জানাজার নামাজের আরকান
১. সক্ষম ব্যক্তিদের দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।
২. চার তাকবীর
৩. সূরা ফাতিহা পড়া৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়া।
৫. মাইয়েতের জন্য দুআ করা
৬. সালাম ফেরানো
জানাজার নামাজের সুন্নত
৭. কিরাতের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা।
৮. নিজের জন্য ও মুসলমানদের জন্য দুআ করা।
৯. গোপনে কিরাত পড়া।
১০. কাতার বাড়িয়ে দেয়া। কমপক্ষে তিন কাতার করা।
জানাজার নামাজের পদ্ধতি
জানাযা নামাযের নিয়ত :
শুদ্ধ আরবি জানা না থাকলে জানাযার নামাযসহ যে কোন নামাযের নিয়তই নিজের মাতৃভাষায় করাই উচিত। অর্থ না জেনে অশুদ্ধ আরবিতে নিয়ত করার বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। কেননা নিয়ত তো হল অন্তরের ইচ্ছা ও সংকল্পের নাম। তবু আগ্রহীদের জন্য নিম্নে আরবি নিয়ত উল্লেখ করছি।
نَوَيْتُ اَنْ اُوَدِّيْ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ تَكْبِرَاتٍ صَلْوَةِ الْجَنَازَةِ فِرْضِ الْكِفَايْةِا لثَّنَاءُ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَالصَّلَوةُ عَلٰى النَّبِي وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيْتِ اِقْتَدَيْتُ بِهَذَاالاِمَامِ مُتَوَجِّهًا ا لٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفِةِ اَللهُ اَكْبَر.
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উওয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবা’আ তাকবীরাতিন সালাতিল জানাযাতি ফারদিল কেফাইয়তি আছ্ছানাউ লিল্লাহি ওয়াস সালাতু আলান্নাবীয়্যি ওয়াদ্দু’আউ লিহাযাল মাইয়্যিতি ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি-আল্লাহু আকবার।
নিয়তের অর্থ : (সংক্ষেপে) আল্লাহর জন্য আমি কেবলামুখী হয়ে চার তাকবীরের সাথে এই ইমামের পেছনে জানাযার ফরযে কেফায়া নামায আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
১. ইমাম মাইয়েতের বুক বরাবর দাঁড়াবে, মাইয়েত পুরুষ হোক বা নারী। আর মুকতাদীরা তার পেছনে দাঁড়াবে অন্যান্য নামাজের মতোই। এরপর চার তাকবীর দেবে নিম্নবর্ণিতভাবে:
২. প্রথম তাকবীর তথা তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর সূরা ফাতিহা পড়বে।
৩. দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পড়বে, অন্যান্য নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পর যে দরুদ পড়া হয় সে দরুদ পড়বে।
৪. তৃতীয় তাকবীর দিয়ে মাইয়েতের জন্য, নিজের জন্য ও মুসলমানদের জন্য দুআ করবে। বলবে:
জানাজার নামাজের দোয়াঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا ، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا ، وَأُنْثَانَا وَذَكَرِنَا ، اللَّهُمَّ مَنْ تَوَفَّيْتَ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ ، وَمَنْ أَحْيَيْتَهُ فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلامِ ، اللَّهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ ، وَلا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী – সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাঁদেরকে জীবিত রেখেছেন ইসলামের উপর জীবিত রাখেন আর যাদেরকে মৃত্যু দান করেছেন তাদেরকে ঈমানের সাথেই মৃত্যু দান করেন।
আর যদি মাইয়েত নারী হয়, তাহলে শেষ দুটি বাক্যের সর্বনাম পরিবর্তন করে বলবে :(বর্ণনায় মুসলিম)
اللَّهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أَجْرَها ، وَلا تُضِلَّنَا بَعْدَها
মাইয়েত যদি শিশু হয়, গর্ভপাতজনিত শিশু হয়, তাহলে বলবে,(বর্ণনায় বুখারী)
اللهم اجعله ذخراً لوالديه، وفَرَطاً، وأجراً، وشفيعاً مجاباً
৫. চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য চুপ থাকবে। এরপর ডানে-বামে সালাম দেবে।
মাইয়েতকে বহন করা, মাইয়েতের সাথে যাওয়া এবং দাফন করা
জানাজার নামাজ শেষ হলে সুন্নত হলো মাইয়েতকে বহন করে কবরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া। আর যে ব্যক্তি জানাজার সাথে যাবে তার জন্য মুস্তাহাব হলো জানাজা বহনে শরীক হওয়া। আর যে মাইয়েতকে কবরে প্রবেশ করাবে, তার জন্য সুন্নত হলো بسم الله، وعلى ملة رسول الله বলা। কবরে ডান পাঁজরের উপর কাঁত করে কিবলামুখী করে মাইয়েতকে রাখা। এরপর কাফনের বাঁধ খুলে দেয়া। এরপর লাহদ কবর হলে তাঁর ফাঁক বন্দ করে দেয়া।
যে দাফন কর্মে উপস্থিত হবে, তার জন্য সুন্নত হলো দুই হাতের চুল্লি মাটি দিয়ে ভরে নেয়া এবং তা তিনবার কবরে নিক্ষেপ করা। এরপর মাটি দিয়ে কবর ঢেকে দেয়া। সমতল থেকে কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করে দেয়া। এরপর কবরের ওপর কঙ্কর কিংবা পাথর রাখা। পানির ছিটা দেওয়া। কবরের এক দিকে অথবা উভয় দিকে বড় পাথর রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। যাতে তা কবরের আলামত হিসেবে থেকে যায়|
তাযিয়া
মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে তাযিয়া বা সহমর্মিতা জানানো সুন্নত; কেননা তাদের হৃদয় জুড়ানো, তাদের বিপদ হালকা করা এবং ধৈর্যধারণের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য এটি একটি মাধ্যম।
,لله ما أخذ، وله ما أعطى، وكل شيء عنده بأجل مسمى
(দেয়া-নেয়া আল্লাহর অধিকারভূক্ত। আর আল্লাহর কাছে প্রতিটি বিষয়ই সুনিদিষ্ট সময়ের সাথে বাঁধা।
»(বর্ণনায় বুখারী)
জানাজার কিছু আহকাম
১. যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ পেল না, সে কবরের কাছে দাফনের পূর্বে বা পরে জানাজার নামাজ পড়তে পারবে। যে নারী মসজিদ পরিষ্কার করত সে যখন মারা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরের উপর জানাজার নামাজ পড়েছেন।
২. মাইয়েতের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করা মুস্তাহাব। কেননা তাদের উপর পতিত বিপদই তাদেরকে ব্যস্ত রাখে। বর্ণনায় এসেছে যে, জাফর পরিবারের কেউ মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,«তোমরা আলে জাফরের জন্য খাবার তৈরি করো; কেননা তাদেরকে ব্যস্ত রাখে এমন একটি বিষয় তাদের উপর পতিত হয়েছে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)- মাইয়েতের জন্য কাঁদা যাবে তবে তা হতে হবে আওয়াজ উঁচু না করে, মাইয়েতের প্রশংসকীর্তন না করে এবং বিরক্তিভাব প্রকাশ না করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যান, তখন তিনি বলেছেন,
৩. «নিশ্চয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, অন্তর ভারাক্রান্ত হয়, তবে আল্লাহ যাতে খুশি হবেন না এমন কথা আমরা বলি না। আর হে ইবরাহীম, নিশ্চয় আমরা তোমার বিচ্ছেদে চিন্তাগ্রস্ত।»
(বর্ণনায় বুখারী)
৪. জিহাদের ময়দানে যিনি শহীদ হন তিনি যে পোশাকে শহীদ হন সে পোশাকেই তাকে দাফন করা হবে। তাঁকে গোসল দেয়া হবে না এবং তার জানাজার নামাজও পড়া হবে না। হাদীসে এসেছে, কবর যিয়ারতের সময় যদি কবরবাসীদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ইত্যাদির দুআ করা হয় তবে তা জায়েয হবে।
জানাজায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ
১. কেঁদে কেঁদে মাইয়েতের প্রশংসকীর্তন করা এবং উচ্চস্বরে মাইয়েতের জন্য কান্না করা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ এবং আল্লাহর ফয়সালায় বিরক্তি জাহির করা। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «মাইয়েতের জন্য উঁচু আওয়াজে ক্রন্দনকারী নারী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে গলিত তামার পোশাক পরিহিতা অবস্থায় উঠানো হবে।»(বর্ণনায় মুসলিম)
২. কাপড় ফাড়া, গাল চাপড়ানো, চিল্লানো ও চুল উপড়ানো অথবা চেঁছে ফেলা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যে গাল চাপড়াল অথবা পকেট ফাড়ল, অথবা জাহিলীযুগেীয় কোনো আহবানে ডাকাডাকি করল সে আমাদের দলভুক্ত নয়।» [বর্ণনায় মুসলিম]
১. কবরে বাতি জ্বালানো : ইবনে আব্বাস রাযি.বর্ণনা করে বলেন: «কবর যিয়ারতকারী নারী এবং যারা কবরকে মসজিদে পরিণত করে এবং যারা কবরে বাতি জ্বালায় তাদের সবার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।» (বর্ণনায় তিরমিযী)
২. বরকত হবে ধারণা করে কবরের কোনোকিছু স্পর্শ করা, কবরের চার পাশে তাওয়াফ করা, মাইয়েতের কাছে
জানাজার সাথে নারীদের বের হওয়া
জানাজার সাথে নারীদের বের হওয়া শরীয়তসম্মত নয়; কেননা উম্মে আতিয়া রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, «আমাদেরকে জানাজার সাথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রতি কড়াকড়ি অরোপ করা হয়নি।»(বর্ণনায় তিরমিযী)