তায়াম্মুম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও তায়াম্মুম করার পদ্ধতি।
পবিত্রতা ও তায়াম্মুম সম্পর্কিত প্রচলিত ১০ টি প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্নের উত্তরঃ
ইসলাম যে একটি মানব হিতৈষী ধর্ম তাঁর অন্যতম উধাহরন হল তায়াম্মুমের বিধান। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর বান্দাদের জন্য এ বিধান দেওয়া হয়েছে। তায়াম্মুমের সঠিক ধারনা না থাকার কারনে আমাদের কাছে শরীয়তের বিধাগুলো কঠিন মনে হয়।
তাই আজকে পবিত্রতা ও তায়াম্মুম সম্পর্কিত প্রচলিত ১০ টি প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরলাম।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছে “প্রসিদ্ধ ও বড় বড় ফিকহি বোর্ড”। উত্তরের পাশেই তার নাম উল্লেখ করা রয়েছে।
০১। প্রশ্নঃ তায়াম্মুম করার নিয়ম কি?
উত্তরঃ সহজ উপায় হল- একবার উভয় হাতের তালু জমিনের উপর মেরে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করবে। ঘড়ি, আংটি, চুড়ি ইত্যাদির জায়গায় ভাল করে মাসেহ করবে। পশম পরিমাণ জায়গাও যেন খালী না থাকে। নতুবা তায়াম্মুম হবে না।।
০২। প্রশ্নঃ পানি ব্যবহার করার উপর সক্ষম তথাপিও তায়াম্মুম জায়েজ হয় কতগুলাে আমলের জন্য। সে আমলগুলাে কি কি?
উত্তরঃ এক কথায় যত আমল বা ইবাদত আদায় করার জন্য তাহারাত হাসিল করা পূর্ব শর্ত নয় ঐ সমস্ত আমল বা ইবাদত পানি মজুদ থাকার পরও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়েয আছে।
যেমন-পানি থাকার পরও কুরআনে কারীম শুধু তিলাওয়াত করার জন্য তায়াম্মুম করা।
সালাম দেয়ার জন্য অথবা উত্তর দেয়ার জন্য।
কবর যিয়ারতের জন্য, কুরআন শরীফ তা’লীম দেয়ার জন্য, রােগীর সেবা করার জন্য ইত্যাদি।
অথবা জানাযার নামায ছুটে যাওয়ার ভয় থাকলে তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়েয আছে।
-দুররে মুখতার ১/২১৫-২১৬। ৭৬
০৩। প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি যদি প্রচন্ড শীতের সময় যেখানে গরম পানির ব্যবস্থা নাই, ঠান্ডা পানি দ্বারা অযু কিংবা গােসল করলে রােগ বৃদ্ধি পেয়ে যেতে পারে, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে তাহলে জায়েয হবে কি না?
উত্তরঃ যদি প্রচন্ড শীতের সময় ঠান্ডা পানি দ্বারা অযু বা গােসল করলে মারা যাওয়ার অথবা রােগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা রােগ হওয়ার ভয় থাকে, তাহলে ঐ অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয আছে।
-দুররে মুখতার ১/২১৪। ৭৭।
০৪। প্রশ্নঃ যদি কোন রােগী এমন সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হয় যে ঠান্ডা পানি গরম করে অযু বা গােসল করতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে, তাহলে এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয হবে কি না?
উত্তরঃ নামায কাজা হলেও পানি গরম করে অযু বা গােসল করতে হবে। এ অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয হবে না। যেহেতু পানি গরম করার ব্যবস্থা আছে।
-রদ্দুল মুহতার ১/২১৬
০৫। প্রশ্নঃ কোন কোন গ্রামে পানির খুব সমস্যা থাকে, যার কারণে পর্দানশীন মহিলারা পানির অভাবে নামায কাজা করে ফেলে, শরীয়তে তাদের কি হুকুম হবে?
উত্তরঃ তায়াম্মুম এর হুকুম তাে তখন আসবে, যখন পানি না পাওয়া যায়। সতরাং পর্দানশীন মহিলারা যদি কোন ছুরতেই সময় মত পানি না পায় এবং সময়ও অল্প থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নিতে হবে। পরে পানি পেয়ে গেলে অযু করে নামায দোহরিয়ে নিবে। -ফাতাওয়া দারুল উলূম ঃ ১/২৪৬। ২৯
০৬। প্রশ্নঃ কোন কোন জিনিসের উপর তায়াম্মুম জায়েয আছে?
উত্তরঃ প্রত্যেক ঐ জিনিস দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয আছে যা মাটি জাতীয় হয়। যেমন- মাটি, ধুলা-বালু, পাথর, চুনা, সুরমা ইত্যাদি।
কিন্তু খাদ্য জাতীয় জিনিস গম, রবিশষ্য ফলমুল এবং যাবতীয় প্রকারের ঘাস ইত্যাদি যা আগুনে জ্বলে যায় এগুলাে দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয নেই। তবে যদি এগুলাের উপর ধুলা-বালি থাকে, তাহলে ঐ ধুলা বালির উপর তায়াম্মুম করা জায়েয আছে।
-গুনইয়াতুল মুস্তামলী পৃঃ ৭৪। ৮০।
০৭। প্রশ্নঃ সময় সল্পতার কারণে যে তায়াম্মুম দ্বারা জানাযার নামায পড়ছে সে তায়াম্মুম দ্বারা ওয়াক্তিয়া নামায পড়তে পারবে কি না?
উত্তরঃ ঐ তায়াম্মুম দ্বারা ওয়াক্তিয়া নামায পড়তে পারবে না। অযু করে ওয়াক্তিয়া নামায পড়তে হবে।
-দুররে মুখতার ও ১/২২৩। ৮১।
০৮। প্রশ্নঃ যার উপর গােসল ফরয হয়েছে তার কাছে শুধু এতটুকু পানি আছে যে, শুধু অযু করতে পারবে কিন্তু গােসল করতে পারবে না, তখন সে কি করবে?
উত্তরঃ সে আগে পানি দিয়ে অযু করে ফেলবে। তারপর গােসলের জন্য তায়াম্মুম করতে পারবে। অথবা আগে গােসলের জন্য তায়াম্মুম করে পরে পানি দিয়ে অযু করতে পারবে। উভয় পন্থাই জায়েয আছে।
-ফাতাওয়া দারুল উলূমঃ ১/২৬২। ৮২।
০৯। প্রশ্নঃ যার উপর গােসল ফরয হয়েছে তার কাছে এতটুকু পানি আছে যে শুধু অযু করতে পারবে, অথচ তার শরীরে যে পরিমাণ নাপাক লেগে আছে তা ধুইলে তার অযুর পানি থাকবে না, সে এখন কি করবে?
উত্তরঃ সে ঐ পানিটুকু দিয়ে শরীরের নাপাক ধুয়ে নিবে । অযু এবং গােসলের জন্য তায়াম্মুম করবে।
-ফাতাওয়া আলমগীরী ঃ ১/ ২৮। ২৭
১০। চুনা বিশিষ্ট দেয়ালে যেখানে কোন ধুলা বালি নেই তার উপর তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে কি না?
উত্তরঃ চুনা বিশিষ্ট দেয়ালে তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে।
প্রশ্নের উত্তরগুলো সম্পাদনা করেছেনঃ মাওলানা নোমান আহমদ।