ:৩১৭৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে শুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত করো না। (সূরা আল-আনফাল: ২৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যার আমানতদারী নাই, তার ঈমান নাই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নাই তার ধর্ম নাই।’’ (আহমদ:১১৯৩৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফেক । আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে (১) যাখন তার নিকট আমানত রাখা হয়া সে, খেয়ানত করে।’’ (বুখারী:৩৩)
আল্লাহ বলেন-
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানু ছদকা ধংস করো না।’’ (সূরা আল-বাকারা: ২৬৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রদায়ক শাস্তি।
(১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টখনু-গিরার নীচে ঝুলিয়ে দেয়,
(২) খোটাদানকারী, যে কোন কিছূ দান করে খোটা দেয়
(৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।’’ (মুসলিম:১৫৫)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘যদি আল্লাহ তাআলা আসামান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেয়াটা কোন প্রকার অন্যায় হবে না । আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশী হবে। যাদি কোন ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোন ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তকদীর অনুযায়ী করেছে এট ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের রাইরে মৃত্যু বরণ কর তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সহীহ, কিতাবুস সুন্নাহ: ইবনে আবী আসিম আশ-শায়বানী)
আল্লাহ বলেন-
‘‘তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুজে বেড়াবে না।’’ (সূরা আল-হুজরাত: ১২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনচ্ছিা সত্ত্বেও, তাহলে কেয়ামতের দিন তার কানে গলিত শীশা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোন জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখেনি তাকে শাস্তি হিসেবে দু’টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে । কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।’’ (বুখারী:৬৫২০)
আল্লাহ বলেন-
‘‘যে বেশী শপথ করে এবং যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে আপনি তার আনুগত্য করবে না।’’ (সূরা আল – কলম:১০-১১)
নমীমাহ বলা হয, যে ব্যক্তি একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায় পারস্পরিক ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন , এ কবরবাসীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (বূখারী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘মুসলমানদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।’’ (বুখারী:৪৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কোন লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তথন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে । কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু জমিনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অহতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হল তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।’’ (আবু দাউদ:৪৬৫৯)
যে কারণেই হোক কোন মুসলিম ভইয়ের উপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের উপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফেরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘চারটি দোষ যার মথ্যে পাওয়া যাবে সে খাটি মুনাফেক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফেকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল । যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খেয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।’’ (বুখারী:৩৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘প্রত্যেক ওয়াদা অঙ্গকারীর জন্যে কেয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগনের সাথে প্রতারণাকারী শাসকে চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।’’ (মুসলিম:৩২৭২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যা নযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।’’ (আহমাদ:১২৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট আসলো তার পর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।’’ (মুসলিম:৪১৩৭)
আল্লাহ বলেন-
‘‘আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপরে শ্রেষ্ঠ।’’ (নিসা:৩৪)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশাদ করেন-
‘‘যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা অভিশাপ করতে থাকে।’’ (বুখারী:২৯৯৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম আরা যেন তাদের স্বামীদের সেজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।’’ (আহমাদ:১০৭৯)
সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সেজাদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সেজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।’’ (আহমাদ, সহীহ আল জামে)
সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষিট হতে বেচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শরয়ী কোন আপত্তি থাকে তবে যেমন – হায়েয নেফাস অথবা ফরয সওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস হতে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।’’ (বুখারী:৩০০২)
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফেয শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্ভন করে, যা মানুষকে ফিৎনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘মহিলারা আবরণীয় । কিন্তু যখন তারা রাস্তায় বের হয় তখন শয়তান তাকে মাথা উঁচু করে দেখে।’’ (তিরমিযি:১০৯৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘মহিলারা হল আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশী ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লার নৈকট্য লাভ করবে।’’ (তিরমিজী, সহীহ আল জামে)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আমার পরে পুরুষদের উপর মহিলাদের মত ক্ষতিকর আর কোন ফিৎনা আমি রেখে যাইনি।’’ (মুসলিম:৭৪০৬)
মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘর অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সর্ম্পকে সচেতন থাকা, স্বামীর উপর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোন প্রকার কলংক না জড়ানো।
উল্লেখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণ, বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।
হে মুসলিম ভাইয়েরা ! আপনাদের প্রতি আমার বিনীত উপদেশ এই যে, আপনারা এমন নারীদের বিবাহ করবেন যারা মুমিনা, পর্দানশীল, স্বামীর অনুগত, আপনার ধন স্পদ রক্ষাকারিণী এবং সে পর্দাহীনভাবে সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে রাস্তায় বের হবে না। আর আপনার আনুগত্য করবে।
যদি আপনার স্ত্রী মুমিনা ও অনুগতা মহিলা হয় তাহলে আপনি হিতাকাঙ্খী হবেন, তার সাথে কোন রকমের হঠকারিতাপূর্ণ আচরণ করবেন না।
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তোমরা মেয়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা তাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।’’ (বুখারী:৩০৮৪)
তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হল, আল্লাহর আদেরশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া এবং নিষেধ কাজ হতে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলি তাদেরকে জান্নাতের পথের নিয়ে যায়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দান কর।’’ (বুখারী:৪৭৮৩)
আয়েশা রা, হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
‘‘একদিন রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পর্দা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পর্দাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারার বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা !,কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলমবন করে কিছু তৈরী করে। আয়েশা রা. বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি ফথবা দুটি বালিশ তৈরী করি।’’ (বুখারী:৫৪৯৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়।’’ (বুখারী:১২১২)
আল্লাহ বলেন-
‘‘ব্যবস্থা নেয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহকরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। ’’ (শুরা: ৪২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, ,তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো উপর গর্ব না করে আর কোউ যেন কারো উপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।’’ (আবুদাউদ:৪২৫০)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দু’টি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখেরাতে নির্ধারিত থাকা সত্বেও দুনিয়াতে দেয়া হবে।’’ (আহমাদ:৪২০১)
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোন অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।’’ (মুসলিম:৩১৩১)
রাসূল সা. বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।’’ (মুসলিম:৪৭৩৪)
রাসূল বলেন-
‘‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।’’ (মুসলিম:৬৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’’ (সূরা আল আহযাব: ৫৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কেয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিকে দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা হতে বাচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।’’ (বুখারী:৫৫৭২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘গোড়ালির নীচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।’’ (বুখারী:৫৩৪১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।’’ (বুখারী:৫৩৪২)
বর্তমানে এ ব্যধি একেবারে সাধারণ হয়েছে। প্রায় সবার মধ্যে এ সমস্যাটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই দেখা যায় তারা গোড়ালির নীচে কাপড় পরধিান করে, অনেক সময় মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বিপদ থেকে রাকষা করুন। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষদের জন্য।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।’’ (বূখারী:৫২০৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখেরাতে কোন অংশই নেই। (বুখারী:৬০৫৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘গোলাম যখন পলায়ন করে তখন তার কোন নামাযই গ্রহণ করা হয় না।’’ (মুসলিম:১০৩)
অন্য বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ না সে তার মনিবের নিকট প্রত্যাবর্তন করে।
রাসূল বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ ।’’ (মুসলিম:৩৬৫৭)
গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করা দৃষ্টান্ত যেমন, কেউ জবেহ করার সময় বলে, আমি শয়তানের নামে জবেহ করাছি, অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে জবেহ করছি ইত্যাদি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার উপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।’’ (বুখারী৩৯৮২)
অর্থাৎ কারো কথার ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশের দোষ তালাশ করা । একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে,
‘‘যে ব্যক্তি অনর্থক কোন বিষয়ে জেনে শুনে বির্তক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবন যাপন করে যতক্ষণ না সে বির্তক থেকে ফিরে আসে।’’ (আবু দাউদ:৩১২৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কোন জাতি সঠিক পথের উপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হযেছে।’’ (তিরমিজী:৩১৭ , সহীহ আল জামে)
অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত ঘাস দান করা থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন দয়া ও সওয়াবের দিতে অস্বীকার করবেন।’’ (আহমদ:৬৩৮২)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুভোর্গ।’’ (মুতাফেফীন:১)
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বেশী বলতেন-
হে অন্তর পরিবর্তনকারী ! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখুন । অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করেন? রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে , তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন করেন।’’ (তিরমিজী:২০৬৬)
সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের ঈমান, আমল, নামায. ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশী ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবেন না। কারণ এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোন না কোন সময় তিনি এগুলি আপনার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আপনি উটের পেটের চেয়েও বেশী খালী হয়ে যাবেন। আপনি আপনার আমলের কারণে গর্ব করা হতে বিরত থাকুন এবং এমন কথা বলবেন না যা অজ্ঞ ও মূর্খরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভাল । আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আপনার দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকুন এবং এমন একটি অবস্থায় থাকুন যে অবস্থার বর্ণনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে দিয়েছেন-
তিনি বলেন-
‘‘তোমার সংসারে ব্যস্তাতা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের উপর কান্নাকাটি করবে।’’ (তিরমিজী)
ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
‘‘তারা কি? আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নির্ভয় হয় না।’’ (আরাফ: ৯৯)
বস্ত্তত আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রাথনা কর এবং সর্বদা এ কথা গুলো বলতে থাক-
‘‘হে অন্তরের পরিবর্তকারী! তুমি আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল অবিচল রাখ।’’
আল্লাহ বলেন-
‘‘আপনি বলে দিন, যে বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন ভক্ষণকারীর জন্যে কোন হারাম খাদ্য পাইনি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত ব্যতীত । এটা অপবিত্র।’’ (সূরা আল-আন আম : ১৪৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মত অন্যায় করে।’’ (মুসলিম:৪১৯৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকরের রক্ত গগোস্ত হাতে নেয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন শৃধু তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোস্ত খাওয়া যে কাত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ বিপদ হতে রাক্ষা করুন।
রাসূল বলেন-
‘‘যদি মানুষ জুমুআর সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ (দারমী:১৫২৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোন প্রকার ওজর ছাড়া সালাতের জামাতে উপস্থিত হল না তার সালাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।’’ (ইবনে মাজাহ:৭৮৫)
আল্লাহ বলেন-
‘‘তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত হতে একমাত্র কাফের সম্প্রাদায়ই নিরাশ হয়।’’ (ইউসুফ: ৮৭)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে।’’ (মুসলিম:৫১২৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি তার কোন মুসলমান ভাইকে বলে, হে কাফের! এর পরিণাম তাদের কোন না কোন একজনের উপর বর্তাবেই।’’ (বুখারী:৫২৩৮)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘কুচক্রের শাস্তি কারও উপর পতিত হয় না, কুচক্রীর উপরই পতিত হয়।’’ (ফাতের:৪৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘কুচক্র এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।’’ (বায়হাকী,সহীহ)
আল্লাহ বলেন-
‘‘আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।’’ (আল-কলম-:১০-১১)
একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘‘যে ব্যক্তি কোন মুমিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারন করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবেনা’’ (আবূ দাউদ:৩১২৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুটি বা আধা মুটি পরিমান দানের সমান হবে না।’’ (বুখারী:৩৩৯৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা এবং
সমস্ত মানুষের অভিসাপ।’’ (তাবারানী, সহীহ আল জামে)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জানণাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করাার পর জেনে শুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে। অথবা যে না জেনে শুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।’’ (জামে তিরমিযি:১২৪৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফেক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফেকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খেয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল মন্দ করে।’’ (বুখারী:৩৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘দু’টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য ।
(১) বংশের কুৎসা রটানো।
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।’’ (মুসলিম১০০)
যেমন পূর্বের হাদীসে এ সম্পর্কে পরোপুরি নিষেধ এসেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির উপর যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে।’’ (মুসলিম:৩৬৫৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন কুপ্রথা বা বিদআত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তার পরে যে ব্যক্তি ঐ কুপ্রথার উপর আমল কররবে তার গুনাহ ও তারউপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।’’ (মুসলিম:১৬৯১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহবান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমান গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটু ও কমানো হবে না। ’’ (মুসলিম:৪৮৩১)
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করাতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।’’ (মুসলিম:৩৯৬৬)
তিনি আরো বলেন-
‘‘সে নারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।’’ (বুখারী:৫৪৭৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।’’ (মুসলিম:৪৭৪১)
অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘‘হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।’’ (মুসলিম:৪৮৪২)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘‘এবং মসজিদে হারাম যা আমি করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায় ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আস্বাদান করাবো।’’ (হজ্ব: ২৫)
এ বিষয় যা আলোচিত হল গুলো মারাত্বক কবীরা গুনাহ যা পবিত্র কুরআনর হাদীসের আলোকে উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন এবং বিশেষ করে ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয যাহাবী রহ, আল-কাবায়ের কিতাবে সংকলন করেছেন। আল্লাহ যেন এ সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকতে সাহায্য করেন এবং আমাদেরকে তাওফীক দিবেন, যে সব কাজ তিনি পছন্দ করেন না, এবং সন্তুষ্ট হন না, এসব কাজ থেকে বেচে থাকতে। এবং আমরা ঐ সব গুনাহ যা আমাদের থেকে প্রকাশ পেয়েছে আল্লাহ যেন আমাদের ঐ সকল পাপ ক্ষমা করেন এবং আল্লার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ঐসব লোকদের অর্ন্তভুক্ত না করেন যাদের সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন,
‘‘তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দিরদ্র হল ঐ লোক যে কেয়ামাতের দিন অনেক নামায, রোযা, ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূবেই তরা পুণ্য শেষ হয়ে যাবে,তখন তাদের পাপগুলি তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে কজাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (মুসলিম৭৬৮২)